২৭ বছর দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর চাকরি মিলল, কোথায়?

লড়াই শুরু হয়েছিল ১৯৯৭ সালে।সমাধান মিলল ২০২৪ সালে। দীর্ঘ ২৭ বছরের আইনি লড়াইয়ে কখনও কলকাতা পুরসভা আবার কখনও কলকাতা হাই কোর্টের বারান্দাতেই কেটে গিয়েছে উত্তম নায়েকের সময়।শেষ পর্যন্ত সমাধান পেলেন।পুরসভাকে অবিলম্বে চাকরিতে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আগামী ৮ সপ্তাহের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে।আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, তিলজলা চৌভাগা এলাকার বাসিন্দা হরেন্দ্র নাথ নায়েক কলকাতা পুরসভার ট্যাক্স কালেক্টর ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৫ জুলাই ১৯৯৭ সালে কলকাতা পুরসভার মেডিকেল বোর্ড তাকে সম্পূর্ণ শারীরিক অক্ষম বলে ঘোষণা করে।

এরপরই ঘটনার সূত্রপাত।তৎকালীন কলকাতা পুরসভার আইন অনুযায়ী চাকরিরত কোনও ব্যক্তি যদি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তার চাকরিতে ফিরে আসার যদি কোনও জায়গা না থাকে সেক্ষেত্রে তার পরিবারের একজন চাকরি পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে স্পেশাল গ্রাউন্ডে।সেই আইন অনুযায়ী হরেন্দ্রলাল নায়েকের বড় ছেলে উত্তম নায়ক চাকরি পাওয়ার জন্য আবেদন জানান। কলকাতা পুরসভা তাকে চাকরিতে নিযুক্ত করার আগেই ১৯৯৭ সালের ২০ জানুয়ারি হরেন্দ্র নাথ নায়েক মারা যান। ওই বছরই উত্তম নায়েক যে চাকরি পাওয়ার যোগ্য তা কলকাতা পুরসভার ডেপুটি পার্সোনাল ম্যানেজারের নেতৃত্ব কমিটি সুপারিশ করেছিল কলকাতা পুরসভাকে। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ওই পরিবারকে কোনও পেনশন বা কোনও রকম সুযোগ-সুবিধা না দিয়েই শুধুমাত্র পরিবারের হাতে ৪৪ হাজার ৯৭ টাকা এককালীন হিসাবে তুলে দেয় কলকাতা পুরসভা।

এদিকে বহু দরবার করেও মেলেনি কোনও সুরাহা। অবশেষে ২০১৪ সালে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন উত্তম নায়েক। কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রাক্তন বিচারপতি সৌমিত্র পাল কলকাতা পুরসভাকে বিষয়টি বিবেচনা করা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে অগাস্ট মাসে কলকাতা পুরসভা উত্তম নায়েকের আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর ফের হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন উত্তমবাবু।মামলার শুনানি পর্বে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য কলকাতা পুরসভার নোটিশ খারিজের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, যখন তিনি চাকরি পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন তাহলে কলকাতা পুরসভা নিজেই নিজেদের সেই নোটিশ কিভাবে খারিজ করে দিল।

মামলাকারীর পক্ষে আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী জানান, চাকরির জন্য আবেদন করা হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি। কলকাতা পুরসভার কমিটি চাকরি পাওয়ার যোগ্য হিসেবে নাম পাঠানো হয়। অথচ ২০০৯ সালের বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে ২০১৪ সালে তা কিভাবে খারিজ হয়? দেখা যাচ্ছে তৎকালীন আইন অনুযায়ী বহু ব্যক্তিদের চাকরি দেওয়া হয়েছে অথচ মামলাকারীকে বঞ্চিত করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ বেআইনি।কলকাতা পুরসভার পক্ষের আইনজীবী অরিজিৎ দে চাকরির না পাওয়ার পক্ষে একাধিক সওয়াল করলেও বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য ২০১৪ সালের কলকাতা পুরসভার যে নির্দেশ তা খারিজ করে দেন এবং আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে উত্তম নায়েককে চাকরিতে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।

Previous articleসিরিয়ার বিরুদ্ধেও নামার আগে সর্তক টিম ইন্ডিয়া
Next articleরামমন্দির উদ্বোধনের আগে অযোধ্যায় পৌঁছলেন কোন কোন সেলিব্রেটি!