“অরণ্যদেব ভেবে দল তুলে দেওয়ার হুমকি দিলে রসগোল্লা খাওয়াব না!” কুণালের নিশনায় কে?

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত জটিলতা কাটিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের সদর্থক ভূমিকার কথা তুলে ধরেন কুনাল ঘোষ।

নিয়োগ দুর্নীতি ও মামলা প্রসঙ্গে এবার বিস্ফোরক তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। নিয়োগ নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে তার জট খোলার চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত জটিলতা কাটিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের সদর্থক ভূমিকার কথা তুলে ধরেন কুনাল ঘোষ। তিনি নিজে এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখনই চাকরি প্রার্থীরা দেখা করার কথা বলেছেন, তখনই তাঁদের আর্জিতে সাড়া দিয়েছেন। সমস্যার কথা আন্তরিকতার সঙ্গে শুনেছেন। কিন্তু তারপরও উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে তৃণমূল এবং শাসক দলের নেতাদের নিশানা করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। তার মধ্যে কারও নাম না করে আভাস-ইঙ্গিতে কলকাতা হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চের বিচারব্যবস্থার প্রসঙ্গ তুলে সরব হলেন কুণাল।

এদিন কুণাল ঘোষ বলেন, “দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি আমাদের দলের এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার পূর্ণ আস্থা আছে। বিচারব্যবস্থা ঠিক চলছে বলেই তো সমাজ দাঁড়িয়ে আছে। বিচারপতিরা নির্দেশ দিলে মানুষ মাথা পেতে নেয়। গোটা বিচারব্যবস্থাই ন্যায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ যদি নিজেকে অরণ্যদেব ভেবে নেন, সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কোনও মানুষের ভুল হলে, কোনও মানুষ অন্যায় করলে নিশ্চয় বলবেন। কিন্তু তার জন্য একটা দল তুলে দিতে বলবেন! কেউ যদি বলেন আমার দল তুলে দেবেন, আমি তাঁকে নিশ্চয় রসগোল্লা খাওয়াব না।”

নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে কুণালের আরও সংযোজন, “মুখ্যমন্ত্রীর জট খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাকে বদনাম করতে চাইছেন? আর আপনি হিরো সেজে বলবেন দালাল মুখপাত্র! একটা দল তুলে দিতে বলছেন, এটা হয়? এই ধরনের ব্যক্তিপ্রচার প্রবণতা কেউ মেনে নেবে না। যখনই জট খোলার চেষ্টা হচ্ছে, তখনই আবার মামলা। একজন মঙ্গলগ্রহ থেকে এসে অরণ্যদেব সাজছেন, আর কেউ কিছু করছে না, এটা ভাববেন না। চেয়ারের সুরক্ষাকবচ নিয়ে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা পূরণ করার চেষ্টা করবেন না। বিচারকের চেয়ারে বসে রাজনৈতিক বক্তৃতা করা বন্ধ হোক। অবসরের পর নেতা হওয়ার জায়গা তৈরি রাখা বন্ধ হোক।”

প্রসঙ্গত, নিয়োগ নিয়ে একটি মামলা প্রসঙ্গেই শিক্ষাসচিব মণীশ জৈনকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতচির এজলাসে এসে শিক্ষাসচিব জানান, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি হয় করা হয় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নির্দেশে। এই নিয়ে সওয়াল-জবাবের মধ্যেই একটি সময়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে বলে ওঠেন, “আমি বিস্মিত যে কীভাবে ক্যাবিনেটে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? ক্যাবিনেটকে বলতে হবে যে তাঁরা অযোগ্যদের পাশে নেই। ১৯ মে-এর বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে এমন পদক্ষেপ করব যেটা গোটা দেশে কখনও হয়নি। হয় গণতন্ত্র সঠিক হাতে নেই, না হলে গণতন্ত্র বিকশিত হয়নি। আমি ক্যাবিনেটকে পার্টি করে দেব, সবাইকে এসে উত্তর দিতে হবে। আমি ইলেকশন কমিশনকে বলব তৃণমূল কংগ্রেসের লোগো প্রত্যাহার করার জন্য। দল হিসাবে তাদের মান্যতা প্রত্যাহার করতে বলব নির্বাচন কমিশনকে। সংবিধান নিয়ে যা ইচ্ছে করা যায় না।”

এখানেই শেষ নয়, তাঁর আরও মন্তব্য, “আমি মুখ্যমন্ত্রীর যন্ত্রণা বুঝতে পারি, কিন্তু কিছু দালাল মুখপাত্র বলে পরিচিত। তাঁরা আদালতের নামে যা ইচ্ছে বলছে। তাঁরা বলছে যে, নিয়োগ হলেই আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসছে। আদালত কি এগরোল নাকি যে আসলেই স্থগিতাদেশ পেয়ে যাবে?”

যদিও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় “দালাল মুখপাত্র” বলে তৃণমূলের ঠিক কোন নেতাকে বোঝাতে চেয়েছেন সেটা তিনি স্পষ্ট করেননি। কারণ, তৃণমূলে অনেক মুখপাত্র আছেন। তবে কুণাল ঘোষও এদিন তাঁর মন্তব্যে “অরণ্যদেব গঙ্গোপাধ্যায়” বললেও নাম না করে তাঁর নিশানা ঠিক কোনদিকে সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি।

Previous articleNorth 24 Parganas: নৈহাটিতে বিজেপির পুরসভা অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার !
Next articleসরকারি হাসপাতালে দালালচক্র ভাঙতে কড়া অবস্থান মুখ্যমন্ত্রীর