অযোধ্যায় চূড়ান্ত অব্যবস্থা! ‘রামভক্ত’দের সামলাতে ব্যর্থ যোগী, নিয়ম বদলেও কী মিলবে সুরাহা?

আশঙ্কাই সত্যি হল! রামমন্দির নিয়ে এবার মহা ফ্যাসাদে যোগী সরকার (Yogi Govt)। রামের নামে সবাইকে অযোধ্যামুখী (Ayodhya) হওয়ার গেরুয়া নির্দেশ দিলেও উদ্বোধনের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ভিড়ের ঠেলায় এবার প্রশ্নের মুখে আইনশৃঙ্খলা (Law and Order)। বিভিন্ন উপায়ে ভিড় সামলানোর শত চেষ্টা করলেও যোগী সরকারের তথৈবচ অবস্থা দেখে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে দর্শনার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলায় পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তারপরই চরম সমালোচিত হয়ে নতুন ভাবনা অযোধ্যা প্রশাসনের। বুধবার থেকেই রামমন্দিরে (Ram Mandir) প্রবেশ করতে গেলে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যোগী সরকারের নয়া নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকেই শুরু হয়েছে রামলালার দর্শন। চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মাঝে দুপুর সাড়ে ১১টায় ভোগ আরতি এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সন্ধ্যারতির সময়ে কিছুক্ষণের জন্য রামলালার (Ramlala) দর্শন বন্ধ থাকলেও মন্দিরে প্রবেশে কোনোরকম বাধা দেওয়া হবে না।

তবে যোগী আদিত্যনাথের প্রতিদিনই নয়া ফতোয়া জারি করায় চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। কেউ অভিযোগ জানাচ্ছেন, চূড়ান্ত অব্যবস্থা! এত মানুষের সমাগম হবে জেনেও কেন আগাম ব্যবস্থা নিলেন না যোগী আদিত্যনাথ? বারবার মন্দিরে প্রবেশের নিয়ম বদলে মানুষকে চরম সমস্যায় ফেলছে যোগী প্রশাসন। অন্যদিকে, সকাল থেকে রামলালা দর্শনের আশায় দর্শনার্থীরা লম্বা লাইন দিলেও আদৌ তাঁরা কখন মন্দিরে প্রবেশ করবেন তা নিজেরাও জানেন না তাঁরা। আগে ঠিক ছিল সকাল ৭টায় খুলে যাবে রামমন্দিরের দরজা। পরে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত রামলালার দর্শন বন্ধ থাকবে। আর মন্দির খোলা থাকবে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে রামমন্দিরে দর্শনার্থীদের ভিড় জমছে। আর তা সামলাতেই মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় যোগীর। ইতিমধ্যে রাম মন্দিরের উদ্বোধনের পর থেকে যা যা প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন তার প্রায় সবটাই বিশ বাঁও জলে। বুধবার থেকে অযোধ্যা ধাম স্টেশন চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত রেলের যা সিদ্ধান্ত, তাতে বুধবার কোনও ট্রেন ঢুকবে না অযোধ্যায়। এমন চলতে পারে আরও দু’দিন। আর তারপরই দর্শনার্থীদের মাথায় হাত। ইতিমধ্যে যারা রামলালার দর্শন সেরেছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাড়ি ফেরার টিকিট কেটে ফেলেছেন। পাশাপাশি ভুন রাজ্য থেকে যাদের ট্রেন পথে আসার কথা ছিল তাঁদের টিকিটও বারিল করতে হচ্ছে বলে খবর। ফলে অযোধ্যা ধাম স্টেশনে এদিন সকাল থেকেই যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। তবে আচমকা ট্রেন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় উত্তর প্রদেশ সরকারের ভূমিকায় চরম ক্ষুব্ধ দর্শনার্থীরা।

বুধবার ভোর থেকে, মন্দিরের দরজা খোলার আগে থেকেই ভক্তদের লম্বা লাইন দেখা যায়। সকাল ৬টা-সাড়ে ৬টাতেই প্রবেশ পথ থেকে পুণ্যার্থীর লাইন এক কিলোমিটার পার করে যায়। সকাল থেকে মন্দির চত্বরে পুলিশ ও ভলেন্টিয়ারদের মোতায়েন করেও লাভের লাভ হচ্ছে না। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, রামলালার দর্শনের জন্য তিনটি করে লাইন তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে যোগী প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার পাঁচ লাখ মানুষ রামলালার দর্শন করে ফেললেও তাঁদের একটা বড় অংশ এখনও অযোধ্যাতেই রয়ে গিয়েছেন। আর এই পরিস্থিতিতে নতুন করে কোনও পুণ্যার্থীকে অযোধ্যায় ঢুকতে দিতে চায় না প্রশাসন। সেকারণেই জোরদার করা হচ্ছে নিরাপত্তা। প্রশাসন সূত্রে খবর, অযোধ্যার এখনকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্তত ২৬ জানুয়ারি, শুক্রবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

তবে শুধু মন্দির দর্শনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়াই নয়, কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বুধবার থেকে মন্দির চত্বরে আরও বেশি পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মন্দির চত্বরেই রয়েছেন এক হাজার জওয়ান। তবে রাজ্য পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রবীণ ও শারীরিক ভাবে অক্ষমদের এখন আর অযোধ্যায় আসতে দেওয়া যাবে না। আগামী দু’সপ্তাহ এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। তবে হাজার চেষ্টা করলেও ভিড় সামলাতে ব্যর্থ যোগী প্রশাসন। সরকারের কাছে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ দর্শনার্থীদের সঠিক নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে কতক্ষণ এই মানবদুর্গ আটকে রাখতে পারেন যোগী আদিত্যনাথ সরকার সেদিকে নজর থাকবে।

 

 

 

Previous articleManipur: সহকর্মীদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি জওয়ানের, আহত ৬
Next articleমুক্তির আগেই ধাক্কা, নিষিদ্ধ হচ্ছে হৃতিক-দীপিকার ‘ফাইটার’!