গ্রামোফোনে বাজল রবি কণ্ঠ, ৭৮ আরপিএম-এর নস্টালজিয়ায় রামমোহন লাইব্রেরির সভাগৃহ !

রবি কণ্ঠে গান কবিতা, সঙ্গে স্বর্ণযুগের শিল্পীদের বিলুপ্তপ্রায় গানের রেকর্ডিং। প্রায় ৯০ বছরের প্রাচীন গ্রামাফোন অতীতের শিল্পীদের সুরের ঝংকার পৌঁছে দিল নব রূপায়িত সভাগৃহের প্রতিটি প্রান্তে।

“আমাদের গেছে যে দিন. একেবারেই কি গেছে,. কিছুই কি নেই বাকি” – রবি ঠাকুরের এই প্রশ্নের উত্তর দেবে রামমোহন লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুম (Rammohan Library And Free Reading Room), ঠিকানা ২৬৭, এপিসি রোড, কলকাতা ৭০০০০৯। আসলে ফেলে আসা দিনগুলোকে নতুন করে মনে করতে চাইলেই, অতীত যেন বর্তমান হয়ে দাঁড়ায়। ১১৮ বছরের প্রাচীন গ্রন্থাগার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore), আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখ গুণীজনের অনুষ্ঠানের সাক্ষী থেকেছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং ২২ টি অনুষ্ঠান করেছেন যার মধ্যে বর্ষা মঙ্গল , সংগীতের মুক্তি ইত্যাদি রয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন সেই লাইব্রেরি আজও সুস্থ সংস্কৃতি, মানবমুখী শিক্ষা ও সামাজিক কর্মকাণ্ড প্রসারে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বহুবিশিষ্ট মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তায় সভাগৃহের দ্বারদ্ঘাটন অনুষ্ঠান। সেখানেই শোনা গেল ইতিহাস প্রসিদ্ধ প্রাচীন নস্টালজিয়ার সুর। রবি কণ্ঠে গান কবিতা, সঙ্গে স্বর্ণযুগের শিল্পীদের বিলুপ্তপ্রায় গানের রেকর্ডিং। প্রায় ৯০ বছরের প্রাচীন গ্রামাফোন অতীতের শিল্পীদের সুরের ঝংকার পৌঁছে দিল নব রূপায়িত সভাগৃহের প্রতিটি প্রান্তে।

ডিজিটাল যুগে মুঠোফোনের ব্যবহার এতটাই বেড়েছে, যে এক ক্লিকেই চোখের সামনে বিশ্বের দ্বারপ্রান্ত খুলে যাচ্ছে। রামমোহন লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুমের গ্রন্থাগার সচিব চন্দন কুমার চট্টোপাধ্যায় বলছেন উন্নয়ন, অগ্রগতি এসবের মাঝেও ‘ফিরে দেখা’ ভাবনারাই আজ হাতচালিত গ্রামাফোনের দিকে শ্রোতাদের নজর আকৃষ্ট করেছে।

রামমোহন লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুম (Rammohan Library And Free Reading Room) গত দুবছর ধরে রেকর্ড সংগ্রহ করছে। প্রায় ২০০০ এর কাছাকাছি রেকর্ড পাওয়ার পর শিল্পীদের নাম ধরে ক্যাটালগ তৈরি করে এবার শ্রোতাদের ইচ্ছেমতো তা শোনানোর পালা। সুবিশাল বইয়ের সম্ভারের মাঝে আচমকাই বেজে উঠতে পারে রবি ঠাকুরের নিজস্ব কণ্ঠস্বর, মীরাবাঈ – এর ভজন কিংবা সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের অপরিচিত গান। ভগ্নপ্রায় অবস্থা থেকে নব কলেবরে আত্মপ্রকাশ করছে সভাগৃহ, যেন সেই সূচনার সাক্ষী হচ্ছে ৭৮ আরপিএম-এর গালার রেকর্ড। ১৯৩০ থেকে ১৯৯০ এর লং প্লেয়িং রেকর্ড সযত্নে সাজিয়ে রাখার উদ্যোগ নিচ্ছেন অর্থ সচিব সজল মিত্র।

বসন্তের বিকেলে নব কলেবরে সভাগৃহের দ্বার উদঘাটন করেন রামমোহন লাইব্রেরির ডিরেক্টর জেনারেল অধ্যাপক অজয় প্রতাপ সিং (Ajay Pratap Singh)। তিনি সাধারণ লাইব্রেরির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দিশা আই হাসপাতালের (Disha Eye Hospital) সিএমডি চিকিৎসক দেবাশিস ভট্টাচার্য (এই সভাগৃহকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করতে সাহায্য করেছেন) , অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায় (অ্যাডভাইজার স্পেশাল প্রজেক্ট,টাইড ওয়াটার অয়েল কং) । সভাগৃহকে রঙিন করে তোলার জন্য বার্জার পেইন্টস – সিনিয়র একজিকিউটিভ মলয় সরকারকেও ধন্যবাদ জানান হয় । চিকিৎসক অসিত ভৌমিক (Asit Bhowmik) এই লাইব্রেরির সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্কের কথা তুলে ধরে জানান , রবি ঠাকুরের স্পর্শ ছিল যে মঞ্চে সেখানে দাঁড়ান এক রোমাঞ্চের সাক্ষ্য বহন করে। সভাপতি চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় (Subir Ganguly) শহরের বুকে এই লাইব্রেরিকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলার আহবান জানান। তিনি জানান রামমোহন লাইব্রেরি নামটার মধ্যেই আন্তরিকতা মিশে আছে, আর সেই টানেই শহরের বাইরে থেকেও বহু মানুষ হাজির শুক্রবারের অনুষ্ঠানে। ডিজিটাল যুগে যেভাবে এই লাইব্রেরির প্রতি মানুষের ভালবাসা ধরা পড়েছে, তা আগামীর চলার পাথেয় বলেই জানান উপস্থিত অতিথিরা। যাঁরা রেকর্ড দিয়ে অতীতের নস্টালজিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন সেই রবীন ভট্টাচার্য, সাহানা চট্টোপাধ্যায়দেরও সম্মান জানান হয়।

অনুষ্ঠানে সীতারাম ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের গলায় ‘ বন্দেমাতরম ‘ শোনাল ৯০ বছরের পুরনো ইংল্যান্ডের গ্রামোফোন। এরপর বাজল বিশ্বকবির কণ্ঠে ‘ আমি যখন বাবার মতো হব’। রবীন্দ্রসঙ্গীতের (Rabindra Sangeet) মূর্ছনায় কলের গানের মাধুর্য শুনলেন সভাগৃহে উপস্থিত প্রতিটি দর্শক। অনুষ্ঠান যখন শেষের পথে তখনও গ্রামাফোনের গুনগুন ঘিরে স্মৃতিমেদুর গুঞ্জন ছড়াল সুকিয়া স্ট্রিটের মোড় পর্যন্ত।

 

Previous articleশুভাপ্রসন্নর আমন্ত্রণও রক্ষা করবেন, শিল্পীর বিরুদ্ধে “খালচুরি”র অভিযোগও শুনবেন কুণাল
Next article‘অ্যাপটিটিউড টেস্ট’ ছাড়াই ২০১৬ তে প্রাথমিকে নিয়োগ কেন ?