মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রথম দফায় বাংলায় মিত্তালের ২৫০ কোটি লগ্নি

ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরছেন এবার ‘দেশনেত্রী’র অনুরোধে

 


কুণাল ঘোষ
মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী

বার্সেলোনা: ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছেন। বাইরের সফলদের ঘরে ফেরানো শুরু। সৌজন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিলেন শিল্পপতি কমলকুমার মিত্তাল। শিল্পসফরের মাঝেই শিল্পপতি কমলকুমার মিত্তাল জানিয়ে দিলেন, বাংলায় এখনই তিনি ২৫০ কোটি টাকা লগ্নি করছেন। মূলতঃ নিউ জলপাইগুড়ির কারখানা ও নতুন ইথানল প্ল্যান্টের জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর শিল্পসফরের মাঝেই এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে বাংলার লগ্নির ক্ষেত্রে ল্যান্ডমার্ক সিদ্ধান্ত হতে চলেছে।

শিল্প অভিযান মানে শুধু বিদেশি লগ্নি দেশে আনা নয়। শিল্পসফর মানে দেশ ছেড়ে যাওয়া লগ্নিকারীকেও দেশে ফিরিয়ে আনা। যে কাজটা সুচারুভাবে করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, তাঁর এই উদ্যোগ বাংলার শিল্পক্ষেত্রের গতিপথকেই অন্যদিকে চালিত করবে।

কমলকুমার মিত্তাল। তাঁর সংস্থার নাম পিসিএম গ্রুপ। স্পেনের বহুজাতিক ব্যবসায়ী। শুধু বার্সেলোনা নয়, গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর কারখানা। অথচ তাঁদের ব্যবসা শুরু হয়েছিল কমলকুমারের বাবার হাত ধরে নিউ জলপাইগুড়িতে। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি হাসিমারায়। বাম আমলে সেভাবে শিল্পের শাখা-প্রশাখা মেলার সুযোগ না পাওয়াতে দেশ ছেড়েছিল মিত্তাল পরিবার। তারপর সময় পেরিয়েছে। ব্যবসা কলেবরে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার মাটির টানে মিত্তাল গ্রুপ ফিরতে চায় বাংলার উত্তরে।

মিত্তালদের রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা রয়েছে বার্সেলোনায়। বিশাল কারখানা। আধুনিকতম প্রযুক্তিতে তৈরি কারখানা। ছড়িয়ে রয়েছে বার্সেলোনা থেকে জার্মানি, হাঙ্গেরি থেকে নর্থ কোরিয়া। প্রত্যেক দেশেই রয়েছে একাধিক শিল্প। তবে, মিত্তালরা স্পেশালাইজড রেলের লাইন তৈরির যন্ত্রাংশে। জলপথ কিংবা পাহাড়-দুর্গম এলাকায় রেললাইন তৈরি করতে গেলেই ডাক পড়ে মিত্তালদেরই। এই আধুনিক প্রযুক্তিই এবার নিউ জলপাইগুড়ির কারখানায় নিয়ে আসতে চান। যে বাংলায় শুরু হয়েছিল তাঁর জীবন। সেই বাংলাকেই ফিরিয়ে দিতে চান।

আরও পড়ুন: বাংলার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আদলে এবার কংগ্রেসের ‘মহালক্ষ্মী’ প্রকল্প তেলেঙ্গানায়

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিত্তাল সাহেবের দীর্ঘ কথা হয়েছে। বাংলার আবেগ তিনি ধরে রাখতে পারেননি। তাঁর মন্তব্য, উত্তরের জেলাগুলিকে সৎছেলের মতো মনে করত আগের সরকার। আপনি আসার পরে এই ধারণা বদলাতে শুরু করেছে। আমরা ফিরতে চাই। বাংলায় ব্যবসা করতে চাই। শুধু রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানায় আরও বেশি লগ্নি, স্পেন ও জার্মানির প্রযুক্তির ব্যবহারেই শেষ নয়, আমরা ইথানল তৈরির কারখানাও তৈরি করতে চাই। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে উত্তরের পর্যটনের বিষয়টিও উঠে আসে। এবার কমলকুমারের প্রস্তাব, পিসিএম গ্রুপ উত্তরের পর্যটনস্থলগুলিতে আন্তর্জাতিক ও আধুনিক হোটেল তৈরি করবে। এর ফলে শুধু দেশ নয়, বিদেশি পর্যটকদের আসাও বাড়বে। প্রচুর রেভিনিউ আসবে সরকারে ঘরে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর নেতৃত্বে শিল্পসচিব বন্দনা যাদব ও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় মিত্তালের বার্সেলোনার কারখানা দেখে আসেন। তাঁরা অভিভূত। মিত্তালরা যাতে দ্রুত প্রতিনিধি দল নিয়ে বাংলায় আসেন, তার প্রাথমিক উদ্যোগ শুরু হয়ে গিয়েছে। স্পেন সফরের মাঝখানেই এই সাফল্য নিঃসন্দেহে মাইলস্টোন। সৌজন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

Previous articleসংসদের বিশেষ অধিবেশনে চমক, মন্ত্রিসভায় পাশ মহিলা সংরক্ষণ বিল
Next articleঘোষণা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজের ভারতীয় দল, দলে ফিরলেন অশ্বিন