উচ্চতা ৩ ফুট, গায়ে অ্যাপ্রন গলায় স্টেথোস্কোপ! চেনেন এই ‘বামন’ ডাক্তারকে?

২৩ বছরের ছেলেটা কিন্তু হার মানেনি। লক্ষ্য স্থির রেখে লড়াই চালিয়ে গেছে। আজ তাঁর কাহিনী অনুপ্রেরণা দিচ্ছে কয়েক হাজার মানুষকে।

তিন ফুটের ডাক্তারকে চেনেন? এই প্রশ্নটা এখন নেট দুনিয়ায় অন্যতম আলোচ্য। আসলে চর্চিত যুবককে ভারতবর্ষের ইতিহাসের সব থেকে কম উচ্চতার ডাক্তার বলেই চেনে নেট দুনিয়া। নাম গণেশ বারাইয়া। হাইকোর্টের সঙ্গে লড়াই করে, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে মামলা লড়ে অবশেষে সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছেন এই যুবক। কানে স্টেথোস্কোপ দিয়ে নিত্যদিন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করছেন, নিয়মিত প্রেসক্রিপশন লিখছেন। এমনকি মানুষকে সুস্থ করে বাড়িও ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এক কথায় ডাক্তারের যা কর্ম সেই ধর্মই পালন করছেন তিনি। কিন্তু আজ থেকে কিছু বছর আগে ভারতের এই ব্যক্তিকে ডাক্তারি করতে বাধা দিয়েছিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল সায়েন্স। হাইকোর্ট বলেছিল মাত্র তিন ফুট উচ্চতা নিয়ে কেউ ডাক্তার হতে পারে না। ২৩ বছরের ছেলেটা কিন্তু হার মানেনি। লক্ষ্য স্থির রেখে লড়াই চালিয়ে গেছে। আজ তাঁর কাহিনী অনুপ্রেরণা দিচ্ছে কয়েক হাজার মানুষকে।

তিন ফুটের এই ডাক্তারে গণেশ বারাইয়ার বিষয়ে একটু বিস্তারিত জানানো যাক। সাধারণত এরকম উচ্চতা বিশিষ্ট মানুষকে ছোটবেলা থেকেই ‘বামন’ বলে টোন টিটকিরি করে সমাজ। গণেশও ব্যতিক্রম নন। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছিল তুমুল আগ্রহ। উচ্চমাধ্যমিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট করার পর ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো সর্বভারতীয় নিট (NEET) পরীক্ষা দেন। এখানেও মেলে দারুণ সাফল্য। MBBS পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেন গণেশ। তবে এই পর্বে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। তাদের বক্তব্য ছিল মাত্র ৩ ফুট উচ্চতা নিয়ে এমার্জেন্সি কেসের জটিল সমস্যার সমাধান কেউ করতে পারেন না। তাই সেক্ষেত্রে গণেশ ডাক্তার হতে পারবেন না। এবার শুরু হয় গণেশের জীবনের এক নতুন অধ্যায়। একদিকে স্বপ্ন পূরণের তাগিদ অন্যদিকে সমাজ আর সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই। স্কুলের প্রিন্সিপাল থেকে এলাকার কাউন্সিলর সকলের সঙ্গেই দেখা করেন গণেশ। তাঁদের নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন গণেশ এবং মন্ত্রীর নির্দেশ মতো গুজরাট হাইকোর্টে (Gujrat High Court) মেডিকেল কাউন্সিলের রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা হেরে যান কিন্তু অদম্য মানসিকতা তাঁকে অনুপ্রেরণা দেয় নিজের যোগ্যতার সব প্রমাণ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে। তাই করেন গুজরাটের যুবক। এরপরই ঐতিহাসিক রায় দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। যার ফলে গণেশের ডাক্তার হওয়া এবং পরবর্তীতে ডাক্তারি প্র্যাকটিস করার ক্ষেত্রে দেশের কোনও আইন বা নিয়ম বাধা হতে পারে না। এরপর গুজরাটের ভাবনগরের সরকারি মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হন গণেশ। বর্তমানে সেই কলেজেই এমবিবিএস ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করছেন তিন ফুট উচ্চতার ডাক্তার। গণেশ বলেছিলেন পৃথিবীর সমস্ত কম উচ্চতা বা মেয়েটি মানুষদের হয়ে তিনি এই লড়াইটা করেছেন এবং সাফল্য পেয়েছেন। বেঁটে বা বামন নয়, সকলে তাঁকে ডাকুক ‘ডাক্তারবাবু’ বলে, এইটুকুই ছিল চাওয়া।। তবে আজও হাসপাতালে তিন ফুট উচ্চতার ডাক্তারকে দেখে অনেকেই হকচকিয়ে যান, স্বীকার করছেন গণেশ। তবে এটা তাঁদের দোষ নয়। আসলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে যে আসল পরিবর্তন আসবে না সেটা ভালোভাবেই জানেন তেইশ বছরের ডাক্তার। তাই তার কাজ শেষ হয়নি, এখনও অনেকটা পথ লড়াই করা বাকি।

Previous articleজয়েন্ট পরীক্ষার মাঝেই পড়ল ভোট, উদ্বেগ পরীক্ষার্থী- অভিভাবকদের
Next articleকেজরিওয়ালকে ফের সমন পাঠালো এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট!