প্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরে চূড়ান্ত ক্ষোভ! ঘরে-বাইরে জেরবার পদ্ম শিবির

তৃণমূল যখন লোকসভা ভোটের জন্য নিজেদের প্রচারকে প্রায় মধ্য গগনের পৌঁছে দিয়েছে, প্রচার শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এখনও সব কেন্দ্রের প্রার্থী দিতে পারেনি গেরুয়া শিবির। আবার দুদফায় বঙ্গ বিজেপির (BJP) যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হয়েছে, তা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই শুরু হয়েছে তীব্র ক্ষোভ-বিক্ষোভ। কোথাও নেতার কেন্দ্র বদল নিয়ে সরব অনুগামীরা। কোথাও আবার টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি নেতা! যে সন্দেশখালিতে উস্কানি দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে বাংলার মুখ পোড়ানোর চেষ্টা করেছিল গেরুয়া শিবির, সেখানকার প্রার্থী নিয়ে এলাকাতেই তীব্র অসন্তোষ। সব মিলিয়ে ভোটের আগে এখন অন্দরের ক্ষোভ সামলে প্রার্থীদের হয়ে প্রচারের লোক পাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়ছে পদ্ম শিবিরের।

এখনও পর্যন্ত বঙ্গ বিজেপির সফলতম সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। কিন্তু দলবদলু বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) অঙ্গুলি হেলানে জেতা সিট মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দিলীপকে প্রার্থী করা হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর (Bardhaman Durgapur) কেন্দ্রে। আসন বদলের নেপথ্যে এটাই কারণ বলে দলের অন্দরে কানপাতলে শোনা যাচ্ছে। এস এস আলুওয়ালিয়ার জেতা আসন ধরে রাখা গেরুয়া শিবিরের পক্ষে এক কথায় অসম্ভব। সেই কারণেই দিলীপকে সে জায়গায় খেতে দেওয়া হয়েছে। কারণ হারলে মুখ পড়বে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব দিলীপ (Dilip Ghosh) অনুগামী বিজেপি নেতা দীপ্তমান সেনগুপ্ত। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “এক অবাঙালির ছেড়ে দেওয়া উচ্ছিষ্ট আসনে অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির লড়াকু নেতা দিলীপ ঘোষের ঠাই হোলো।” এই কথায় স্পষ্ট দলের অন্দরে বাঙালি-অবাঙালি ভেদাভেদও মাথাচাড়া দিচ্ছে। অবশ্য ভেদাভেদের রাজনীতি করাই যে রাজনৈতিক দলের মূল এজেন্ডা তাদের অন্দরে যে কোনও ইস্যুতেই বিভাজনের রাজনীতি- হবে সেটাই স্বাভাবিক।

বার বার প্রতিশ্রুতি আর তা পালন না করা পাহাড়ে এটাই পদ্ম শিবিরের ইমেজ। দার্জিলিঙেও (Darjeeling) সেই বিভাজনের রাজনীতি। বাংলা ভাগের টোপ দিয়ে ভোট নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন বিজেপি সাংসদরা। এবারও ভূমিপুত্র নন, বরং বিদায়ী সাংসদ রাজু বিস্তাকেই ফের দার্জিলিং কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে বিজেপি। আর তার প্রতিবাদ জানিয়ে লোকসভা ভোটে (Lok Sabha Election) নির্দল প্রার্থী হতে চান কার্শিয়াংয়ের বর্তমান বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা (Bishnuprasad Sharma)। দলের নীতিতেই ক্ষুব্ধ বিষ্ণুপ্রসাদ একাধিকবার একা আন্দোলনের পথে হেঁটেছেন, কিন্তু সুরাহা হয়নি। হলে এবার নির্দল হয়ে দাঁড়াবেন তিনি।

লোকসভা ভোটের আগে সন্দেশখালিতে উস্কানি দিয়ে বাংলার ইমেজ দেশের কাছে নষ্ট করার চক্রান্ত করেছিল গেরুয়া শিবির। স্থানীয়দের মদত দিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সামিল করেছিল। সেই বিক্ষোভের মুখ রেখা পাত্রকে বসিরহাটের প্রার্থী করেছে বিজেপি। স্থানীয়দের অভিযোগ, নাম ঘোষনার পরেই সম্পূর্ণ ভোলবদল রেখার। কয়েকদিন আগেও যাঁরা রেখার পাশে দাঁড়িয়ে সরক হয়েছেন, তাঁদেরকে পাত্তা না দিয়ে বাড়িতে তালা-চাবি দিয়ে এলাকা ছেড়েছেন পদ্মপ্রার্থী। আর তাতেই ক্ষোভে ফুঁসছে সন্দেশখালি। রবিবার এলাকা জুড়ে পোস্টার পড়েছে। তাতে লেখা, “বিজেপি প্রার্থী হিসাবে রেখা পাত্রকে চাইছি না। সন্দেশখালির আন্দোলনকারী মানুষরা রেখা পাত্রকে চায় না।”

অর্থাৎ দিকে দিকে প্রার্থী নিয়ে জেরবার গেরুয়া শিবির। একে তো প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দলবদলু, জীবনে রাজনীতির আঙিনায় পা না রাখা মুখকে ভোটে প্রার্থী করতে হচ্ছে। তার উপর সেই প্রার্থী নিয়ে চলছে তুমুল গোলমাল। সব মিলিয়ে এখনই গেরুয়া শিবিরের ঘাম ছুটছে। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছে, এখনও তো চৌঠা জুনের উত্তাপ বাকি আছে।




Previous article২১দিন পরে অনশনভঙ্গ, লাদাখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বার্তা সোনমের
Next articleকেজরি ইস্যুতে ন্যায়ের দাবিতে জার্মানির পর এবার আসরে আমেরিকা