দুর্নীতি থেকে বঞ্চনা: কড়া আ.ক্রমণ তৃণমূলের! বিজেপির ‘বাড়বাড়ন্তে’ মোদি-শাহের জবাব তলব

বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক।

দোরগোড়ায় রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election)। আর সেই নির্বাচনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা না হলেও রাজনৈতিক উত্তাপ চড়ছে। আর এমন আবহেই বাংলায় আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। বীরভূম সফরে আসছেন শাহ। আগামী ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ শুক্রবার বীরভূমের সিউড়িতে আসবেন শাহ। সিউড়িতে বেণীমাধব স্কুলের মাঠে একটি জনসভা করার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। আর অমিত শাহের সফরের আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কটাক্ষ করল তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) এবং রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmik)। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একাধিক প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়। যেখানে রয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যু, বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিষয়টিও যেমন গুরুত্ব পেয়েছে ঠিক তেমনই বাংলার নানা উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় নজরদারির ‘বাড়াবাড়ি’ ও কয়লা ব্যবসায়ী রাজু ঝায়ের খুনে বিজেপি যোগ নিয়েও তোলা হয়েছে বিস্তর প্রশ্ন।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মহুয়া, পার্থরা প্রশ্ন তোলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে, বাংলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের জন্য কোনও তহবিল মঞ্জুর করেনি কেন্দ্র। এখনও পর্যন্ত, ৭ হাজার কোটি টাকার বকেয়া রয়েছে বাংলার। পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল এখনও আসেনি। এর ফলে গত এক বছরে বেজায় সমস্যায় পড়েছে কমপক্ষে ১৭ লক্ষ পরিবার। পাশাপাশি উঠে আসে বাংলা আবাস যোজনা (Awas Yojna) প্রসঙ্গও। ওই খাতে কেন্দ্রের থেকে প্রাপ্য ৮,২০০ কোটি টাকা এখনও বাংলা পায়নি বলে তৃণমূলের অভিযোগ। সব মিলিয়ে কেন্দ্র বাংলার প্রাপ্য ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ।

পাশাপাশি এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মহুয়া মৈত্র প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, বাংলার নানা উন্নয়ন প্রকল্পে কেন বেশি মাত্রায় নাক গলাচ্ছে কেন্দ্র। গত দু’বছরে ১৫১টি কেন্দ্রীয় দলকে বাংলায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৭১টি দল ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-র কাজ খতিয়ে দেখতে এসেছিল। কেন আমরা শুধু বাংলার ক্ষেত্রেই এত বেশি নজরদারি দেখি? বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যে কি কোনও অনিয়ম হচ্ছে না? মোদি, শাহের উদ্দেশে প্রশ্ন তোলে তৃণমূল। উঠে আসে দুর্নীতি প্রসঙ্গও। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি মুখেই দুর্নীতি মোকাবিলার কথা বললেও বিজেপি কেন তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়নি? এই প্রসঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম প্রকাশ্যে এনে তৃণমূলের অভিযোগ, ২০২২ সালের নভেম্বরে মাসে সিবিআই আধিকারিকরা এএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রসন্ন রায়ের বাড়ি থেকে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের একটি নথি উদ্ধার করেছিলেন। দিলীপও প্রসন্নের সঙ্গে পরিচয়ের কথা স্বীকার করেছিলেন। তা হলে এতদিন পেরিয়ে গেলেও কেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি এই বিষয়ে তদন্ত করছে না?

অন্যদিকে, সম্প্রতি খুন হওয়া কয়লা ব্যবসায়ী রাজু ঝায়ের (Raju Jha) সঙ্গে বিজেপির ঠিক কী সম্পর্ক তা মোদি-শাহদের থেকে জানতে চাইল তৃণমূল। গত বছরের নভেম্বর মাসের কথা মনে করিয়ে দিয়ে, কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী (Pralhad Joshi) যখন দু’দিনের সফরে বাংলায় এসেছিলেন, তখন তিনি রাজুর হোটেলে ছিলেন! এলাকায় অন্যান্য হোটেল এবং ইসিএল-এর গেস্ট হাউস থাকা সত্ত্বেও কেন কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী রাজুর হোটেলে বেছে নিলেন তা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তুলল তৃণমূল। পাশাপাশি গুজরাটের বিলকিস বানো (Bilkis Bano) গণধর্ষণ মামলার দোষীদের মুক্তি বা হাওড়ার হিংসায় (Howrah) জড়িত বিহার থেকে ধৃত সুমিত সাউয়ের বিষয়েও উঠে আসে প্রশ্ন। তবে এদিন মহুয়া মনে করিয়ে দেন, উত্তরপ্রদেশ সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ বাড়লেও কলকাতা এখনও মহিলাদের কাছে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ শহর।

 

 

Previous articleবৈশাখের শুরুতেই বইমেলা ! বইপ্রেমী বাঙালিকে গিল্ডের উপহার
Next articleএবার কাতার বিশ্বকাপে খেলা অজি স্ট্রাইকার মোহনবাগানে!