সারদাকর্তার চিঠি দেখিয়ে বি.স্ফোরক কুণাল, ইডিকে শুভেন্দুর “দুর্নীতির ঠিকানা” দিয়ে গ্রেফতারের দাবি

কুণাল ঘোষ গত ১১মে আদালতকে দেওয়া সুদীপ্ত সেনের তৃতীয় চিঠির সার্টিফায়েড কপি সামনে আনেন। ইডিকে শুভেন্দুর দুর্নীতির ঠিকানা দিয়ে গ্রেফতারের দাবিও করলেন তিনি।

নিজাম প্যালেসে যখন সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ঠিক তখনই সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের চিঠি তুলে ধরে শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতারের দাবি জানালেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কার্যত বিস্ফোরক কুণাল ঘোষ, ইডিকে শুভেন্দুর দুর্নীতির ঠিকানা দিয়ে গ্রেফতারের দাবিও করলেন তিনি। এই মামলায় ইডি চাইলে তিনি সমস্তরকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন বলেও জানান।

এদিন কুণাল ঘোষ গত ১১মে আদালতকে দেওয়া সুদীপ্ত সেনের চিঠির সার্টিফায়েড কপি সামনে আনেন। যা তাঁর আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী গতকাল, শুক্রবার আদালত থেকে তুলেছেন। কুণাল বলেন, “জনৈক একটি মামলায় জনৈক এক বন্দি কুন্তল ঘোষ কী বলেছে, তার উপর ভিত্তি করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকেছে সিবিআই। একেবারে তরিঘড়ি তলব। খুব তাড়া ছিল? ২৪ ঘন্টার কম নোটিশে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। দীর্ঘ ২৫দিন বাড়ির বাইরে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত অভিষেক কলকাতায় ফিরে এসে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছে।”

এরপরই আদালতকে দেওয়া সারদাকর্তার চিঠি তুলে ধরে কুণাল অভিযোগের সুরে বলেন, “জেল থেকে দেওয়া আদালতকে চিঠি। তাতেই তৎপরতা। কুন্তলের চিঠিতে কোনও অভিযোগ ছিল না। শুধুমাত্র কথার জাগলারিতে জড়িয়ে মামলা হয়েছে। তাহলে সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দেওয়া চিঠিতে কেন শুভেন্দু অধিকারীকে ডাকা হবে না?” চিঠি দেখিয়ে তাঁর আরও সংযোজন, “এটা সুদীপ্ত সেনের তৃতীয় চিঠি। এই কয়েকদিন আগে গত ১১মে তিনি সম্পূর্ণ আইনমাফিক সংশ্লিষ্ট আদালতকে দিয়েছেন। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কেস রেকর্ডে সুদীপ সেনের চিঠি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আদালতের নিয়ম মেনে পিজিনার্স পিটিশনে বৈধ পদ্ধতিতে আদালতকে পাঠানো সুদীপ্ত সেনের চিঠি। আমার আইনজীবী নিয়ম মেনে তার সার্টিফায়েড কপি তুলেছে। যে কেউ নিয়ম মেনে এই সার্টিফায়েড কপি তুলতে পারেন।”

কুণাল ঘোষ দাবি করেন সুদীপ্ত সেন চিঠিতে লিখেছেন, তিনি একের পর অভিযোগ করে গেলেও কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? সেই সময় কখনও ড্রাফটে, কখনও নগদে তাঁর কাছ থেকে যারা টাকা তুললো, কাঁথি পুরসভার প্ল্যান সাংসনের জন্য। ৫০ লক্ষ টাকা সারদার থেকে ড্রাফটে ঢুকেছে কাঁথি পুরসভায়। এরপর নগদে ধাপে ধাপে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে শুভেন্দু অধিকারী, তাঁর ভাই সৌমেন্দু এবং সহযোগীরা।

শুভেন্দু ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের দাবি তুলে কুণাল বলেন, “লোকের বাড়ি বাড়ি ঘুরছে ইডি। কাঁথি পুরসভার সেই টাকা কেন উদ্ধার করেছে না। সমস্ত অবৈধ টাকা উদ্ধার হোক। শুভেন্দু-সৌমেন্দুর মাধ্যমে কাঁথি পুরসভায় সরদার টাকা ঢুকেছে। সেটা উদ্ধার হলেই স্পষ্ট হবে বাকি চিঠিগুলি ঠিক। তাই শুভেন্দু-সৌমেন্দুকে গ্রেফতার করতে হবে। এই মামলার অন্যতম অংশীদার হিসেবে, সাধারণ নাগরিক হিসেবে, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করছি গ্রেফতারির। পরের সপ্তাহে কাঁথি পুরসভার যাবো। এই দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে। ইডিকে ডেপুটেশনে দেবো।
যদি সিবিআই-ইডি তদন্ত না করে, তাহলে তো দুর্নীতি ফেলে রাখা যাবে না। পুলিশ সুপারকে জানাবো। যাঁরা অন্যায়ভাবে কাঁথি পুরসভায় সুদীপ্ত সেনকে নিয়ে গিয়ে ভুল বুঝিয়ে, ভয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে, তাদের গ্রেফতার করুক ইডি।”

কুণালের সংযোজন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আইনকে সম্মান করে শিরদাঁড়া সোজা রেখে এর আগেও ঘন্টার পর ঘন্টা জেরায় হাজিরা দিয়েছেন। আর শুভেন্দু গ্রেফতারি এড়াতে দল বদল করেছে। তাই আমাদের প্রশ্ন, কুন্তলের মতো একই জেল থেকে একই পদ্ধতিতে আদালতকে সুদীপ্ত সেন চিঠি দিলেও শুভেন্দুকে ডাকা হচ্ছে না? সুদীপ্ত সেনকে সমর্থন করছি না, কিন্তু কুন্তলের চিঠি নিয়ে যারা নিত্য করছে, তাদের কিছুদিন পর রাজনৈতিক শোকপালন করতে হবে। যদি এজেন্সি পদক্ষেপ না করেন, তাহলে বলতেই হবে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। সিবিআই-ইডির বহু দক্ষ-যোগ্য অফিসার রয়েছেন। কিন্তু এখন তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরদাকর্তার চিঠির ভিত্তিতে তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে আমাকেও ডাকতে পারে ইডি, এ ব্যাপারে আমি তাদের পূর্ণ সহযোগিতা করবো। তাদেরকে সুদীপ্ত সেনের চিঠির যৌক্তিকতা বুঝিয়ে বলবো।”

আরও পড়ুন:সত্যমেব জয়তে: সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার আগে বার্তা সমীর ওয়াংখেড়ের


 

 

Previous articleভ.য়াবহ ছবি! মাধ্যমিকে ‘ফার্স্ট ডিভিশন’-র হার মাত্র ১৩ শতাংশ
Next articleপ্রকাশিত হাইমাদ্রাসা-আলিম-ফাজিলের ফলাফল, উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন মুখ্যমন্ত্রীর