ওয়েবসাইটে ভুয়ো বিজ্ঞাপন! বিপাকে ওয়েব ডিজাইনার, মুশকিল আসান কলকাতা পুলিশের

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি অভিযুক্ত ওলঙ্গা বৈদ্য, জুলফিকার লস্কর ও দুধকুমার হালদারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ই কমার্স পোর্টালে (E Commerce) ওয়েব ডিজাইনারের (Web Designer) খোঁজে বিজ্ঞাপন। আর সেই বিজ্ঞাপনের পাতা ফাঁদে পা দিয়েই মর্মান্তিক পরিণতি এক ওয়েব জিজাইন সংস্থার মালিক প্রবীণ ছাজরের। পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি প্রবীণ এক ই কমার্স সাইটে দেখতে পান ওয়েব ডিজাইনারের খোঁজে সেই পোর্টালেই বিজ্ঞাপন দিয়েছে ভাস্কর নামের এক ব্যক্তি। আর সেই বিজ্ঞাপন নজরে আসার পরই নিউ আলিপুরের (New Alipore) বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী প্রবীণ ফোন করেন ভাস্করকে। এরপরই ভাস্কর প্রবীণকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার অন্তর্গত জামতলায় (Jamtala) গিয়ে ম্যানেজার রাকেশের সঙ্গে দেখা করতে বলে। আর সেই কথা শুনে সময় নষ্ট না করে প্রবীণ সহকর্মী দমন সিংকে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছে যান জামতলায়। তবে তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তাঁদের জন্য কী ভয়ঙ্কর বিপদ অপেক্ষা করছে।

প্রবীণ ও তাঁর সহকর্মী দমন জামতলায় পৌঁছে রাকেশের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর সেখান থেকে বাইকে চাপিয়ে দুজনকে নিয়ে যাওয়া হয় শ্যামনগর নামে একটি গ্রামে। তারপরই প্রবীণ ও দমনকে জোর করে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে চার জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের নাম ওলঙ্গা বৈদ্য, মিজানুর লস্কর, দুধকুমার হালদার ও সনাতন বৈরাগী। এরপরই প্রবীণ ও তাঁর সহকর্মী জানতে পারেন ভাস্করের ম্যানেজারের আসল নাম রাকেশ নয়, তার নাম জুলফিকার লস্কর ওরফে সাহেব। এরপরই জুলফিকার প্রবীণের বাবাকে ফোন করে ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর বিপদ এড়াতে শেষমেশ কুলতলি পৌঁছে অপহরণকারীদের হাতে শেষমেশ সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা তুলে দেন প্রবীণের বাবা নির্মল ছাজর। এরপরই ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান ২ বন্দী।

এরপর কলকাতায় ফিরে এসে আর দেরি করেননি প্রবীণের বাবা। তিনি নিউ আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার তদন্তভার হাতে তুলে নেন তদন্তকারী আধিকারিক তথা গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখার সাব ইনস্পেক্টর সুমিত ভট্টাচার্য। বর্তমানে তিনি তারাতলায় কর্মরত। এরপরই তদন্তকারী আধিকারিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে অপহরণচক্রের হদিশ পায় এবং জানা যায় ভাস্কর নামেও রয়েছে বড় গণ্ডগোল। আদপে ওই ব্যক্তির নাম সঞ্জিত পুরকাইত ওরফে বাচ্চা। আর সেই বাচ্চাই ই কমার্স সাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের থেকে মোটা টাকা আদায় করত।

পাশাপাশি ওই অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল মুদসসর নজর ও রাজেশ্বর নস্কর। অভিযুক্তরা সকলেই ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই ধরা পড়ে এবং তাদের থেকে মুক্তিপণ বাবদ মোট সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়। এরপর কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলাকালীন ২১ জন সাক্ষীর বয়ান শোনা হয়। এতদিন সেই মামলা চলছিল। অবশেষে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি অভিযুক্ত ওলঙ্গা বৈদ্য, জুলফিকার লস্কর ও দুধকুমার হালদারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

 

Previous articleবাজেটের পরই উত্তাল সংসদ, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে সরব বিরোধীরা
Next articleবাঙালিদের মাছ খাওয়া নিয়ে বিদ্বে*ষমূলক মন্তব্য, বিপাকে পড়ে কলকাতা হাইকোর্টে পরেশ রাওয়াল