ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থাকে তলানিতে পৌঁছে দেবার ইঙ্গিত স্পষ্ট

সম্প্রতি জি ২০’র সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’ কথাটা খুব আওড়াচ্ছেন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ এই ভারত ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’ হিসাবে চিহ্নিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এদেশে বাস্তবটা সম্পূর্ণ বিপরীত। গণতন্ত্রের মূল চারটি স্তম্ভের একটি  সংসদ।মাদার অফ ডেমোক্রেসির দেশে সেই সংসদের হাল হকিকত বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে শাসক দলের নেতাদের আওড়ানো বুলি চটকদার বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কিছু নয়।

আরও পড়ুন:জি ২০- এর প্রস্তুতি বৈঠকে বলার সুযোগই পেলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কেন্দ্রীয় সরকারের ৩৯ টি মন্ত্রকের সঙ্গে সংসদের বোঝাপড়া  নিশ্চিত করতে সাংসদদের নিয়ে পরামর্শদাতা কমিটি গঠন করা হয়। যেমন গঠিত হয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কিন্তু ক্রমশ এই সংসদীয় কমিটিগুলিকে গুরুত্বহীন করে দেওয়া হচ্ছে। লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মালা রায় এর এক প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘাওয়াল যে লিখিত জবাব দিয়েছেন তাতে সংসদীয় গণতন্ত্রের বর্তমান করুণ চিত্রটাই ফুটে উঠেছে। নিয়মানুযায়ী প্রতি বছর প্রতিটি মন্ত্রকের সংসদীয় পরামর্শদাতা কমিটির ৬ মিটিং হওয়ার কথা, এর মধ্যে ৪টি মিটিং বাধ্যতামূলক।সাংসদ মালা রায় জানতে চেয়েছিলেন ২০১৯, ‘২০ এবং ‘২১ সালে পরামর্শদাতা কমিটির ক’টি মিটিং হয়েছে ? ২০২০,২০২১ সালে তিনটি কৃষিবিল ও কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক ছিল সংবাদের শিরোনামে। সেই কৃষি মন্ত্রকের সংসদীয় পরামর্শদাতা কমিটির মিটিং হয়েছে ২০১৯-এ ১টি, ২০২০ তে ১টি এবং ২০২১-এ ২ টি। একটি দেশের সরকারের অর্থমন্ত্রক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই অর্থমন্ত্রকের পরামর্শদাতা কমিটির একটিও বৈঠক হয়নি ২০১৯ সালে,২০২০ এবং ২০২১-এ একটি করে বৈঠক হয়েছে। ২০২০,২০২১ সাল গোটা বিশ্ব তোলপাড় হয়েছিল কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে। ভীষণভাবেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রক। ২০১৯ সালে একটি, ২০২০ এবং ২০২১-এ দুটি করে বৈঠক হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সংসদীয় পরামর্শদাতা কমিটির।আলোচ্য তিন বছরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠক হয়েছে মোট পাঁচটি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠক হয়েছে তিন বছরে মোট তিনটি। রেলমন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত কমিটির বৈঠক হয়েছে তিন বছরে মাত্র একটি। ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রক, স্কিল ডেভলপমেন্ট মন্ত্রক, সড়ক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রক, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের সংসদীয় পরামর্শদাতা কমিটির কোনো বৈঠকই হয়নি এই তিনটি বছরে। শিক্ষা মন্ত্রকের একটি মিটিং হয়েছিল ২০১৯-এ।সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের প্রকাশিত তথ্যে ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থাকে তলানিতে পৌঁছে দেবার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

Previous articleবারাসাতে মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক কর্মশালা ও সাংগঠনিক সভা
Next articleবাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের শেষে চালকের আসনে ভারত