বাংলায় ৪২ আসনের “আবদার” মোদির! ভাষণে ব্যক্তি কুৎসা থেকে বিরত থাকলেন প্রধানমন্ত্রী

তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে একবারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক, মহুয়া মৈত্র কিংবা তৃণমূলের কোনও নেতা মন্ত্রীর নাম সরাসরি মুখে আনলেন না মোদি।

আরামবাগের মতো কৃষ্ণনগরের তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কৃষ্ণনগরের সভা মঞ্চ থেকে গোটা বাংলার জনগণকে তাঁর আবদার, এবার এ রাজ্য থেকে ৪২টি আসনে বিজেপিকে জেতানোর।পাশাপাশি তৃণমূলকে বিভিন্ন ইস্যুতে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন। যদিও ব্যক্তি কুৎসা থেকে বিরত ছিলেন তিনি।
একুশের বিধানসভা ভোটে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করে যে ব্যক্তি কুৎসার মেতে উঠেছিলেন, টানা দুদিনের জনসভায় সেই ছবি ধরা পড়ল না। বিধানসভায় ব্যক্তি কুৎসা করার জন্য বাংলার মানুষ বিজেপিকে কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছিল। তাই অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার অনেক সংযত ছিলেন মোদি। তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে একবারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক, মহুয়া মৈত্র কিংবা তৃণমূলের কোনও নেতা মন্ত্রীর নাম সরাসরি মুখে আনলেন না মোদি।

শনিবার কৃষ্ণনগরের জনসভাতেও ‘এইবার এনডিএ সরকার, ৪০০ পার’ বলে ফের হওয়া তুললেন মোদি। নির্বাচনী সভায় রাজ্যের জন্য ২২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কথাও ফের উল্লেখ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হরে কৃষ্ণ, জয় গৌরাঙ্গ নাম নিয়ে এদিন বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই মাটি শ্রীকৃষ্ণভক্তির পরম প্রচারক শ্রীচৈতন্যের জন্মভূমি। আমি কিছুদিন আগে দ্বারকায় সমুদ্রের নীচে তলিয়ে যাওয়া মন্দিরে পুজো করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি।

সরকারি অনুষ্ঠানের শেষে বিজেপির জনসভার উদ্দেশে যাওয়ার সময় রোড শো করেন তিনি। হুড খোলা গাড়িতে তাঁর দুপাশে ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীকে শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থান নদিয়ার স্মারক হিসেবে একটি প্রতিকৃতি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।

সুকান্ত মজুমদার স্বাগত ভাষণে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে একহাত নেন। তারপর শুভেন্দু বলেন, আপনারা এবারে কৃষ্ণনগর আমাদের দেবেন তো? তিনিও মহুয়া মৈত্রের প্রসঙ্গ তুলে ইভিএমে বদলা নেওয়ার ডাক দেন। কালী এবং লোকসভার পাসওয়ার্ড নিয়ে কৃষ্ণনগরের জনতাকে ভোটে বদলের ডাক দেন শুভেন্দু। মঞ্চ থেকে স্লোগান দেন, চোর ধরো জেল ভরো। কিন্তু মোদি নিজের ভাষণে একবারের জন্যও তৃণমূলের কোনও নেতামন্ত্রীর নাম মুখে আনেননি। শুধু তাই নয়, সিএএ নিয়েও একটি শব্দ খরচ করেননি মোদি। কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার পরিচালিত এই সভা ছিল মোদির। এই এলাকায় যেহেতু মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি বিরাট সংখ্যক মানুষের বসবাস, তাই সিএএ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বার্তা দেন, সেদিকে নজর ছিল সকলের। কিন্তু সিএএ প্রসঙ্গে একটি কথাও বললেন না প্রধানমন্ত্রী।

এদিন কৃষ্ণনগরে এসে বিজেপির জনসভায় ফের একবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে উঠে এল সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ অপরাধী ধরে না। অপরাধীরা ঠিক করে তারা কবে ধরা দেবে। টিএমসি মানে বদলে গিয়েছে। টিএমসি মানে তু, ম্যায় অউর করাপশনই করাপশন।”

রাজ্য সরকারকে নিশানা করে প্রধান মন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্রের সব উন্নয়নমূলক প্রকল্পে বাধা দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। স্বাস্থ্য, নারী বিকাশ, উজ্জ্বলা প্রকল্প আটকে রেখেছে। কারণ তৃণমূল ঘরে ঘরে জল প্রকল্পেও তোলাবাজি চালাচ্ছে। রাজ্যে ২৫ লক্ষ মনরেগা কার্ড তৈরি হয়েছে। যার কোনও অস্তিত্ব নেই। বাংলার টিএমসি সরকার কেলেঙ্কারিতে মাস্টার। এরা কেন্দ্রের সব প্রকল্পে নিজেদের সরকারের স্টিকার সেঁটে দেয়। এরা গরিবদের রেশন লুট করতেও পিছপা হয় না। বিজেপি সরকার মানুষের জন্য কাজ করে, এটা মোদির গ্যারান্টি। গ্রামে গ্রামে গিয়ে আগামী ১০০ দিন ধরে ঘরে ঘরে বলতে হবে, মোদিজি এসেছিলেন আপনাদের প্রণাম জানিয়েছেন।”

তৃণমূলের জমি মাফিয়াগির সত্ত্বেও কল্যাণীর এইমস নিয়ে তারা পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে রাজনীতি করছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য যোজনাকে আটকে রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এরা যুব সম্প্রদায়ের কাজের পরিপন্থী কাজ করে চলেছে। এখানে দুর্নীতিবাজ, তোলাবাজদের দাপট চলছে বলেও মন্তব্য করেন মোদি।

 

 

Previous article৩ দিনের মধ্যে চাইতে হবে ক্ষমা! খাড়গে-রমেশকে আইনি নোটিশ পাঠালেন গড়কড়ি
Next articleবিয়ের সকালে অনুপমকে ‘বিশেষ বার্তা’ প্রস্মিতার!