বাংলার প্রতিবাদে নড়ল টনক, বিশ্বভারতীর বিতর্কিত ফলক সরানোর নির্দেশ কেন্দ্রের

বাংলার প্রতিবাদের কাছে মাথা নত করল কেন্দ্রের মোদি সরকার। বিদ্যুৎ বিদায়ের পর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের(Visva Bharati University) বিতর্কিত ফলক সরানোর নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক। ফলে UNESCO হেরিটেজ ঘোষিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তদানীন্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নামাঙ্কিত যে ফলককে কেন্দ্র করে এত বিতর্ক তা আর থাকবে না বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে।

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের তরফে মঙ্গলবার চিঠি দেওয়া হয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে। সেখানেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বর্তমানে যে ফলক আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে তা পাল্টাতে হবে। তার পরিবর্তে বসাতে হবে নতুন ফলক, যাতে আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীর নাম থাকবে না। থাকবে না উপাচার্যের নামও। নতুন ফলকে লেখার জন্য একটি ছোটখাটো অনুচ্ছেদ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই ইংরাজি অনুচ্ছেদটিকে বাংলা এবং হিন্দিতে অনুবাদ করা হবে। ইংরাজি, বাংলা এবং হিন্দি— তিন ভাষাতেই ওই অনুচ্ছেদ বিশ্বভারতীর নতুন ফলকে লেখা থাকবে। তেমন ভাবেই নতুন ফলক প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। ইংরাজি অনুচ্ছেদটিকে বাকি দুই ভাষায় অনুবাদ এবং ফলক তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। ছয় সদস্যের ওই কমিটিতে থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার জন বিভাগীয় প্রধান এবং দু’জন ইসির সদস্য। এই কমিটি বাকি দুই ভাষায় অনুবাদ করে তা পাঠাবে কেন্দ্রকে। সেই লেখা অনুমোদিত হলে তা উঠবে ফলকে।

নতুন ফলকের জন্য কেন্দ্রের পাঠানো অনুচ্ছেদে বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ছোটখাটো বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে। বলা হয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯০১ সালের গ্রামীণ বাংলায় স্থাপিত হয়েছিল। ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি অনুযায়ী সর্বজনীন মানবতার পাঠ পড়ানো হত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এখানে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের ভাবধারার বিনিময় হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথের বিশ্বশান্তির ভাবনাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য এবং জ্ঞানের সাধনায় সারা বিশ্বকে এক ছাতার তলায় ধরে আনা হয়েছে বিশ্বভারতীতে।

উল্লেখ্য, চলতি বছর UNESCO হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। যা বাঙালির কাছে গর্বের বিষয় হলেও, বিতর্ক তৈরি হয় উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর পরবর্তী পদক্ষেপে। UNESCO হেরিটেজ হওয়ার পর বিশ্বভারতী চত্বরে নতুন ফলক বসানো হয় তাতে UNESCO-র স্বীকৃতিপ্রাপ্তির কথা উল্লেখের পাশাপাশি, আচার্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং উপাচার্য হিসেবে বিদ্যুতের নাম লেখা হয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের নাম উল্লেখ করা হয়নি কোথাও। যার জেরেই প্রতিবাদে ফেটে পড়ে বাংলার মানুষ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এর তীব্র নিন্দা করেন। ফলক পাল্টানোর দাবি নিয়ে, কবিগুরুর ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেন। সেই মতো বিশ্বভারতীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ধর্না, বিক্ষোভ শুরু হয়। তৃণমূলের নেতা-কর্মী এবং সমার্থকরা টানা দুই সপ্তাহ আন্দোলন করেন। তার পরই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করল কেন্দ্র।

Previous articleদিল্লি থেকে সহর্ষাগামী বৈশালী এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ড! আহত ১৯, প্রশ্নের মুখে রেলের নিরাপত্তা
Next articleজয়নগর খুনে গ্রে.ফতার মূল অ.ভিযুক্ত আনিসুর লস্কর সহ ৪