জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষাতেই বাজিমাত! কী প্রতিক্রিয়া মেধাতালিকায় শীর্ষে থাকা পড়ুয়াদের?

জেলাগুলির মধ্যে পাশের হারে প্রথমে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। সেখানে পাশের হার ৯৬.৮১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কালিম্পং, সেখানে পাশের হার ৯৪.১৩ শতাংশ। এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা, সেখানে পাশের হার ৯৩.৭৫ শতাংশ।

‘আমি এতটাও ভাবতে পারিনি। আশা করেছিলাম মোটামুটি ৬৮০ থেকে ৬৯০-এর মধ্যে কিছু একটা হবে।’ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (Madhyamik Exam) প্রথম হওয়ার পর এমনটাই প্রতিক্রিয়া কাটোয়ার দেবদত্তা মাজির (Debdutta Majhi)। মোট ৭০০ নম্বরের মধ্যে ৬৯৭ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকের মেধাতালিকার শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া দুর্গাদাসী গার্লস হাইস্কুলের এই ছাত্রী। মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় শীর্ষ স্থানে উঠে আসার পর আনন্দ, আবেগ, উচ্ছ্বাস দেবদত্তার চোখে মুখে।

দেবদত্তা আরও জানায়, মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষাতেও ৬৯০ নম্বর পেয়েছিল দেবদত্তা। কিন্তু টেস্ট পরীক্ষায় (Test) প্রাপ্ত নম্বরকেও আসল পরীক্ষায় ছাপিয়ে গিয়ে মাধ্যমিকে ৭০০-র মধ্যে ৬৯৭ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করায় আবেগাপ্লুত দেবদত্তা। স্বাভাবিকভাবেই মেধাতালিকায় (Merit List) প্রথম স্থানে উঠে আসার পর অত্যন্ত খুশি দেবদত্তা। তবে নিজের এমন সাফল্যের পর নিজের মাকেই পুরো কৃতিত্ব দিচ্ছে দেবদত্তা। সে পরিষ্কার জানিয়েছে, আমার মা সবসময় আমাকে গাইড (Guide) করেছেন। আমার এই কৃতিত্বের পিছনে মায়ের অবদান অনেক। পাশাপাশি ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার (Engineering) হতে চায় দেবদত্তা। আর সেই লক্ষ্যেই এখন থেকে জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু করেছে মাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারী দেবদত্তা। তবে বরাবরই মেধাবী ছাত্রী হিসেবেই এলাকায় পরিচিত দেবদত্তা।

দেবদত্তা জানায়, এতটাও যে ভাল রেজাল্ট হবে তা কল্পনা করতে পারিনি। তবে আশা করেছিলাম, ৬৮০ থেকে ৬৯০-এর মধ্যে কিছু একটা নম্বর পাব। স্বাভাবিকভাবেই এই আশাতীত ফল হওয়ায় উচ্ছ্বসিত দেবদত্তা। তাঁকে নিয়ে গর্বিত দেবদত্তার পরিবারের লোকেরাও।

