আদানি কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখে কুলুপ, সংসদে ‘আত্মপ্রশংসায়’ মগ্ন মোদি

আদানি কেলেঙ্কারি নিয়ে সরগরম গোটা দেশ। সংসদের ভেতরে ও বাইরে এই ইস্যুতে সরকারের উপর চাপ বাড়াচ্ছে বিরোধীরা। দাবি করা হচ্ছে তদন্তের। বুধবার সংসদে(Parliament) প্রধানমন্ত্রীর(Prime Minister) ভাষণে দেশবাসীর অনুমান ছিল হয়ত এই ইস্যুতে বিরোধীদের জবাব দেবেন তিনি। তবে সসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সযত্নে এই ইস্যু এড়িয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi)। দীর্ঘভাষণের পুরো সময়টা তিনি ব্যয় করলেন বিরোধীদের আক্রমণে ও আত্মপ্রশংসায়। জোর গলায় তিনি বিরোধীদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে দিলেন, “মনে রাখবেন, মোদির ওপরই ভরসা দেশবাসীর, মিথ্যে অভিযোগ করে লাভ নেই।” কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকেও(Rahul Gandhi) কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন মোদি।”

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি প্রতারণা সহ একাধিক অভিযোগ তুলে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ(Hindenburg Report)। এরপর থেকেই হুড়মুড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে আদানি গোষ্ঠীর(Adani group) একের পর এক শেয়ার। এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির তকমা খোওয়াতে হয়েছে ভারতকে। এক ধাক্কায় ৩.২ ট্রিলিয়ন ডলার কমে গিয়েছে ভারতের বাজার মূলধন। বিরোধীদের অভিযোগ আদানির এই ব্যাপক উত্থানের পিছনে হাত রয়েছে খোদ মোদি সরকারের। সংসদে শাসকদলের কাছে এই ইস্যুতে জবাব তলব করা হলেও কোনও উত্তর আসেনি। বুধবার সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে এই ইস্যু সম্পূর্ণ এড়িয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। তবে এদিন ভাষণে আত্মপ্রশংসা ও বিরোধীদের আক্রমণ শানাতে কোনও কসুর করেন মোদি।

নিজের ভাষণে এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোদির উপর ভরসা টিভির পর্দায় বসে আসেনি। খবর ছাপিয়ে হয়নি। দেশের জন্য লড়েছে। দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য নিংড়ে দিয়েছি (নিজেকে)। যে ভরসা দেশবাসীর মোদির উপরে আছে, তা বিরোধীদের চিন্তাভাবনার বাইরে। ১৪০ কোটি মানুষের আশীর্বাদ আমার উপরে রয়েছে। ওটাই আমার সুরক্ষাকবচ।” এরপর কংগ্রেসকে তোপ দেগে মোদি বলেন, “ইউপিএ আমলের ১০ বছর কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত শুধু সন্ত্রাসবাদী হামলা হত। সবাই ভয়ে ভয়ে থাকতেন। জম্মু থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত— হিংসা আর হিংসার ঘটনা। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে দেশে। গণতন্ত্রে সমালোচনা দরকার। কিন্তু তা গঠনমূলক হওয়াই উচিত। কিন্তু এখানে শুধু সেনাকে গালি, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে গালি, আরবিআইকে গালি (দিচ্ছেন বিরোধীরা)।” একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় এজেন্সির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইডিকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। বিরোধীদের এক মঞ্চে এনেছে ওরা। ভোটাররা যা পারেনি, তা করেছে ইডি।”

এরপর কংগ্রেস ও কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে কড়া আক্রমণ শানিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, “লোকসভায় গতকাল কয়েক জনের মন্তব্যের পরে সমগ্র ‘ইকো সিস্টেম’ যেন নড়ে গিয়েছে। এবং তাঁদের সমর্থকেরা উল্লসিত। আমি গতকাল দেখছিলাম। কয়েক জনের বক্তৃতার পর, কিছু লোক খুশি হয়ে বলছেন, ‘ইয়ে হুই না বাত’। হয়তো তারা ভাল ঘুমিয়েছেন এবং (সময়মতো) ঘুম থেকে উঠতে পারেননি।” কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে বলেন, “এখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতে কংগ্রেসের পতনের কারণ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। শুধু হার্ভার্ড নয়, এরপর বিশ্বের সব বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় কংগ্রেসকে নিয়ে পড়াশোনা করবে।” অতীতের জম্মু কাশ্মীরের সঙ্গে বর্তমান উপ্ত্যকার তুলনা করে মোদি বলেন, “আজ জম্মু-কাশ্মীরে লোকতন্ত্রের উৎসব হচ্ছে। প্রত্যেক বাড়িতে তেরঙা পতাকা উড়ছে। কিছু জন বলতেন, তিরঙা উড়লে উপত্যকায় অসুবিধে হবে। সময়ের মজা দেখুন, এখন তাঁরাও সেখানে শামিল হয়েছেন। এখন উপত্যকায় সিনেমা হল হাউসফুল হচ্ছে।” উন্নয়নের খতিয়ান তুলে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “৭০ বছরে দেশে ৭০ বিমানবন্দর ছিল। ৯ বছরে ৭০টি বিমানবন্দর হয়েছে। ইংরেজরা রেল যেমন অবস্থায় ফেলে দিয়ে গিয়েছিল, তেমনই থেকে গিয়েছিল। এখন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মতো ট্রেন চলে এসেছে। ভারত সম্পর্কে আজ বিশ্বে ইতিবাচক মনোভাব, আশা এবং আস্থা তৈরি হয়েছে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। ৯ বছরে ৯০ হাজার স্টার্ট আপ হয়েছে দেশে। স্টার্ট আপে ভারতে এখন তৃতীয়। ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি ছেড়ে দেশ এগোচ্ছে।”

Previous articleজেলা সফরে এবার জঙ্গলমহলে মুখ্যমন্ত্রী, একনজরে সফরসূচি
Next articleবিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে কী জানালেন জিটিএ প্রধান অনীত থাপা