ফের আদালতে মুখ পুড়ল সিবিআইয়ের, প্রধান-সহ সিটের একাধিক অফিসার বদল

স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের আদালতে মুখ পুড়ল সিবিআইয়ের। স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ ‘ডি’ নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় ৫৪২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁদের সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। বুধবার বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য জানান, ১৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিস্মিত বিচারপতি বলেন, ১৮ মে থেকে তদন্তে মাত্র ১৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল কেন? দেখা যাচ্ছে, সিবিআই তদন্তে কোনও অগ্রগতিই হয়নি। এরপরই ক্ষুব্ধ বিচারপতি জানান, সিবিআইয়ের সিট পরিবর্তন করতে হবে। ডিআইজির নেতৃত্বে তদন্ত চালাতে হবে।

২৪ ঘণ্টা আগে মঙ্গলবারই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআইয়ের সিট প্রধান রাজীব মিশ্রকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেইমতো বুধবার তিনি এজলাসে হাজির হন। তাঁকে আলাদাভাবে ডেকে বিচারপতি একান্তে কথাও বলেন। পরে তিনি বলেন, সিবিআই তিনজন ডিআইজির নাম দিক। দরকার পড়লে সিট পুনর্গঠন করা হবে। কিছু অফিসারকে সরাতে হবে। এর আগেও তিনি সিটের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে কাজ না করার অভিযোগ এনেছিলেন।

বিচারপতি বলেন, ৬ মাসে ৫ শতাংশ লোককেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারল না সিবিআই। তিনি জানতে চান, সিবিআই রাজ্যের কোনও পুলিশ সুপারের সাহায্য নিয়েছিল কি না এই ব্যাপারে। সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, নোটিশ দেওয়ার ব্যাপারে সুপারদের সাহায্য নিয়েছি। বিচারপতি পাল্টা জানতে চান, বাকি ৫২৬ জনকে জিজ্ঞাসা করতে কতজন সুপারের সাহায্য নিয়েছেন। আইনজীবী বলেন, সেটা সিবিআইয়ের এসপি বলতে পারবেন। বিচারপতি বলেন, আমি চাই, গ্রুপ সি, ডি-সহ এসএসসির বেআইনিভাবে নিযুক্ত সমস্ত প্রার্থীকে দফায় দফায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করুক সিবিআই।

মঙ্গলবারের মতো এদিনও বিচারপতি বলেন, সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি করা ব্যক্তিদের সংখ্যা ও নাম জানাতে হবে সিবিআইকে। আইনজীবী জানান, সমস্ত নথি এসএসসির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যা তারা জানিয়ে দেবে।

বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে সিবিআইয়ের সিট প্রধান রাজীব মিশ্র জানান, গ্রুপ সি, ডি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে ৪০টি করে মোট ১৬০টি ওএমআর শিট সিবিআইয়ের হাতে আছে। বিচারপতি বলেন, এদের সকলে হয়ত চাকরি নাও পেতে পারেন। তবু ওই ওএমআর শিট সিবিআই পরীক্ষা করে দেখুক। আদালতের কড়া পদক্ষেপ এভাবেই শুরু হোক।

শুনানি শেষে আদালত ইমরান আশিক এবং কে সি ঋষিনামাল নামে দুই অফিসারকে সিট থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। নতুন করে অংশমান সাহা, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, প্রদীপ ত্রিপাঠী এবং ওয়াসিম আক্রম খান নামে চারজনকে সিটে নেওয়ার কথা জানান তিনি। সিটের প্রধান করা হয়েছে ডিআইজি অখিলেশ সিংকে। সাতদিনের মধ্যে তাঁকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।

