বলেন কী অমিত শাহ! রবীন্দ্রভাবনায় কেন্দ্রের শিক্ষানীতি?

অমিত শাহর বচন: রবীন্দ্রনাথের ভাবনা অনুসরণ করে জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি হয়েছে

অর্পিতা চৌধুরী

“কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে সমুদ্রে হল হারা।
হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড়, চীন–
শক-হুন দল-পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) ভারততীর্থ কবিতা অমিত শাহ (Amit Shah) পড়েছেন কিনা জানা নেই। আর পড়লেও তিনি বা তাঁর দল এই ভাবনার মর্মোদ্ধার করতে আগ্রহী বলে মনে হয় না। সেই কারণেই রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তীতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণ বিস্ময় উদ্রেক করে। বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অমিত শাহর বচন: রবীন্দ্রনাথের ভাবনা অনুসরণ করে জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি হয়েছে। তাই নাকি? রবীন্দ্রভাবনা অনুসরণ করলে কীভাবে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ যায় মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস? অথবা গুজরাত দাঙ্গা, গান্ধীহত্যায় সঙ্ঘ অনুগামীদের ভূমিকার মত ঐতিহাসিক সত্য এবং বিবর্তনবাদের মতো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা? রবীন্দ্রনাথের সমন্বয়ের ভাবনা বুঝতে কারুর কারুর অসুবিধা হতে পারে, কিন্তু বিশ্বকবির নাম করে মিথ্যাচার বা নিজেদের অপকীর্তি ঢাকতে প্রয়োজনমত মনীষীদের ঢাল বানানো; এই প্রবণতা ভয়ঙ্কর।

নির্বাচনী সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে বহুক্ষেত্রে রাজনীতিকদের অসত্য ভাষণের রেওয়াজ এদেশে আছে। ভোটদাতাদের সমর্থন পেতে কীভাবে জুমলাবাজি হয় তা অতীতে এই অমিত শাহই ফাঁস করেছিলেন। ২০১৪ সালে সব ভারতীয়র অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা ফেরানোর গপ্পো আক্ষরিক অর্থে নিয়ে যাঁরা বোকা বনেছিলেন, তাঁদের ভুল ভেঙে দিয়েছিলেন শাহই। বিহারে ভোটপ্রচারে গিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি কিছুটা লঘুস্বরেই বলেন, ওইরকম প্রতিশ্রুতি ছিল নেহাতই কথার কথা, জুমলা! ভোটের সময় এরকম বলতে হয়। অকপট এই স্বীকারোক্তির জন্য বিজেপি নেতার প্রশংসাই প্রাপ্য। কিন্তু কোনও ভোট আসছে দেখলেই নানা ছুতোয় মনীষীদের নাম টেনে আনা, তাঁদের কথা বলে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা সাজানো, এসব অপকৌশল ধরতে না পারলে আমজনতারই বিপদ। জাতীয় শিক্ষানীতির বিষয়ে শিক্ষক মহলে যে প্রতিবাদ-ক্ষোভ- বিক্ষোভ চলছে তা পাশ কাটিয়ে রাজনীতিকরা যদি মনীষীদের নাম করে যেমন ইচ্ছে ব্যাখ্যা দেন, তা মূল্যহীন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সারা জীবন বিবিধের মাঝে মিলনের বার্তা দিয়েছেন। আর বিভাজনবাদী রাজনৈতিক দলের নেতা অমিত শাহ সেই রবীন্দ্রনাথকে টেনে এনে বঙ্গবাসীকে ভুল বোঝাতে চাইছেন। সামনে পঞ্চায়েত ভোট, পরের বছর লোকসভা, ফলে বাংলায় এসে অমিত শাহদের রবীন্দ্রনাথকে মনে পড়েছে। মোগল সাম্রাজ্যকে ইতিহাস থেকে বাদ দিয়ে যে রাজনৈতিক দল হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় ইতিহাসের নয়া অভিমুখ রচনা করতে চায়, তাঁরা রবীন্দ্রনাথের কথা যত কম বলেন ততই ভাল। অতীতে মহাত্মা গান্ধীকে ‘বেনিয়া’ বলেছিলেন অমিত শাহ, রবীন্দ্রনাথের সমন্বয়বাদী উদারতা হজম করা রাজনৈতিকভাবেই ওঁর পক্ষে সম্ভব নয়। অবশ্য বাংলার মানুষও তেমন প্রত্যাশা করে না।

 

Previous articleদীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে শরাফ হাউসের আ.গুন, ঘটনাস্থলে যান রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী
Next articleমহারাষ্ট্রে NEET পরীক্ষায় উলটো পোশাক পরার নির্দেশ, অ.স্বস্তিতে ছাত্রীরা!