এদিকে মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় প্রথম দশ জনের মধ্যে উঠে এসেছেন ১৬ জেলার মোট ১১৮ জন পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় হয়েছে দুজন। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের ছাত্র শুভম পালের (Subham Paul) প্রাপ্ত নম্বর ৬৯১। শতাংশের বিচারে সে পেয়েছে ৯৮.৭১ শতাংশ। যুগ্মভাবে দ্বিতীয় হওয়া অপরজন মালদহের রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের পড়ুয়া রিফাত হাসান সরকার (Rifat Hasan Sarkar)। সেও একই নম্বর পেয়েছে। তবে নিজের এই সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব তার মাকেই দিচ্ছে শুভম। এদিন ফলাফল ঘোষণার পর শুভম জানায়, প্রথমেই আমি মায়ের কথা বলব। আমাকে পড়াশোনায় সাহায্য করার কথা বলতে গেলে, প্রথমেই আমার মায়ের নাম বলতে হয়। অবশ্যই স্কুলের স্যাররাও প্রতিমুহূর্তে আমাকে সাহায্য করেছেন। তবে খেলাধুলা সেভাবে পছন্দ না হলেও, পড়াশোনার বাইরে গল্পের বই পড়তে বেশ পছন্দ করে শুভম। এছাড়া অবসর সময়ে গান শুনতেও ভালবাসে সে। আগামী দিনে ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা রয়েছে শুভমের। শুভম আরও জানিয়েছে, সমাজে এমন বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা অর্থের অভাবে, সাহায্যের অভাবে উপযুক্ত চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেকরকম অসুবিধা হয়। সমাজের পিছিয়ে পড়া সেই সব মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করার অঙ্গীকার শুভমের। পাশাপাশি যারা ভবিষ্যতে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে, তাদের জন্য শুভমের পরামর্শ, পরীক্ষার্থীরা যেন পাঠ্যবই একেবারে খুঁটিয়ে পড়েন। তাঁর মতে, এটাই হল সাফল্যের মূল মন্ত্র। পাশাপাশি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে মালদহের রিফাত হাসান সরকারও। রিফাতের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯১। শতাংশের বিচারে তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৮.৭১ শতাংশ। মালদহের রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের পড়ুয়া রিফাত। রিফাতের বাবা লিয়াকত আলি ও মা মারজানা আখতার দুজনেই স্কুল শিক্ষক।  ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায় সে। তবে বর্তমানে শিলিগুড়িতে আছে রিফাত। শিলিগুড়িতে একটি বেসরকারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করছে সে। আর তার এমন সাফল্যে খুশি পরিবারের লোকজন থেকে শুরু করে স্থানীয়রাও।

অন্যদিকে, ৬ জন মেধাতালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সকলের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯০। টাকি রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র অর্ক মণ্ডল, বেড়াচাঁপা হাইস্কুলের ছাত্র সৌম্যদীপ মণ্ডল। এছাড়াও মালদহের রামকৃষ্ণ মিশন থেকে চারজন তৃতীয় হয়েছে। তারা হল, স্বরাজ পাল, অর্ঘ্যদীপ সাহা, মাহির হাসান ও মহম্মদ ইমতিয়াজ। টাকি রামকৃষ্ণ মিশনের অর্ক মণ্ডল৷ বসিরহাট ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাইপালার বাসিন্দা অর্কর প্রাপ্ত নম্বর ৬৯০৷ ভবিষ্যতে অর্ক ডাক্তার হতে চায়। অর্কর বাবা ব্যবসায়ী।

উল্লেখ্য, চলতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamik Exam) দিয়েছিল ৬ লাখ ৮২ হাজার ৩২১ জন। তাদের মধ্যে পাশ করেছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৪২৮ জন। তফসিলি জাতির পড়ুয়াদের পাশের হার ৮২.৮৮ শতাংশ এবং তফসিলি উপজাতির পড়ুয়াদের পাশের হার ৭৬.০৩ শতাংশ। জেলাগুলির মধ্যে পাশের হারে প্রথমে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। সেখানে পাশের হার ৯৬.৮১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কালিম্পং, সেখানে পাশের হার ৯৪.১৩ শতাংশ। এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা, সেখানে পাশের হার ৯৩.৭৫ শতাংশ। মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় প্রথম দশের মধ্যে ১৬টি জেলা থেকে রয়েছে ১১৮ জন। তবে মেধাতালিকার প্রথম থেকে দশম স্থানাধিকারীর মধ্যে কলকাতার কেউ নেই।

 

 

Previous articleপ্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বাতিলে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ ডিভিশন বেঞ্চের
Next articleপদ্ম পালে হাওয়া লাগাতেই ভুল তথ্যে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’! ফাঁ.স করলেন প্রযোজকের আইনজীবী