বিচার ব্যবস্থায় কি ‘বেনোজল’! বিলকিস মামলায় সুপ্রিম নির্দেশের পরে উঠছে প্রশ্ন

ইডি, সিবিআই এর মত কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির পর এবার প্রশ্নের মুখে দেশের বিচার ব্যবস্থা। বিলকিস বানো মামলায় সোমবার সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিল তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি বিচার ব্যবস্থাতেও ঢুকে পড়েছে বিজেপির বেনোজল? দেশের শীর্ষ আদালত বুঝতে পারল বিলকিস বানো গণধর্ষণে অপরাধীরা মুক্তি পাওয়ারর যোগ্য নয়। এবং এই মুক্তির ক্ষেত্রে তথ্য জালিয়াতি করেছে গুজরাট সরকার। অথচ হাইকোর্টের বিচারপতি বুঝতে পারলেন না বিজেপি শাসিত গুজরাট সরকারের জালিয়াতি? এ কি বিশ্বাসযোগ্য? নাকি বিচারপতির আসনও ‘ক্ষমতা অন্ধ’ গেরুয়া শিবিরের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে? প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র।

সোমবার বিলকিস বানো মামলায় শীর্ষ আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে তা গুজরাট হাইকোর্টের গালে ‘সপাটে থাপ্পড়’ বলা যেতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, গুজরাট দাঙ্গার সময় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ বিলকিসকে ধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের সাজা মকুব ও মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো একতিয়ার গুজরাট হাইকোর্টের নেই। কারণ অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল গুজরাটে। অপরাধীরা সেই রাজ্যের কারাগারে বন্দী ছিলেন। কিন্তু মামলা হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। অতএব মুক্তিদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল মহারাষ্ট্রের আদালতের, গুজরাটের নয়। ফলে ১১ অপরাধীকে দু’সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে‌। শুধু তাই নয় আদালত আরো জানায়, সাজা মকুব করতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের সময় অনেক তথ্য গোপন করা হয়েছিল, জালিয়াতি করা হয়েছিল। তাই মুক্তিসংক্রান্ত বিষয়ে ২০২২ সালের ১৩ মে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় বাতিলযোগ্য। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের মুখে বিচার ব্যবস্থার একাংশ।

কেন্দ্রের পাশাপাশি গুজরাটেও ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। এই ১১ নিকৃষ্ট অপরাধীকে মুক্তির আবেদন জানানো হয়েছিল বিজেপির সরকারের তরফে। ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে অপরাধীদের মুক্তির পর বিজেপির নেতা মন্ত্রীদের তরফে তাদের অভ্যর্থনা দেওয়ার ছবি দেখেছিল গোটা দেশ। তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল এই ১১ অপরাধীকে মুক্ত করতে বিজেপি সরকার কতখানি কাঠ-খড় পুড়িয়েছে। তবে খোদ বিচার ব্যবস্থা যে সেই কাঠ-খড়ের তালিকায় পড়ে যাবে, এটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি প্রমাণিত হলো সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আসার পর। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগের মত একাধিক কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি নিজেদের নিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিয়ে পদ্ম ছাতার তলায় আশ্রয় নিয়েছে ইতিমধ্যেই। সেই তালিকায় এবার কি তবে দেশের বিচারবিভাগও?

অবশ্য এই ঘটনা শুধু গুজরাট হাইকোর্টের নয়, কলকাতা হাইকোর্টের কিছু শ্রেণীর বিচারপতির নির্দেশ নিয়েও বারবার প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠছে, বিজেপি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের মনোমতো রায় দিচ্ছেন আদালতের বিচারপতিদের একাংশ। এই ধরনের ঘটনা দেশের গণতন্ত্রের জন্য স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগের। যে বিচার ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের শেষ আশা ভরসার জায়গা, সেই বিচারপতিরা যদি কোন ক্ষমতাশালীর হাতের মুঠোয় গিয়ে পক্ষপাতের লাগাম পরে ফেলেন তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়??

Previous articleআদালত অবমাননার মামলায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন রাজীব সিনহা
Next articleকুণালের ভূয়সী প্রশংসা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, পাল্টা কর্তব্য শোনালেন তৃণমূল মুখপাত্র