সন্দেশখালি নিয়ে ‘উদাসীন’, ভালবাসার মরশুমে যশেই রঙিন বসিরহাটের সাংসদ নুসরত!

পুলিশ-প্রশাসন সদার্থক ভূমিক নেওয়া সত্ত্বেও বাইরের উস্কানিতে সন্দেশখালি অশান্তি চলছে গত প্রায় ১৬-১৭দিন ধরে। তৃণমূল নেতৃত্ব থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তা- সেখানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগ শুনছেন। কিন্তু কোথায় বসিরহাটের সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরত জাহান (Nusrat Jahan)? তাঁরই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সন্দেশখালি যাওয়া তো দূরস্ত তা নিয়ে তেমন কোনও পোস্টও চোখে পড়েনি নুসরতের। তা বলে, তিনি যে সমাজ মাধ্যম থেকে দূরে ছিলেন, এমনটা মোটেও নয়। ভ্যালেন্টাইন উইকে যশ দাশগুপ্তর সঙ্গে ছবি পোস্ট করে বিশেষ দিন পালনের বার্তা দিয়েছেন সাংসদ। দিয়েছেন যশের প্রযোজনায় তৈরি ফিল্ম সেন্টিমেন্টাল ছবির পোস্টারও। কিন্তু সন্দেশখালি নিয়ে কোনও সন্দেশ নেই!

৮ ফেব্রুয়ারি- দফায় দফায় অশান্তি ছড়ায় সন্দেশখালিতে। সে দিন সংসদে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বাংলার বকেয়া অর্থ মেটানোর দাবি জানান নুসরত (Nusrat Jahan)। সেই বক্তৃতা এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেও ফেসবুকে তাঁর পোস্ট ছিল ‘প্রোপোজ ডে’ উপলক্ষ্যে। আর ইনস্টাগ্রামে স্বামী যশের নতুন ছবি ‘সেন্টিমেন্টাল’-এর একটি গানের ৩০ লক্ষ ‘ভিউ’ হওয়ার উদ্‌যাপন।

৯ ফেব্রুয়ারি- ইনস্টাগ্রামেও ‘সেন্টিমেন্টাল’ নিয়েই জোড়া পোস্ট নুসরতের। তার একটিতে যশের সংলাপের ভিডিও। আর একটি গানের রিল পোস্ট করেন সাংসদ। ফেসবুকে ‘চকোলেট ডে’ উদ্‌যাপনের পোস্টারও দেন। যেদিন নুসরতের পোস্টে চকোলেট মাখামাখি, সেদিনই ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে সন্দেশখালিতে শান্তি ফেরাতে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসু, নারায়ণ গোস্বামীদের নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee)।

১০ ফেব্রুয়ারি- ইনস্টাগ্রামে একটি ছবির ‘ব্র্যান্ডিং’, যশের সঙ্গে আড্ডার ক্লিপিং আর ‘টেডি ডে’-র পোস্টার পোস্ট করেন নুসরত। শুধু ইনস্টা নয়, ফেসবুক (Face Book) এবং এক্স ‘টেডি ডে’-র পোস্টার পোস্ট করেন বসিরহাটের সাংসদ। সে দিন সন্দেশখালির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

১১ ফেব্রুয়ারি- স্যোশাল মিডিয়ায় (Social Media) নুসরতের কোনও পোস্ট ছিল না।

১২ ফেব্রুয়ারি- ফেসবুকে ‘হাগ ডে’-র পোস্টার (Poster)- তাতে সঙ্গী যশকে জড়িয়ে রয়েছেন নুসরত।

১৩ ফেব্রুয়ারি- ইনস্টাগ্রামে নজরকাড়া পোশাকে ছবি পোস্ট বসিরহাটের সাংসদের। এদিকে সেদিনই সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে দফায় দফায় মিছিল, বিক্ষোভ হয় কলকাতায়।

১৪ ফেব্রুয়ারি- সরস্বতী পুজো ও ‘ভ্যালেন্টাইন্‌স ডে’-তে নুসরতের ইনস্টা অ্যাকাউন্টে প্রেমের ছড়াছড়ি। বার্জে গঙ্গাবক্ষে যশের সঙ্গে নানা মুহূর্তের ছবি পোস্ট করেন নুসরত। ফেসবুকের ছবিতে ক্যাপশন, “তুমি কি আমার ভ্যালেন্টাইন হবে?” সে দিন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বসিরহাটে নাটক করে হাসপাতালে ভর্তি হন।

১৫ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি- ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে ‘সেন্টিমেন্টাল’-এর প্রচার করেন বসিরহাটের সাংসদ।

১৭ ফেব্রুয়ারি- ইনস্টাগ্রামে হালকা নীল রঙের লং ড্রেসে বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন নুসরত। সে দিনই সন্দেশখালিতে গ্রেফতার হন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শিবু হাজরা।

১৮ ফেব্রুয়ারি- নুসরত কোথাও কোনও পোস্ট করেননি।

১৯ ফেব্রুয়ারি- ইনস্টাগ্রামে দারুণ পোশাকে রিল পোস্ট করেন নুসরত। সে দিনই আধার কার্ড বাতিল নিয়ে গর্জে উঠেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও লেখেন তিনি। সেই চিঠি মমতা এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করলে নুসরত শুধু সেই চিঠিটি রিপোস্ট করেন।

২০ ফেব্রুয়ারি- রঙিন পোশাকে ছবি পোস্ট অভিনেত্রী-সাংসদের। সে দিন বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা সন্দেশখালি গিয়ে ‘খলিস্তানি’ বলে আক্রমণ করেন পাগড়ি বাঁধা পুলিশ আধিকারিককে। সে সব নিয়েও সমাজমাধ্যমে নীরব নুসরত।

২১ ফেব্রুয়ারি- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পোস্ট করেছেন নুসরত।

২৩ ফেব্রুয়ারি- একটি পার্টিতে কালো পোশাকে ইনস্টাগ্রামে আবেদনময়ী পোস্ট বসিরহাটের সাংসদের।

কিন্তু এই কদিনে সন্দেশখালি নিয়ে কোথাও কোনও বার্তা নেই নুসরতের। আর তাঁর এই উদাসীনতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তাহলে কি এবার লোকসভা ভোটে টিকিট পাবেন না বলে যেনে গিয়েছেন নুসরত? না হলে নিজের সংসদীয় এলাকা সন্দেশখালি নিয়ে তাঁর কোনও সন্দেশ নেই কেন! তবে, এলাকার অনেকেই বলছেন, তাঁরা এতে আশ্চর্য নন। কারণ, সাংসদের থেকে তাঁদের কোনও প্রত্যাশা নেই। তার থেকে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে তাঁরা অনেক বেশি ভরসা করেন।



Previous articleমন্দিরে বসানো যাবে না কর! কর্নাটক বিধান পরিষদের প্রশ্নের মুখে কংগ্রেসের ‘বিতর্কিত’ বিল
Next articleসুপ্রিম নির্দেশেই ছাড়পত্র পাচ্ছে না কল্যাণী এইমস, জানালো রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