নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের সময় খুব চর্চিত একটি নাম নারায়ণ ওরফে মধুসূদন মণ্ডল। বেআইনি অস্ত্র মজুত, রাষ্ট্রদোহিতা মামলা থেকে একেবারে বেকসুর খালাস পেলেন “মাওবাদী নারায়ণ”! আজ, মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার বাদিন্দা এই নারায়ণ বা মধুসূদন মণ্ডলের দাবি, সিপিএম জমানার পুলিশ মিথ্যা ও ভুয়ো মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করেছিল তাঁকে। তারপর বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কেঁদেছিল। বিনা বিচারে দীর্ঘ ১০ বছর ৩ মাস ২০দিন জেল খাটতে হয়েছে তাঁকে। অবশেষে সেই মামলা থেকে এবার বেকসুর খালাস পেলেন মধুসূদন মণ্ডল।
নন্দীগ্রাম আন্দোলনে জড়িত তথা মাওবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত মধুসূদন মণ্ডল ওরফে নারায়ণ-এর দাবি, তিনি মাওবাদী নন, আর পাঁচজন আন্দোলনকারীদের মতোই। কিন্তু স্বৈরাচারী সিপিএম আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে তাঁর মতো আরও অনেককে মাওবাদী তকমা দিয়ে রাষ্ট্রদোহিতা মামলায় ফাঁসিয়েছিল। বেকসুর খালাস হওয়ার পর এখন জনতার আদালতে বিচার হোক তাঁর জীবনের মূল্যবান ১০টি বছর অন্ধকার কারাগারে বন্দি থাকার জন্য চক্রান্তকারীদের কী শাস্তি হওয়া উচিত! মধুসূদনবাবুর আরও দাবি, মাওবাদী নয়, তিনি তাঁর মায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত। বন্দুক বা অস্ত্র নয়, তাঁর আন্দোলনের হাতিয়ার গান। কিন্তু সিপিএম তাঁকে মাওবাদী তকমা দিয়ে গ্রেফতার করেছিল। যা প্রমাণ করতে পারেনি, মাঝে থেকে তাঁর জীবনের ১০টি মূল্যবান বছর কেড়ে নিয়েছে। ভগৎ সিং-মাস্টারদা সূর্য সেনের ভক্ত মধুসূদন মণ্ডল জানান, ইংরেজরা ভগৎ সিংকে যে যে ধারা দিয়ে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছিল, সেই একই কায়দায় তাঁকে গ্রেফতার করেছিল সিপিএমের পুলিশ।
তৎকালীন সিপিএম সরকারের পুলিশ ২০১০ সালের ২৭ জুন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থেকে গ্রেফতার করেছিল নারায়ণ ওরফে মধুসূদন মণ্ডলকে। এরপর একাধিক ধারায় মামলা দেয় পুলিশ। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর জামিনে মুক্তি পান মধুসূদনবাবু। দীর্ঘ ১০ বছর ৩ মাস ২০ দিন পর আলিপুরের প্রেসিডেন্সি জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে। বন্দিদশায় থাকাকালীন মায়ের মৃত্যুর জন্য মাত্র চারদিন প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। আর এবার আলিপুর কোর্ট থেকে বেকসুর খালাস পেলেন তিনি। বাম জমানায় তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া মামলা প্রমাণ করতে পারেনি সরকার পক্ষ।
তবে বাম জমানায় দেওয়া এখনও কিছু মামলায় জড়িয়ে রয়েছেন মধুসূদন মণ্ডল। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নিশিকান্ত মণ্ডল ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খুন হন। তৃণমূল নেতৃত্ব সিপিএমের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছিল। যদিও বাম জমানার পুলিশ তদন্তে নেমে তেলুগু দীপক, মধুসূদন মণ্ডল-সহ মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুন, অস্ত্র আইন, ষড়যন্ত্র করা ও তথ্য প্রমাণ লোপাট-সহ একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। দেবলীনা চক্রবর্তী-সহ অভিযুক্ত ৯ জন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। তাঁর মধ্যে এই “মাওবাদী নারায়ণ” ওরফে মধুসূদন মণ্ডলও অন্যতম অভিযুক্ত। এই মামলা হলদিয়া আদালতে বিচারাধীন।