তফসিলি জাতি ও উপজাতির উপর সবচেয়ে বেশি অত্যাচার করেছে বিজেপি। সেই কারণেই বিজেপিকে একটি ভোটেও নয়। মঙ্গলবার, নজরুল মঞ্চে তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্মেলনে প্রচারাভিযানের সূচনায় বার্তা দিলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Bandyopadhyay)। ১৫ মার্চ থেকেই রাজ্যজুড়ে ‘তফসিলি সংলাপ’ প্রচারাভিযানে নামছে তৃণমূল। এদিন প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে যুক্তি দিয়ে উদাহরণ তুলে ধরে অভিষেক বলেন, কেন বিজেপিকে (BJP) একটি ভোটও দেওয়া উচিত নয়। তাঁর কথায়, ২০১৯ সালে জঙ্গলমহল-সহ এরাজ্যের আদিবাসী, তফসিলি জাতি ও উপজাতি, রাজবংশীদের ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করে ভোট নিয়েছে বিজেপি। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তাঁদের উন্নয়নের জন্য একটা বৈঠকও করেনি। এরপরই অভিষেকের বার্তা, এটা প্রতিবাদের ভোট, প্রতিরোধে ভোট, প্রতিশোধের ভোট।

এদিন উদাহরণ তুলে অভিষেক বলেন, জঙ্গলমহলের ৪টি লোকসভায় বিজেপি আপনাদের ভোট পেয়ে জিতেছে। কিন্তু ধরা যাক এই চারটি আসনে যদি ১০ হাজার বুথও থেকে থাকে, তার একটিতেও গত পাঁচ বছরে বিজেপি কোনও বৈঠক করেছে? করেনি। এরাজ্য থেকে বিজেপি ১৮ জন সাংসদ পেয়েছে। তারা আপনাদের জন্য গত পাঁচ বছরে কী করেছে? প্রশ্ন অভিষেকের।
অভিনব এই প্রচার অভিযানে দলের তফসিলি জাতি-উপজাতি ও আদিবাসী নেতৃত্বরা ১৫০টি বিশেষ ব্র্যান্ডেড গাড়িতে করে রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় পৌঁছে প্রচার করবেন। প্রতিটি এলাকার ৩-৫টি হটস্পটে আলোচনামূলক সভাও করবেন তাঁরা। তফসিলি জাতি-উপজাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে জনসংযোগ বাড়াতেই তৃণমূলের এই বিশেষ প্রচারাভিযান। এদিনের বৈঠকে আরও বেশি করে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৈঠক শেষে রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা জঙ্গলকন্যা বীরবাহা হাঁসদা বলেন, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের উপর বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে যেভাবে অত্যাচার হয়, তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের তফসিলি জাতি-উপজাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষকে একজোট হয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন তিনি। বিগত বছরগুলিতে উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল-সহ বিভিন্ন আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার উন্নয়নে তৃণমূল সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, আদিবাসীদের স্বাবলম্বী করতে সরকার কোন কোন প্রকল্প এনেছে, তা মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতেই এই প্রচার। বাংলার সমস্ত বিধানসভা এলাকায় আদিবাসীদের প্রতি বিজেপির নৃশংস ও খুনে মনোভাবের কথা তুলে ধরবেন দলের ৩৫০০ নেতৃবৃন্দ। আগামী দেড়মাস ধরে এই প্রচারে প্রায় ১.৫ কোটি তফসিলি ও আদিবাসী মানুষের কাছে পৌঁছে যাবেন তাঁরা।

বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের উপর কীভাবে অত্যাচর, ধর্ষণ, খুন-জখম চালানো হয়েছে গত ১০ বছরে তার রিপোর্ট কার্ড পেশ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে তফসিলি জাতিদের উপর অত্যাচার বেড়েছে ৪৩ শতাংশ, তফসিলি উপজাতিদের উপর অত্যাচার বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। এছাড়াও ওই রাজ্যগুলিতে প্রতিদিন ৬ জন তফসিলি জাতি মহিলা ধর্ষিত হয়েছেন। তফসিলি উপজাতির মহিলা ধর্ষিত হয়েছে প্রতিদিন ১৩ জন করে। অথচ সেখানে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁর কথায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এনসিআরবির রেকর্ড বলছে আইনশৃঙ্খলা ও মহিলা সুরক্ষায় দেশে সেরা হল পশ্চিমবঙ্গল, সেরা শহর হল কলকাতা। তফসিলি ভাইবোনদের প্রতি অভিষেকের আবেদন, কানে শুনে নয়, চোখে দেখে ভোট দিন। বিজেপি গায়ের জোরে আপনাদের টাকা আটকে রেখেছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কথা দিয়েছিল সেই টাকা দেওয়ার। তা দিয়েছে। নিজের নবজোয়ারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বাংলার মানুষর কাছ থেকে যে ফিডব্যাক আমি পেয়েছি, তাতে আপ্লুত। গোটা দেশে আদিবাসী, তফসিলি জাতি-উপজাতির মানুষরা বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাতে আপনাদের বিভ্রান্ত করে, ভুল বুঝিয়ে ভোট নিয়েছে। কিন্তু আপনাদের জন্য কিছুই করেনি। এরপরেই দলের নেতা-নেত্রীদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, মানুষের সঙ্গে আরও নিবিড় যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ নিতে হবে। নিজের ফোন নাম্বার তাঁদের দিয়ে আসবেন। প্রয়োজনে তাঁরা ফোন করবেন। সবসময় মানুষের পাশে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন- নজির গড়ল SSKM, ১৪ দিন বয়সে ছ’বার হার্ট অ্যা.টাক! জটিল অ.পারেশনের পর অবশেষে মায়ের কোলে ফিরল শিশু
