রয়্যাল এনফিল্ডের পুজো! হ্যাঁ এখানেই হয়

রাজস্থান। ছোট-বড় কেল্লা, দূর্গ, চোখ ধাঁধানো পুষ্কর, মন্দির। এসবই মোটামুটি সিগনেচার টিউন। ইতিহাস, মূলত লড়াইয়ের ইতিহাস প্রতি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে। হ্যাঁ, ভোটের রাজস্থানও আছে। নভেম্বরে যেখানে তখত দখলের লড়াই। সে দিকেও চোখ থাকবে। কিন্তু জয়পুর ডায়রির প্রথম পাতায় আজ এক অবাক করা গল্প।
দেশের একমাত্র মন্দির, যেখানে বুলেট পুজো হয়! হ্যাঁ, ভুল শোনেননি। রয়্যাল এনফিল্ডের (Royal Enfield) পুজো! কেন? আসুন সে গল্পের কথা বলি।

দেশের একমাত্র মন্দির, যেখানে বুলেট পুজো হয়

ওম বান্না। গোটা রাজস্থানের গাড়ির চালকরা তাঁকে পুজো করেন। ভুল বললাম, ওম বান্নার ছবিতে পুজো তো হয়। শুধু তাই নয়, মালা চড়ানো কিংবা দেবতাজ্ঞানে ফল-মূল চড়ানো হয় তাঁর বাইক এনফিল্ড বুলেটে। গল্প মনে হলেও সত্য।

মালা চড়ানো কিংবা দেবতাজ্ঞানে ফল-মূল চড়ানো হয় ওম বান্নার বাইক এনফিল্ড বুলেটে

ঠাকুর ওম সিং রাঠোর। পালি জেলার চোটিলা গ্রামে জন্ম। বেশিদিন আগেকার কথা নয়, ১৯৬৫। বাবা ঠাকুর যোগ সিং রাঠোর। রাজস্থানে রাজপুতদের বান্না বলার রেওয়াজ। সেখান থেকেই ওম বান্না। পরিবারের একমাত্র সন্তান। তাই আদরে সোহাগে বেড়ে ওঠা। যা চেয়েছেন, পেয়েছেন। শখ ছিল বাইক চালানোর। সে সময় আবার বুলেট ছিল বাইকের রাজা। তাই ১৮ পেরতে না পেরতেই বায়না। বাবা যোগ সিং কিনে দিলেন রয়্যাল এনফিল্ড। সেটাই তখন বান্নার ধ্যানজ্ঞান, ট্রেডমার্কও। চোটিলা গাঁওয়ের লোক জানতেন, বুলেটের (Royal Enfield) আওয়াজ মানেই বান্না।