এক নজরে দেখে নিন আদালতের নির্দেশ –

• সিবিআই খুব আস্তে আস্তে কাজ করছে। কেন করছেন সেটা তারাই জানেন। – পর্যবেক্ষণ বিচারপতির।
• গ্রুপ-ডি র ৫৪২ জনের মধ্যে মাত্র ১৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো তথ্য পাওয়া যাবে। – পর্যবেক্ষণ বিচারপতির।
• একটা কারণ হতে পারে যে তাদের লোকবল কম আছে। – পর্যবেক্ষণ বিচারপতির।
• চারজনের নাম জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল।নাম সঙ্গে সঙ্গে জমা দিল সিবিআই।
• অংশুমান সাহা( ডেপুটি সুপার), বিশ্বনাথ চক্রবর্তী(ইন্সপেক্টর), প্রদীপ ত্রিপাঠি(ইন্সপেক্টর), ওয়াসিম আকরাম খান (ইন্সপেক্টর)।এই চারজনকে সিটে যুক্ত করা হলো।।
• কে.সি. রিশিনামোল(ডেপুটি সুপার), ইমরান আশিককে (ইন্সপেক্টর) সিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল। আজ থেকে তারা কোনও কাজ করবেন না। কোনও নথিতে হাত দেবেন না।
• CBI ACB র কলকাতার অফিসে কোন DIG নেই। তাই ভূতপূর্ব DIG অখিলেশ সিংহ SIT র নেতৃত্ব দেবেন। তিনি বর্তমানে যেখানে আছেন সেখান থেকে তাকে এখানে নিয়ে আসতে হবে। তাকে বদলি করা যাবে না। সাত দিনের মধ্যে তাকে এখানে নিয়ে আসতে হবে।
• OMR Sheet এর আশিটি সাদা খাতার কপি মামলাকারীকে দেবে সিবিআই। শুধু গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি।
• দুর্নীতি দমন শাখার প্রধান রাজীব মিশ্র উপস্থিত রয়েছেন।
• সিটের বাকি সদস্যরাও উপস্থিত রয়েছেন।
• গ্রুপ- ডি র নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত ১৮ ই মে, ৫৪২ জন চাকরি প্রাপককে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সিবিআই কে নির্দেশ দিয়েছিলাম এবং তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ? – প্রশ্ন বিচারপতির।
• ১৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমরা বৃহত্তর চক্রান্তের বিষয়টি দেখছি, টাকার উৎস খুঁজছি, কাদের কাছে এই টাকা গেছে সেটা দেখছি। আমরা নথি সংগ্রহ করছি। – উত্তরে জানাল সিবিআই।
• আপনারা ৫ শতাংশকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেননি । কেন ? – প্রশ্ন বিচারপতি।
• ৬ মাস কেটে গেছে, কিছুই করেননি । – মন্তব্য বিচারপতির।
• ৬ মাস কেটে গেছে, এবার তো পরিসংখ্যান জানতে হবে। – মন্তব্য বিচারপতির।
• এই ৫৪২ জনের ঠিকানা , তথ্য জানতে চেয়ে জেলার পুলিশ সুপারদের সাহায্য নিয়েছিলেন ? – প্রশ্ন বিচারপতির।
• আমরা পুলিশ সুপারকে অবগত করেছিলাম। – উত্তরে জানাল সিবিআই।
• সিট কবে গঠন করেছিলাম ? – সিবিআই কে প্রশ্ন বিচারপতির।১৭ই জুন, উত্তরে জানাল সিবিআই।
• তারপরেও ৫ মাস কেটে গিয়েছে। মাত্র ১৬ জন ! – মন্তব্য বিচারপতির।
• তিনজন DIG র নাম দিন। – সিবিআইয়ের কাছে জানতে চাইলেন বিচারপতি।
• একজন DIG কে SIT এ মাথায় বসাব। – মন্তব্য বিচারপতির।


• সিটের পুনর্গঠন করা হবে। চারজন অফিসারের নাম দিন। – সিবিআইকে উদ্দেশ করে মন্তব্য বিচারপতির।
• বর্তমান সিটের কয়েকজন আধিকারিককে বাদ দেওয়া হতে পারে। – জানালেন বিচারপতি।
• এই ৫৪২ জনকে ২১ দিনের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। – এই নির্দেশ দেব। – জানালেন বিচারপতি।
• ৪ এবং ৫ ই নভেম্বর কমিশনকে সব তথ্য এবং নথি দেওয়া হয়েছে। – আদালতে জানাল সিবিআই।
• যারা সাদা খাতা জমা দিয়েছে তাদের তালিকা কমিশনকে দিয়েছেন ? – সিবিআইকে প্রশ্ন বিচারপতিকে।
• আমরা যে হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করেছিলাম তার দুটো ভাগ ছিল, একটা অংশে শুধু omr sheet এর scanned কপি ছিল। আর একটি অংশে excel sheet ছিল। – জানাল সিবিআই।
• আমরা মূল নথি ( mother data) SSC কে দিয়েছি। – জানাল সিবিআই।
• কত সংখ্যায় আসল সাদা খাতা পেয়েছেন ? – প্রশ্ন বিচারপতির।
• আমাদের কাছে স্ক্যানড কপি আছে। নমুনা হিসাবে মোট ১৬০ টা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৮০ জন প্যানেলে ছিলেন, বাকিরা ছিলেন না। – জানাল সিবিআই।
• গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি র নিয়োগের প্যানেল প্রকাশিত হয়েছিল। – স্কুল সার্ভিস কমিশনকে প্রশ্ন বিচারপতির।হ্যাঁ, – উত্তরে জানাল কমিশন।
• স্কুল সার্ভিস কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যানের ওপর আমার আস্থা আছে। তিনি এমন কিছু করবেন না যাতে দুর্নীতি প্রশ্রয় পায়। – মন্তব্য বিচারপতির।
• সিবিআইয়ের দেওয়া নথি থেকে নবম-দশমে ১৫০ জন ভুয়ো চাকরিপ্রার্থীর হদিশ পেয়েছি। – জানাল SSC।
• যারা এখন চাকরি ছাড়েননি তাদের বিরুদ্ধে আদালত কড়া ব্যবস্থা নেবে। – জানালেন বিচারপতি।

আরও পড়ুন- বিরোধীদের পুর-অধিবেশন বয়কট: বিক্ষোভে রাম-বাম যোগ প্রকাশ্যে, তীব্র কটাক্ষ ফিরহাদের

Previous articleজটিল ফাঁসে কর্মশিক্ষক নিয়োগ, ঘুরপথে নিয়োগের চেষ্টার অভিযোগে ফের দায়ের মামলা
Next articleসামনেই ফুটবল বিশ্বকাপ, চ‍্যাম্পিয়ন দলের হাতে কত উঠছে পুরস্কার মূল‍্য? একনজরে দেখে নেওয়া যাক