প্রসঙ্গ-শুভেন্দু, আবু তাহের ও দুর্ঘটনা: পার্থক্য শিরদাঁড়ায়-মানবিকতায়

ঘটনার ৬ মাস অতিক্রান্ত। ফের এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এবার ঘটনাস্থল পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর। রাত আনুমানিক সাড়ে দশটা নাগাদ দিঘা-নন্দকুমার হাইওয়ের উপর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বেপরোয়া কনভয় পিষে দিয়ে চলে যায় বছর ৩৩-এর এক তরতাজা যুবককে

সোমনাথ বিশ্বাস

মাঝে ব্যবধান মাত্র ৬ মাসের। দুটি পথ দুর্ঘটনা। মৃত্যু। দুটি ঘাতক গাড়ির সঙ্গে দু’জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রতিনিধির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক। দু’জনের গাড়ির চালক-ই অনিচ্ছাকৃত খুনের দায়ে গ্রেফতার। একজন তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের, আরেক জন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দুটি ঘটনায় সাদৃশ্য যদি থাকে, তাহলে পার্থক্যও আছে। পার্থক্য শিরদাঁড়া ও মানবিকতার।

গতবছর নভেম্বরের মাখামাঝি। একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছিল রাজ্যবাসী। জরুরি কর্মসূচিতে বাড়ি থেকে বহরমপুর যাচ্ছিলেন মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খান। রাস্তাতেই তাঁর গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল বছর সাতেকের এক শিশুর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাচ্চাটি ছুটে রাস্তা পার হওয়ার সময় সাংসদের গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে। গাড়ি চালকের কিছু করার ছিল না। শিশুটি আচমকা রাস্তার উপর গাড়ির সামনে চলে এসেছিল।

জোরে ব্রেক কষেন সাংসদের গাড়ির চালক। তার পরেও দুর্ঘটনা এড়ানো যায়নি। শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়তে দেখে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল মুর্শিদাবাদের নওদায়। রাস্তা আটকে সাময়িক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে উত্তেজিত জনতা। পালিয়ে যাননি তৃণমূল সাংসদ। জীবনের থেকে বড় কিছু হতে পারে না। সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করে সেই উত্তেজনার মধ্যেই গাড়ি থেকে নেমে নিজে জখম শিশুটিকে উদ্ধার করে ও তাঁর মাকে তুলে নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। শিশুটির চিকিৎসার সময় তিনি নিজেও হাসপাতালে দাঁড়িয়ে ছিলেন। চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেও শেষরক্ষা হয়নি। শিশুটিকে ফিরিয়ে দিতে না পারলেও মানবিক আবু তাহের শিশুটির পরিবারের সবরকম ভাবে দাঁড়িয়েছেন।

ঘটনার ৬ মাস অতিক্রান্ত। ফের এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এবার ঘটনাস্থল পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর। রাত আনুমানিক সাড়ে দশটা নাগাদ দিঘা-নন্দকুমার হাইওয়ের উপর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বেপরোয়া কনভয় পিষে দিয়ে চলে যায় বছর ৩৩-এর এক তরতাজা যুবককে। ফিরেও তাকাননি শুভেন্দু। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, শুভেন্দুর লোকজন উল্টে ঘটনা যাতে চাউর না হয় সেই চেষ্টা করেছিল। স্থানীয়দের বলা হয়েছিল যেন জানাজানি না হয়। পরে স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে গেলে যুবকের মৃত্যু হয়।

অথচ, শুভেন্দু চাইলেই কনভয়ের যে কোনও একটি গাড়িতে তুলে দ্রুত হাসপাতালে নিয় গিয়ে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয় তো বা বাঁচানো যেত যুবককে। কিন্তু একঝাঁক কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান বেষ্টিত হয়ে পালিয়ে যান শুভেন্দু। বিতর্ক এড়াতে কাঁথির শান্তিকুঞ্জে নিজেকে গৃহবন্দি রাখেন। যেমন আসানসোলে কম্বলকাণ্ডে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় জনরোষ থেকে বাঁচতে পালিয়েছিলেন।

সবশেষে তাই বলতেই হচ্ছে শুভেন্দুবাবু, পার্থক্য ছিল-আছে-থাকবে। পার্থক্য মানবিকতায়, পার্থক্য শিরদাঁড়ায়। মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো বা খোঁজ খবর নেওয়ার মতো মানবিক হৃদয় আপনার নেই। কোনওদিন ছিলই না। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতেই রাজনীতিতে হাত পাকিয়েছেন আপনি। আবার সেই আপনি মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করতে সিদ্ধহস্ত। আপনার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। রাজনীতি করুন, বুক ফুলিয়ে করুন। একটু মানবিক হয়ে শিরদাঁড়া বন্ধক না রেখে রাজনীতি করুন।

আরও পড়ুন- ছকভেঙে চমক আইআইটি স্নাতকের, দুধ বিক্রি করেই দিনে আয় ১৭ লক্ষ টাকা!

 

Previous articleছকভেঙে চমক আইআইটি স্নাতকের, দুধ বিক্রি করেই দিনে আয় ১৭ লক্ষ টাকা!
Next articleট্রেনে ফেরার পথে রামপুরহাট স্টেশনে আবেগপ্রবণ মমতা, সাঁইথিয়ায় জনসংযোগ