সৌজন্যে বন দফতর, কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজ ও সুপার শক্তি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাদাবনে সৌর আলোর ব্যবস্থা

সুন্দরবন। যেখানকার মানুষের জীবন কাটে প্রতিনিয়ত সংকটকে ঘিরে। গ্রামগুলি জঙ্গল ও নদী সংলগ্ন হওয়ায় গ্রামবাসীদের ঝুকির মাত্রা অনেকটাই বেশি। এখানকার মানুষের জীবনশৈলী অন্য মানুষদের থেকে আলাদা। এখানকার অন্ধকার রাস্তা যেন গ্রামবাসীদের কাছে এক প্রকার মারণফাঁদ। তার প্রধান কারণ সাপের কামড়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনদফতর বিভাগের সহযোগিতায় কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজ এর সাথে সুপার শক্তি ফাউন্ডেশন সেই এলাকায় ৩০টি সৌর বাতি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫টি সৌর খুঁটি বসানো হয়েছে। আজ এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়, এর পর বাকিগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করবেন তারা। সুন্দরবনের কুলতলী রেঞ্জের দেবীপুর গ্রামের প্রায় ৪১৩৬ টি পরিবার এই রাস্তায় বসানো সৌর ল্যাম্প এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এই গ্রামগুলো সুন্দরবনের মূল এলাকা সংলগ্ন হওয়ায় অন্ধকারে চলার পথে তারা ঘন ঘন সাপের কামড়ের শিকার হয়ে থাকে, যার ফলে নিয়মিত মৃত্যু বা গুরুতর আহত হয়। কুলতালি রেঞ্জ ডিরেক্টরেট ফরেস্টের, দক্ষিণ ২৪ পরগণা বিভাগের অধীনে পড়ে। সেখান থেকে নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতাল ৩৬ কিমি দূরে।

সুন্দরবন বনবিভাগের ডিএফও শ্রী মিলন মন্ডল বলেন, “আমরা সকলেই জানি সুন্দরবন এমন একটি জায়গা, যেখানে প্রানীজগৎ এবং এখানে বসবাসকারী মানুষ সবসময় প্রকৃতির সংস্পর্শে আসে। মানব ও বন্য সংঘাত সুন্দরবন বন বিভাগের প্রধান উদ্বেগের কারণগুলির মধ্যে একটি। অধিকাংশ রাস্তা ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কিন্তু এখানে ‘বিদ্যুত’ একটি বিরল ব্যাপার। সুন্দরবন এলাকায় সাপের কামড় একটি সাধারণ সমস্যা। বিষাক্ত সাপেদের মধ্যে কেউটে জাতীয় সাপ মানুষদের জন্য প্রধান ভয় এবং ক্ষতির কারণ। সাপের কামড়ের ফলে মৃত্যুর হার ৬৫ শতাংশ এর বেশি। এমনকি বাঘ গত পাঁচ বছরে দুইবার গ্রামে ঢুকেছে। তাই এখানে এই উদ্বেগের একমাত্র সমাধান হল সৌর চালিত বাতি। গ্রামের প্রধান অংশগুলি চিহ্নিত করে আমরা এই বাতি গুলি স্থাপন করেছি ইতিমধ্যেই। এই প্রকল্পটি করার মাধ্যমে আমরা রিনিউএবল সবুজ শক্তির প্রচারও করেছি এবং কার্বন এর মাত্রা কমাতে সক্ষম হচ্ছি প্রতিনিয়ত। এই সোলার লাইট গুলি প্রতি বছর ১৮২.৫ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। আমি এই প্রকল্পের জন্য কেএসসিএইচ এবং সুপার শক্তি ফাউন্ডেশন কে ধন্যবাদ জানাই”।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাই গ্রুপের সিএসআর নোডাল অফিসার শ্রী ইশান্ত জৈন বলেন, “প্রকল্পটি সুপার শক্তি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে, যা সিএসআর প্রকল্প-এ নিবন্ধিত। প্রকল্পটি পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং গ্রামীণ উন্নয়ন উভয়ই ক্ষেত্রেই একটা অনন্য ভূমিকা পালন করবে। আমরা খুশী সুন্দরবনের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৩০টি সৌর বাতি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফলে অন্তত ৪০০০ এর বেশি পরিবার সরাসরি উপকৃত হবে৷ প্রকল্পটি শুরু করার জন্য আমরা ইতিমধ্যেই ৫টি সৌর খুঁটি স্থাপন করেছি”।

কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সেক্রেটারী গুঞ্জন কর্মকার বলেন,
“কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজের মাধ্যমে আমরা গত ১৫ বছর ধরে সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ প্ল্যান্টেশন, নারীর ক্ষমতায়ন, বৃত্তিমূলক দক্ষতা উন্নয়ন এবং বন বিভাগের সাথে একত্রে জীবিকা উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছি। গ্রামবাসীদের প্রধান পেশা মাছ ধরা, বন থেকে মধু সংগ্রহ, রিকশা ও ভ্যান চালানো এবং তাদের মাসে গড়ে আয় ৮০০০ থেকে ৬০০০ টাকা। এই সৌর আলো তাদের অন্ধকারে সব সময়ের জন্য আলো সরবরাহ করবে এবং গ্রামবাসীরা উপকৃত হবে। গ্রামবাসীরা দিনে গড়ে মাত্র ৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ পায়। যেখানে আমরা সোলার লাইট বসিয়েছি সেসব নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করেছে বন বিভাগ। বন বিভাগ খুঁটি পর্যবেক্ষণ এবং সৌর প্যানেল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্রামবাসীদের মধ্যে একটি সম্প্রদায় গঠন করেছে।”

প্রসঙ্গত, কলকাতা সোসাইটি ফর কালচারাল হেরিটেজ সম্প্রতি জাতিসংঘের ‘ইকোসক’ পরামর্শমূলক মর্যাদায় সম্মানিত হয়েছে যা সারা বিশ্বে এনজিওগুলির জন্য একটি বিরল সম্মান।

আরও পড়ুন- রাজ্যে আরও এক ডেঙ্গি আক্রা*ন্তের মৃ*ত্যু, বিশেষ নির্দেশিকা স্বাস্থ্যভবনের!

Previous articleমায়ামিতে যোগ দিয়ে সতীর্থদের বিশেষ উপহার মেসির
Next articleঅর্থাভাবে হয়নি চিকিৎসা, শেষমেশ মা.নসিক ভারসাম্যহীন ছেলের পায়ে শি.কল পরালো মা