ওম বান্নার এনফিল্ড বুলেট

২৩ বছরেই বিয়ে। চোটিলার কাছেই শ্বশুরবাড়ি। ফলে বান্না বাইকেই যেতেন শ্বশুরবাড়ি। বিয়ে হয়েছিল ১৯৮৮ -র মার্চে। আর ঘটনা ওই বছরেরই নভেম্বরে। কেন এত সন-তারিখের কথা, তা এগোলেই বুঝবেন। ২ নভেম্বর সকালে বাইকে চেপেই স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলেন বান্না। সন্ধ্যায় স্ত্রীকে বাপের বাড়িতে রেখে একাই বাড়ি ফিরছিলেন। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে গাড়ি ছুটছিল দূরন্ত গতিতে। হাওয়ায় ভাসছিলেন বান্না। পছন্দের গাড়ি, পছন্দের রাস্তা। হঠাৎ এক মোড়ে এসে টাল সামলাতে পারেননি বান্না। তারপরের দৃশ্য- পান্নার নিথর দেহ একদিকে পড়ে, অন্যদিকে বুলেট। সারা রাত দেহ সেখানেই। সকালে পুলিশ আসে। পান্নার দেহ বাড়িতে পাঠায় আর বাইক যায় রোহিট থানায়। হিট অ্যান্ড রান কেস। স্বভাবিক ধরে নিয়ে পুলিশও কোনও কারণ অনুসন্ধানে নামেনি। পরের দিনেই আসল গল্পের শুরু। পুলিশ এসে দেখে বুলেট নেই। কোথায় গেল? খোঁজ খোঁজ। বাইক চোরের কাজ ভেবে অন্য থানাকেও খবর দেওয়া হল। মিলল না। সন্ধ্যার সময় গ্রাম থেকে খবর এল বুলেট পড়ে রয়েছে সেখানেই, যেখানে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। কোনও ছিঁচকে চোরের কাজ ভেবে পুলিশ বাইক ফের নিয়ে এল থানায়। সেদিন রাতে থানাতেই রাখা হল। পরের দিন সকালে ফের একই ঘটনা। খবর মিলল দুর্ঘটনার জায়গাতেই গাড়ি রয়েছে। পুলিশ ভাবছে এটা কার কাজ? কেউ কি ঠাট্টা করছে? এবার তাই বাইক থেকে পেট্রল বের করে তাকে চেন দিয়ে বেঁধে ফেলা হল। কিন্তু তাতেও কাজ হল না। বাইক প্রতিবারই পৌঁছে যায় দুর্ঘটনাস্থলে। ৬-৭ বার একই ঘটনা। গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল ঘটনা। গ্রামের মানুষের ধারণা হল, ওম বান্নার আত্মাই এসবের পিছনে। বান্নার বাবার কাছেও এই অদ্ভুত ঘটনার খবর যেতে তিনি পরামর্শ দিলেন দুর্ঘটনাস্থলে বান্নার স্মারক বানালেই এই ঘটনা বন্ধ হতে পারে। তাই হল। বাইকটিও সেখানে রাখা হল। এবং কী আশ্চর্য তারপর আর বাইক সরেনি সেখান থেকে।

ওম বান্না এবং তাঁর স্ত্রী ঊর্মিলা

এরপর শুরু বুলেট (Royal Enfield) পুজো। রাজস্থানে নেমে শুধু জিজ্ঞাসা করুন RNJ-7773 গাড়ির নম্বর কার? সকলে মাথায় হাত ঠেকাবেন। গাড়ির চালকদের হোয়াটসঅ্যাপ ডিপিতে বান্নার ছবি। কত গল্প বান্নাকে নিয়ে। বান্নার মন্দিরে গাড়ি না থামানোয় গাড়ির কাঁচ ভেঙেছে, ইঞ্জিন বন্ধ হয়েছে। তারপর ড্রাইভার ক্ষমা চাইতেই গাড়ি চলতে শুরু করেছে। সবচেয়ে মজার, ৩৪ বছর আগে যেমনভাবে মন্দির তৈরি হয়েছিল, আজও তেমনটিই আছে।

ওম বান্নার গাড়ির নম্বর RNJ-7773

বান্নার পরিবার? বাবা যোগ সিং বছর তিনেক আগে মারা গিয়েছেন। স্ত্রী ঊর্মিলা এখন চোটিলার সরপঞ্চ। বান্নার স্ত্রী, তাই প্রতি বছর তিনি ভোটে জেতেন। কেউ তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয় না। বান্নার ছেলে বছর ৩২-এর যুবক। মন্দির থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে দু:স্থদের সাহায্য করা হয়। কিন্তু রাজস্থানে বুলেটবাবার দর্শন না হলে সফরটাই কিন্তু বৃথা। আর বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে মাথা ঘামাবেন না– কারণ, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর…

বান্নার স্ত্রী ঊর্মিলা এখন চোটিলার সরপঞ্চ

Previous articleপ্রায় ১৩ ঘণ্টা পার, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে ইডির ত.ল্লাশি চলছে
Next articleস্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে আরও পড়ুয়াকে ঋণ, ২ নভেম্বর থেকে প্রচারাভিযানে নবান্ন