আদালত অবরোধের ডাক দেওয়া হলে তা কি অপরাধের হবে?

উদাহরণ দিতে গেলে গৃহস্থবাড়ির মাসকাবারির ফর্দ হয়ে যাবে। বিরোধী দলনেতা প্রকাশ্যে অশা*লীন আচরণ করছে, গালাগালি দিচ্ছে। মা*মলা করলে হয় স্থগিতাদেশ, নয়তো পরবর্তী শুনানির দিন এত পরে দেওয়া হচ্ছে যে তখন মা*মলার আর কোনও অর্থ থাকে না।

অভিজিৎ ঘোষ

বিধিসম্মত সতর্কীকরণ : আদালতই শেষ কথা। আদালতের সিদ্ধান্তই শিরোধার্য। বিচারপতিরা সম্মাননীয়। তাঁদের নির্দেশ মেনে নেওয়া বাধ্যতামূলক। নিম্ন আদালতের রায় পছন্দ না হলে সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার আইনি অধিকার রয়েছে ১৩০ কোটির দেশের প্রত্যেক নাগরিকের।

সম্প্রতি আদালতের বেশ কিছু রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে আদালত কি এধরনের মন্তব্য করতে পারে? আদালত কি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে? আদালত কি এমন নির্দেশ দিতে পারে? অদ্ভুত ঠেকেছিল বিচারপতির এক নির্দেশনামা। কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতির নির্দেশ ছিল, রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে গ্রেফতার করা যাবে না। করতে গেলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। তর্কের খাতিরে ধরা যাক বিরোধী দলনেতা খুন করছেন এমন দৃশ্য অনেকে দেখলেন। পুলিশও দেখল। কিন্তু গ্রেফতার তাকে করা যাবে না। কারণ আদালতের নির্দেশ। আদালতের দরজায় যাওয়ার মাঝখানেই রক্ত মুছে যাবে, সাক্ষীরা মৌনব্রত নেবেন এবং প্রমাণও লোপাট হয়ে যাবে। অবশ্য তারপর যদি আদালত তদন্তের নির্দেশ দেয়! তাই না!অর্থাৎ সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপাল যে ক্ষমতা ভোগ করেন, তা বিরোধী দলনেতাকে দেওয়া হয়েছে। ভাবা যায়! তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা করতে গেলেই আদালত শিখণ্ডী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। জাতীয় সঙ্গীতের অপমান করছে সে, তারপরেও আদালত মৌনব্রত নিয়েছে। কেন? কিসের জন্য? কোন তাগিদে? এটাই কি নিরপেক্ষ বিচার? এই জন্যই কি ওই বিখ্যাত লাইনটির মধ্যে অব্যক্ত যন্ত্রনা তৈরি হয়েছে… বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে…!

রাজ্য প্রশাসনের ২ শীর্ষ পদে রদবদল: মুখ্যসচিব গোপালিকা, ডিজি রাজীব কুমার

উদাহরণ দিতে গেলে গৃহস্থবাড়ির মাসকাবারির ফর্দ হয়ে যাবে। বিরোধী দলনেতা প্রকাশ্যে অশালীন আচরণ করছে, গালাগালি দিচ্ছে। মামলা করলে হয় স্থগিতাদেশ, নয়তো পরবর্তী শুনানির দিন এত পরে দেওয়া হচ্ছে যে তখন মামলার আর কোনও অর্থ থাকে না। আদালতে বিচারপতি চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগে অসামঞ্জস্য নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। নিজেকে মসিহা বানানোর অবিরাম চেষ্টা। একবার ভুলেও বলছেন না— বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে সারদা ও নারদায় দুটি এফআইআর রয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই টাকা নেওয়ার অভিযোগ। একটি তো ক্যামেরার সামনে। তাকে কেন গ্রেফতার করে হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে না? একপেশে মন্তব্য। বুঝতে অসুবিধে হয় না বিচারপতিরা নির্দেশ দিতে গিয়ে আইনের চেয়েও রাজনৈতিক রংটা বেশি করে দেখছেন।আদালত কক্ষে একজন আইনজীবীর আচরণ পছন্দ না হওয়ায় বিচারপতি তাঁর পোশাক খুলিয়ে গ্রেফতার করছেন। ভাবা যায়! বিচারপতিরা কোন পর্যায়ে নেমেছেন? তাঁরা আসলে বুঝেছেন, এইসব কাজ ও মন্তব্যে সংবাদমাধ্যমে হেডিং হওয়া যায়, আলোচনায় আসা যায়, বিপ্লবী তকমা পাওয়া যায়। কারণ, সমাধান করার দায়িত্ব তাঁরা নেননি। দায়িত্বটা তো শুধু রাজনৈতিক নেতাদের। তাই তো!

দিন কয়েক আগে দেখা গেল আদালত নির্দেশ দিচ্ছে, নবান্নর সামনে ডিএ নিয়ে আন্দোলনকারীরা ধরনায় বসতে পারবেন। উদাহরণ হিসেবে আদালত রাজভবনের সামনে তৃণমূল কংগ্রেসের বকেয়ার দাবিতে ধরনার কথাও উল্লেখ করতে ছাড়েনি। উত্তম কথা। যদি রাজনৈতিক দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস ১৪৪ ধারা ভেঙেও থাকে, তার সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু তার উদাহরণ দিয়ে রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবনটির সামনে ডিএ আন্দোলনকারীদের ধরনায় বসার অনুমতি দেওয়াটা কি আদালতের সাজে? খোলা মনে বিচার করলে দেখা যাবে ঠিক নয় এই সিদ্ধান্ত। এবার উল্টোদিকের কথাও ভাবা যাক। ধরা যাক, আদালতের কোনও নির্দেশ পছন্দ হল না একটি রাজনৈতিক দলের। পছন্দের নির্দেশ পেতে তারাও কি পাল্টা পদক্ষেপ করতে পারে না? কী সেই পদক্ষেপ? পছন্দের রায় না হওয়ার কারণে যদি একটি রাজনৈতিক দল আদালত ঘেরাওয়ের ডাক দেয়, তাহলে বিচারপতিরা কেন তার অনুমতি দেবেন না? আদালত চত্বরে ১৪৪ ধারা আছে। নবান্ন চত্বরেও তো রয়েছে। সেখানে অনুমতি মিললে এখানেও দেওয়া উচিত। বিচারপতিরা পুলিশি কনভয় নিয়েও যদি বেরোতে না পারেন তাহলে কাকে দোষ দেবেন? আন্দোলন করা তো গণতান্ত্রিক অধিকার। তাই না!

বিচারপতি যদি সংবাদমাধ্যমে বসে কোনও একটি রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে তাঁর উইশ লিস্টের কথা বলতে পারেন, তাহলে রাজনৈতিক দল কেন আদালত ঘেরাও করতে পারবে না? আইনি বাধা কোথায়? কোনও একজন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে যদি আদালতের অনুমতি নিতে হয় তাহলে এই আন্দোলনের যৌক্তিকতাকে খণ্ডন করবেন কোন কাণ্ডজ্ঞানে? আগামী দিন কি সেই পথই দেখাচ্ছে?

না, এই পথ কখনওই যথার্থ হতে পারে না। আদালত শেষ কথা। বিচারপতিদের নির্দেশ শিরোধার্য। তাঁরা সম্মাননীয়। কিন্তু বেশ কয়েকজন বিচারপতি এমন কিছু নির্দেশ দিচ্ছেন এবং পর্যবেক্ষণে এমন মন্তব্য করছেন, যে এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে কোনও রাজনৈতিক দল নিলে অবাক হওয়ার থাকবে না। বিচারপতিরাও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন এটাও বুঝতে হবে। সাধারণ মানুষ বিচারপতির নির্দেশের সমালোচনা করলেই একসময় মানহানির মামলা অবধারিত ছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতি যখন দেশের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন, তারপর থেকে বিচারপতিরা ক্রমশ নিজেদের মেলে ধরছেন, সমালোচিতও হচ্ছেন। যদি কোনও বিচারপতি রাজনীতি করতে চান, অবশ্যই করুন। পেশাদার জীবন শেষে করে ময়দানে নামুন। কিন্তু এই পদে বসে অদৃশ্য ভঙ্গিতে রাজনীতি করে চেয়ারের গরিমা ধুলোয় মেশানো ঠিক নয়। বিচারপতি থাকাকালীন কেউ যদি সংবাদ মাধ্যমে গর্ব করে বলেন, আমি অমুক নেতার পায়ের তলায় বসে কাজ শিখেছি, তাহলে বিচারপতি সম্বন্ধে দীর্ঘ লালন করে আসা ভাবনাটা এক মুহূর্তে ভেঙে যায়। আর যদি তিনি একথা বলতে পারেন, তাহলে আগামী দিনে কেউ আদালত অবরোধের ডাক দিলে তা কেন অপরাধযোগ্য হবে?

একটু ভেবে দেখবেন।

Previous articleপঞ্চায়েতের ৫০ হাজার কর্মী স্বাস্থ্যবিমার আওতায়, সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায়
Next articleসেঞ্চুরিয়ানে প্রথম বিদেশী ক্রিকেটার হিসেবে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে ইতিহাস রাহুলের!