‘ফ্যাসিস্ট রাজের বিরোধিতায় ‘No Vote To BJP’ স্লোগান ‘দেশ বাঁচাও’ গণমঞ্চের

ফ্যাসিস্ট আরএসএস এবং বিজেপি সারা ভারতবর্ষে এক দেশ, এক জাতি, এক ভাষা, এক খাদ্যাভ্যাস, এক সংস্কৃতি, এক ব্যবসায়ী, এক নেতার ধারণা আনার চেষ্টা করছে। তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনে ‘No Vote To Bjp’ স্লোগান তুলে ‘ফ্যাসিস্ট’ বিজেপিকে পরাজিত করার জন্য সর্বতভাবে চেষ্টা করার প্রস্তাব গ্রহণ করল ‘দেশ বাঁচাও’ গণমঞ্চ।

শনিবারের সভা থেকে কেন্দ্রের বিজেপিকে আক্রমণ করে ‘দেশ বাঁচাও’ গণমঞ্চের দাবি, আরএসএস-বিজেপি চক্র ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করছে। বিরোধী দলগুলিকে দুর্বল করার জন্য ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট-কে ব্যবহার করছে। বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালকে ব্যবহার করে দৈনন্দিন রাজ্য চালনায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

পাশাপাশি দেশের কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, কৃষক বিরোধী কৃষি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে সাতশোর বেশী কৃষক শহীদ হয়েছেন বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, প্রতিদিন কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে শ্রম কোড তৈরী করে শ্রমিকদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ন্যূনতম সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। অমৃত ভারত রেল প্রকল্পের নামে রেল হকার ও রেল বস্তি উচ্ছেদের জন্য ভয়ফর আক্রমণ নামিয়ে আনছে বিজেপি সরকার। বিভিন্ন শহরে সমস্ত হকারদের উপর ভয়ঙ্কর আক্রমণ নামছে। ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ধ্বংস করা হচ্ছে। অন্যদিকে বছরে দুকোটি বেকারের চাকরির ফানুস চুপসে গেছে কেন্দ্রের। বিগত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ভারতে বেকারত্ব সর্বাধিক। পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসসহ সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য আকাশ ছোঁয়া।

ভারতবর্ষের সমস্ত সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাথায় একজন করে সংঘ-সেবককে বসানোর চেষ্টা চলছে এবং বিচার ব্যবস্থার স্বাধিকারকে ধ্বংস করে তাকে সরকারের অধীনে আনার অপচেষ্টা চলছে। ভারত সরকার বা গভঃ অফ ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘মোদি সরকার’ ব্যবহার করা হচ্ছে, এমনকি সরকারি বিজ্ঞাপনেও। এটা আইনবিরুদ্ধ। ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি চূড়ান্ত মাত্রায় নিয়ে গেছে, যার শেষতম অস্ত্র ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বেল নামে অসংবিধানিক সি এএ চালুকরা। সমস্ত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গৈরিকীকরণ চলছে। বিজ্ঞান থেকেইতিহাস সমস্ত সিলেবাস পাল্টে দিয়ে শিক্ষার গৈরিকীকরণ চলছে। পছন্দের দু’চারজন ব্যবসায়ীর হাতে দেশের সমস্ত সম্পদ জলের দরে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। ইলেকটোরাল বন্ডের প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাওয়ায় বিজেপির ইডি-সিবিআই-কে সরকারী গুন্ডা হিসেবে ব্যবহার করার চক্র ফাঁস হয়ে গেছে। সেন্ট্রাল ভিস্তা বানিয়ে লোকসভায় বসার আসন দ্বিগুণ করা হয়েছে কারণ আর এস এস-বিজেপির পরিকল্পনা উত্তর প্রদেশ এবং হিন্দি বলয়ের অন্যান্য রাজাগুলির এম পি সিট বাড়িয়ে নেওয়া অন্যদিকে ডিলিমিটেশনের কথা বলে পশ্চিমবঙ্গ, কেরলা, তামিলনাড়ুসহ বহুরাজ্যের এম পি সিট কমিয়ে দেওয়া।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে চার হাজার কোটি টাকার ওপর জিএসটি তুলেও, পশ্চিমবঙ্গের জিএসটির ভাগ আটকে রাখছে। একশো দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। আবাস যোজনার টাকা দিচ্ছে না। বাংলার একটিও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে দিচ্ছে না। নির্বাচনের বহু আগে বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে স্কুল-শিক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে। এই কেন্দ্রীয় বাহিনী গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় শীতলকুচির মতো নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। সার্বিকভাবে বাংলার ওপর নানা দিক থেকে আক্রমণ চলছে।

ক্ষুধাসূচক, খুন, আত্মহত্যা, নারীনির্যাতন, কন্যা ফ্রণ হত্যা, অপহরণ, দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ ইত্যাদি বিষয়ে ভারত পৃথিবীর মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। ব্যাঙ্কের টাকা লুঠের প্রশ্নেও তাই, যে আঠাশজন ব্যবসায়ী দশ লক্ষ কোটি টাকা লুঠ করে ভারত ছেড়ে পালিয়েছে তাদের মধ্যে সাতাশজনই গুজরাটি। বিজেপি ভারতের ধর্ম-নিরপেক্ষ চরিত্র ধ্বংস করে হিন্দু রাষ্ট্র কায়েম করার চেষ্টা করছে। আগামী দিনে ভারতের সংবিধান টিকে থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যা আমাদর সবচাইতে বেশি শঙ্কিত করেছে।

শনিবারের এই সভা আর এস এস-বিজেপির সমস্ত অন্যায় অপকর্মের তীর বিরোধিতা করে গণমঞ্চ। পাশাপাশি বিজেপির ফ্যাসিস্ট রাজ কায়েম করার বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করার অঙ্গীকার ও আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সারা ভারতে বিজেপির সার্বিক পরাজয় নিশ্চিত করার জন্য যে রাজ্যে যে শক্তি বিজেপিকে হারাতে সক্ষম তাদের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য জনসাধারণের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে গণমঞ্চ।

আরও পড়ুন- অগাস্ট মাসের মধ্যে নতুন রূপে দেখা যাবে কালীঘাট মন্দিরকে: পুজো দিয়ে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

 

 

Previous article‘রবির আলোয় হেলেন’, উৎপল সিনহার কলম
Next articleনববর্ষ, ‘বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবসে’ রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর, পোস্ট অভিষেকেরও