ছোট দেশগুলির ওপর নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করতে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নামে এক প্রকল্প শুরু করেছে চিন। তবে এই প্রকল্প থেকে আগেই সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল ইতালি। এবার সেই পথে হাঁটল চিনের প্রতিবেশী ফিলিপিন্সও। প্রতিবেশী দেশের এমন আচরণে স্বাভাবিকভাবেই বিপদে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

বেজিংপন্থী হিসেবে পরিচিত রড্রিগো দুতার্তে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন চিন ও ফিলিপাইনের মধ্যে সুসম্পর্ক বিরাজ করছিল। তবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আমেরিকাপন্থী বলেই পরিচিত। আর এই আবহে ফিলিপিন্সের পরিবহণ দফতর থেকে বিআরআই-এর প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ফিলিপিন্স সেনেট জানিয়ে দিয়েছে, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চিনকে আর তারা বিশ্বাস করে না। ফিলিপিন্সের পরিবহণ সচিব জেমি বাতিস্তা জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের তিনটি বড় প্রকল্পে আর চিনের টাকা নেওয়া হবে না। ৪৯০ কোটির ওই প্রকল্পের জন্য চিনের সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছিল, তা বাতিল হচ্ছে।’’ চিনের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে আমেরিকা এবং জাপানের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে উদ্যোগী ফিলিপিন্সের বর্তমান রাষ্ট্রপতি এমনটাই গুঞ্জন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।

অবশ্য, মার্কোস জুনিয়র ক্ষমতায় আসার পর ফিলিপিন্সের পরিস্থিতি বেশ পাল্টে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁরা অনেক ব্যাপারেই চিনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে। এমনকি ফিলিপাইন-ইউএস মিউচুয়াল ডিফেন্স ট্রিটির (এমডিটি) মাধ্যমে দক্ষিণ চিন সাগরে ফিলিপিন্সের কোনো জাহাজ, বিমান বা সৈন্যদের ওপর কোনো ধরনের হামলা হলে তাতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও আশ্বস্ত করেছেন। ফিলিপিন্সের সেনেটর শেরউইন গ্যাটচালিয়ান জানিয়েছেন, আরও ছয়টি চিনা প্রকল্প বাতিল করার কথা ভাবছে সরকার।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিপিন্স। ফলত, এই সাগরের দখল কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে সংলগ্ন দেশগুলির মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকে। এই সংঘর্ষের মাঝেও বিআরআই-এর মাধ্যমে ফিলিপিন্স এবং চিন একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। সেই সমঝোতাতেই ফাটল দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, আর্থিকভাবে দুর্বল বিভিন্ন দেশকে আর্থিক বিনিয়োগ এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিআরআই-এর মাধ্যমে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখে বেজিং। চিনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই প্রকল্প হল একটি বাণিজ্য, পরিকাঠামোগত নেটওয়ার্ক- যা প্রাচীন সিল্ক রুটের ওপর ভিত্তি করে দেশটিকে পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পথ উন্মুক্ত করতে সাহায্য করেছে। তবে বর্তমানে বিআরআই প্রকল্পের মান নিয়েও বেশ কয়েকটি দেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজরে এসেছে চিনের বেহাল আর্থিক অবস্থার বিষয়টি। শোনা যাচ্ছে আর্থিক সঙ্কটে চিন তাদের স্বপ্নের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পেও টাকা ঢালার বিষয়ে বেশ সতর্ক।
