শিক্ষক এইচ*আইভি আক্রা*ন্ত, সন্দেশখালির সৌমিত্রকে অনির্দিষ্টকালের ‘ছুটি’ দিল স্কুল !

২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে এ ঘটনা কার্যত অবাক করে দেয় শিক্ষিত সমাজকে। কোনও একজন এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত বলে তাঁকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটল বারাসাতের একটি স্কুলে। বারাসতে একটি বেসরকারি স্কুলের স্পেশাল এডুকেটর (Special Educator) পদে চাকরি করেন সৌমিত্র গায়েন (Soumitra Gayen) । এখন অবশ্য গোটা বিষয়টাই অতীত, কারণ সংবাদের তাঁর এইচআইভি আক্রা*ন্ত হওয়ার কথা প্রচার হওয়ার পর অঘোষিতভাবে চাকরি হারালেন সৌমিত্র।

রবিবার অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি অগ্নিসাক্ষী রেখে মালা বদল করে সাতপাক ঘোরেন দুই এইচআইভি পজিটিভ পাত্র-পাত্রী। বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করেন মহিলা পুরোহিত। সানাইয়ের সুর রজনীগন্ধার সুবাসে ভেসে এসেছিল রবীন্দ্র সংগীতের ছোঁয়া। অভিনব বিয়ের সাক্ষী হয়েছিল দক্ষিণ 24 পরগনা, গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন দুটি নিষ্পাপ মনের মানুষ। সমাজের সম্মতিতে আর সুস্থ শিক্ষিত মানুষের উৎসাহে সদ্য দাম্পত্যে প্রবেশ করেন এইচআইভি পজিটিভ সুনিতা এবং সৌমিত্র। সমাজের বিদ্বজন থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী প্রত্যেকেই এই বিয়েকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাহলে সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতে, এ কোন অশিক্ষিত সমাজের ছবি ধরা পরল? বিয়ের যাবতীয় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন সুনীতার ‘আনন্দ ঘর’-এর আশ্রমপিতা কল্লোল ঘোষ (Kallol Ghosh) , তিনি ‘এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদ’কে জানান জানিয়েছেন বিয়ের পর সুনিতা তাঁর কাজে যোগ দিয়েছেন। সেখানে আপাতত কোনও সমস্যা না হলেও সৌমিত্র স্কুলে যোগ দিতেই তাঁকে প্রাথমিকভাবে ৯০ দিন কর্মস্থল থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বলা হয় দূরে কোথাও গিয়ে থাকতে। এক কথায় চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় সৌমিত্রকে। কল্লোল ঘোষ জানান যিনি এই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি আবার পেশায় চিকিৎসক। যেখানে সিরিঞ্জ বা যৌন সম্পর্ক ছাড়া কোনভাবেই এইচআইভি ছড়িয়ে পড়তে পারে না বলে চারিদিকে জনসচেতনতা বাড়ান হচ্ছে, সেখানে একজন চিকিৎসক যদি এভাবে ভ্রান্ত ধারণার বশে মেরুকরণ করার চেষ্টা করেন, তাহলে তো সত্যিকারের সচেতনতা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যায়। তিনি বলেন ২০১৭ সালের এইচআইভি বিলে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র এই ভাইরাসে আক্রা*ন্ত বলে কোন কর্মচারীকে তাঁর কাজ থেকে সরানো যাবে না। কিন্তু সৌমিত্রর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটল তার বিচার কই?

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজে গোটা ঘটনার কথা উল্লেখ করে বারাসাত ভিশন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট (Vision Welfare Trust) পরিচালিত স্কুলের সচিবের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন এবং সৌমিত্রকে অবিলম্বে কাজে ফেরানোর দাবি তোলেন। নিজের পোস্টে শেষে #justiceforSunitaSoumitra লেখেন কুণাল।

এই ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা সমাজ। হাজার হাজার তরুণ-তরুণী যাঁরা এইচ*আইভি আক্রান্ত, তাঁরা যদি সকলকে জানিয়ে বিয়ে করেন তারপর তাঁদের সৌমিত্রর মত পরিণতি হলে সেটা কি আদৌ সুস্থ সমাজের ইঙ্গিত দেয়? এই ঘটনা চরম লজ্জার! তাই এর প্রতিবাদে জনমত গড়ে তোলার আবেদন করছেন সুনিতার আশ্রমপিতা কল্লোল ঘোষ।

আরও পড়ুন- মনরেগার টাকার দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ রাজ্যেরও! বেনজির প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর, প্রতিবাদ তৃণমূলের

Previous articleমনরেগার টাকার দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ রাজ্যেরও! বেনজির প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর, প্রতিবাদ তৃণমূলের
Next articleবিজয়নের বক্তৃতার বঙ্গানুবাদে বাদ বাংলার রাজভবনের নিন্দা!