মনীষা কোথায়! প্রশ্ন তুলে বাম জমানার নিয়োগ কেলেঙ্কারি ফাঁস তৃণমূলের

শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা করতে উঠে পড়ে লেগেছে বিরোধীরা। তবে দুর্নীতির শিকড় যে আরো অনেকখানি গভীরে লুকিয়ে রয়েছে, বাম জমানার সেই তথ্য তুলে ধরে এবার তদন্তের দাবি জানালো তৃণমূল। বাম জমানার নিয়োগ দুর্নীতির তিন উদাহরণ তুলে ধরে বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে কুণাল ঘোষ জানালেন, তদন্ত চলুক তবে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে বামেদের সেই সময়টাকেও অন্তর্ভুক্ত করুক ইডি-সিবিআই।

বুধবার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে কিছু মহল থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা ও নেতিবাচক অভিমুখ তৈরি করা হচ্ছে। যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তৃণমূল তা সংশোধন করবে। যদি অন্যায় হয় শাস্তি হবে। কিন্তু তদন্ত তদন্তের পথ ধরে চলুক।” এরপরই বাম আমলের দুর্নীতি ও অপরাধের তিনটি ঘটনা তুলে ধরে তদন্তের দাবী জানান তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।

ঘটনা এক. যোগ্য ব্যক্তিকে টপকে অন্যকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল ১৯৯২ সালে। আর এই দুর্নীতির শিকার হয়েছিলেন ড: আশিস পাল। ১৯৯২ সালে বাম জমানায় কলেজ সার্ভিস কমিশন যোগ্য আশিস পালের চাকরি দিয়ে দেন অন্য কাউকে। ১৯৯৫ সালে আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী। এরপর দীর্ঘ বছর সেই মামলা চলার পর ২০১২ সালে নিজের চাকরি ফেরত পান আশিস।

ঘটনা দুই: নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি তথ্য বিকৃত করা হয়েছিল বামেদের তরফে। ২০০৯ সালে বাম জমানায় দুর্নীতির শিকার হন প্রফেসর সাবেরা খাতুন। যোগ্য সাবেরা খাতুনের চাকরি তৎকালীন কলেজ সার্ভিস কমিশন দিয়ে দেয় অন্য কাউকে। এরপর কলেজ সার্ভিস কমিশনে সাবেরা আরটিআই করলে সেখানেও তাঁকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়। আদালতে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ২০১৪ সালে নিজের চাকরি ফেরত পান সাবেরা।

ঘটনা তিন: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন সহকারি পরীক্ষা নিয়ামক মনীষা মুখোপাধ্যায়। মনীষা মুখোপাধ্যায় ছিলেন এমন একজন যাকে সিপিএমের বিভিন্ন প্রচারে দেখা গিয়েছে। সিপিএমের কোন নেতৃত্বের প্রয়াণে তাঁর বাড়িতে উপস্থিত থেকেছেন তিনি। বহু নেতার সঙ্গে তাঁর সুগভীর সম্পর্ক ছিল। ১৯৯৭ সালে গোলমালের সময় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। তাঁর মা চিনু মুখোপাধ্যায় সিপিএম নেতৃত্ব সঙ্গে মনীষার একাধিক ছবি সহ পুলিশের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু মনীষার কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এই তিন উদাহরণ তুলে ধরে কুণাল ঘোষ বলেন, “সিপিএম এখন সাধু সেজে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা করছে। কিন্তু আসল সত্যটা হলো এই পাপ সিপিএম জমানা থেকে শুরু হয়েছে। তারা ধামাচাপা দিয়ে গেছে। তৃণমূল কোনও অন্যায়কে সমর্থন করছে না। তদন্ত চলুক তদন্তের মতো, স্বচ্ছতার সঙ্গে। তবে সিপিএম নেতাদের বাড়িতেও পুলিশ যাক।” পাশাপাশি কুণাল বলেন, সিবিআই-ইডি যারা তদন্ত করছে আমাদের বক্তব্য এই সময়টাকেও তদন্তের অন্তর্ভুক্ত করা হোক। তদন্ত শুরু হোক ১৯৯২ সালে আশিস পাল দিয়ে। আমরা সকলেই জানি সিপিএমের হোল টাইমার মানে তার বাড়িতে সরকারি চাকরি।” একই সঙ্গে অয়নের প্রসঙ্গ তুলে কুণাল বলেন, বাম জমানায় যারা চাকরি পেয়েছে তারা সকলেই এই ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে অভ্যস্ত। ২০০২ সালে ডাটা এন্ট্রির চাকরি করত অয়ন।” নাম না করে কুণাল ঘোষ আরো বলেন, মনীষার বাড়িতে রাতের অন্ধকারে কোন সিপিএম নেতারা যেতেন? রাজ্যের প্রথম সারির এক সিপিএম নেতার কন্যার নিয়োগ নিয়ে যখন সমস্যা শুরু হল তখন তিনি কার কাছে গিয়েছিলেন? এই তথ্যগুলোও প্রকাশ্যে আসা দরকার। নিয়োগ নিয়ে রাজ‌্য সরকারকে আক্রমণ করে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর (Sujan Chakraborty) এক কটাক্ষের জবাবে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল আরও বলেন, “বামজমানায় সিপিএম নেতাদের পরিবার, পরিজন, আত্মীয়দের মধ্যে কে কতগুলি সরকারি চাকরি ও শিক্ষকের নিয়োগ পেয়েছেন তাঁর তালিকা দিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক আলিমুদ্দিন।”

Previous articleঅস্ট্রেলিয়াকে তৃতীয় একদিনের আন্তর্জাতিকে হারিয়ে সিরিজ জিততে ভারতের দরকার ২৭০ রান
Next articleফের কাঁপল রাজধানী , আত*ঙ্ক বাড়ছে দিল্লিতে !