ডাকাতি শিখতে বিশেষ কোর্স, দেওয়া হচ্ছে সার্টিফিকেটও! কোথায় জানেন?

কার্যত "নো ম্যান্স ল্যান্ড" হয়ে থাকা এই গ্রামের একটি অংশ জুড়ে ছোট ছোট হোগলার ঘর তৈরি হয়েছে। প্রতিটি ঘরের মধ্যে দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। এক-একটি ঘরে থাকছে সাত-আটজন যুবক। সেখানেই ডাকাতির ৬ মাসের ডিপ্লোমা কোর্স এবং ৩ মাসের সার্টিফিকেট কোর্স চলছে

ডাকাতির জন্য রীতিমতো ক্রাশকোর্স চলছে। প্রশিক্ষণ নিতে ভিড় জমাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তথেকে আসা দুষ্কৃতীরা। কোর্স শেষে দেওয়া হচ্ছে সার্টিফিকেটও! অর্থাৎ, ডাকাতিতে “শিক্ষিত” হয়ে ময়দানে নামছে ডাকাতের দল। তারপর চলছে লুটপাট। ভাঙছেন তো, গল্পের গরু গাছে উঠেছে! একদমই নয়, বরং গল্প মনে হলেও এটাই সত্যি!

ডাকাতদের ডাকাতির কাজে প্রশিক্ষিত করত এমন ক্রাশকোর্স চলছে বিহারের শোন নদীর ধারে অখ্যাত দিয়ারা গ্রামে। সাধারণত জঙ্গিদের ক্ষেত্রে এভাবে প্রশিক্ষণ শিবির খুলে তালিম চলার বিষয়টি অনেকেরই জানা, তবে ডাকাতির জন্য প্রশিক্ষণ শিবিরের খবর এই প্রথম।

রানিগঞ্জে একটি সোনার দোকানের মালিককে অপহরণের পর ডাকাতির অভিযোগে সম্প্রতি একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাকে জেরা করেই এমন চমকে দেওয়া তথ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। জানা গিয়েছে, বিহারের জনমানবহীন ওই গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। রাতে তো বটেই, দিনের বেলায়ও পুলিশ পর্যন্ত সেদিকে যায় না।

কার্যত “নো ম্যান্স ল্যান্ড” হয়ে থাকা এই গ্রামের একটি অংশ জুড়ে ছোট ছোট হোগলার ঘর তৈরি হয়েছে। প্রতিটি ঘরের মধ্যে দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। এক-একটি ঘরে থাকছে সাত-আটজন যুবক। সেখানেই ডাকাতির ৬ মাসের ডিপ্লোমা কোর্স এবং ৩ মাসের সার্টিফিকেট কোর্স চলছে। মূলত ব্যাঙ্ক, সোনার দোকান, স্বর্ণঋণ প্রদানকারী সংস্থায় নিরাপত্তার বেড়াজাল ভেঙে ডাকাতির কৌশল শেখানো হচ্ছে। কোথায় গুলি করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওই চত্বরের দখল নেওয়া যায়, তাও জানানো হয়। আধুনিক প্রযুক্তি, স্মার্টফোনের সবরকম ব্যবহার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলে তবেই প্রশিক্ষণ শিবিরে ঢোকা যায়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন
হয় প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষা! “ট্রেনি” ডাকাতদের বিভিন্ন অপারেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। কোথাও ভুলত্রুটি হাতেকলমে ধরিয়ে দেওয়ার হয়। আর ট্রেনিং শেষে দেওয়া হয় সার্টিফিকেট। অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরাও নাকি ডাকাতির এই কোর্স করতে আসে।

প্রসঙ্গত, রানিগঞ্জে ডাকাতির অভিযোগে সিআইডি গ্রেপ্তার করে ওয়াসিম উল হক আনসারি ওরফে শ্যামকুমার পান্ডেকে। জেরায় সে জানায়, ডাকাতির জন্য এমনই এক শিবির থেকে সে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ডাকাত হওয়ার আগে সে ছিল একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারও। তার ওই স্বীকারোক্তির সূত্র ধরেই সামনে আসে এই প্রশিক্ষণ শিবিরের কথা।

প্রথমে বিশ্বাস না হলেও তদন্তের শিকড়ে গিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন,পুরো পরিকল্পনাটি জেলবন্দি সুবোধ সিংয়ের। জেলে বসেই সে এই প্রশিক্ষণ শিবির চালাচ্ছে।

সুবোধের ৫-৬ জন বিশ্বস্ত সাগরেদ ট্রেনিংয়ের দায়িত্বে রয়েছে। সোশ্যাল সাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুক্ত হচ্ছে যুবকরা। সময়মতো ডেকে নেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণের জন্য। এক মাসের থিওরি ক্লাস। তারপর প্র্যাকটিক্যাল। থিওরি ক্লাসে চেনানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। ডাকাতির সম্ভাব্য জায়গাগুলি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি শেখানো হয় আগ্নেয়াস্ত্র চালনা। তারপর মহড়া ও সাটির্ফিকেট। সিআইডির দাবি, প্রশিক্ষণ পর্বে ভালো ফলাফল করা যুবকদের নিজের দলে টেনে নেয় সুবোধ।

Previous articleরবিবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারা ম‍্যাচ জিতে কী বললেন বিরাট-হার্দিক?
Next articleবন্ধ কারখানায় সাড়ে ৭ঘণ্টা ধরে দেড় কোটি টাকার সরঞ্জাম লুঠ ডাকাত দলের