পর্বতারোহণে চূড়ান্ত জেদ, কিন্তু সেই জেদের থেকেও বড় পিয়ালী বসাকের পরিণতিবোধ। কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় পৌঁছনোর আর মাত্র এক হাজার মিটার দূরত্ব, তবুও থেমে গেলেন। অসুস্থ শরীর আর প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ফিরে এলেন চন্দননগরের ‘পাহাড় কন্যা’।

গত ৭ এপ্রিল কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে বেরিয়েছিলেন তিনি। মূল লক্ষ্য ছিল তিব্বতের শিশাপাংমা শৃঙ্গ। কিন্তু চীনের অনুমতি না মেলায় পরিবর্তিত লক্ষ্য হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। পিয়ালীর এটি ছিল ষোলোতম অভিযান। এর আগেও তিনি জয় করেছেন এভারেস্ট, মাকালু, অন্নপূর্ণা, মানাসলু, ধৌলাগিরি, লোৎসে—সবই আট হাজার মিটার উচ্চতার।

তবে এবার পরিস্থিতি সহজ ছিল না। ক্যাম্প ফোর পর্যন্ত পৌঁছনোর পর শরীর খারাপ হতে শুরু করে। জ্বর, কাশি, অসুস্থ শরীর নিয়েই চলছিল যাত্রা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দেওয়া ওষুধে কিছুটা সাড়া মিললেও তার শেরপা দলের অসুস্থতা ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে পিয়ালী সাহসিকতার সঙ্গে ‘ফিরে আসার’ সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি বলেন, “সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু পাহাড় মানেই চ্যালেঞ্জ। কোথায় থামতে হবে, তা জানা থাকাটাও সাহসের কাজ। পাহাড় পরেও ডাকা দেবে। আগে শরীর সুস্থ থাকা দরকার।”


এই অভিযানে বেসরকারি একটি ব্যাঙ্ক পিয়ালীর পাশে দাঁড়িয়েছিল ২০ লক্ষ টাকার স্পনসর দিয়ে। গত এক বছরে পিয়ালীর জীবনে এসেছে ব্যক্তিগত শোকও—প্রয়াত হয়েছেন তার মা স্বপ্না বসাক এবং বাবা তপন বসাক। যাঁরা একসময় পিয়ালীকে পাহাড়ের হাত ধরিয়ে দিয়েছিলেন। পিয়ালীর কথায়, “ওনারা না থাকাটা আমাকে ভিতর থেকে দুর্বল করে দিয়েছে, তবে তাঁদের স্মৃতিই আমাকে এগোতে অনুপ্রাণিত করে।”


মাকালু অভিযানে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন পিয়ালী। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাসাধিককাল নেপালের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তবুও তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি পাহাড় জয়ের উদাহরণ তৈরি করেছে।
আজই নেপাল থেকে দেশে ফিরেছেন তিনি। আপাতত স্কুলে পড়ানো আর নিজের শরীরচর্চাতেই সময় দেবেন বলে জানালেন পিয়ালী। লক্ষ্য এখনও স্পষ্ট—বিশ্বের সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়। পাহাড়কে জয় করতে যেমন সাহস লাগে, তেমনি প্রয়োজন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। আর এই জায়গাতেই পিয়ালী বসাক আজকের তরুণ সমাজের অনুপ্রেরণা।

আরও পড়ুন – পুলিশের তৎপরতা, অবশেষে রাজস্থানের পথে উদ্ধার হওয়া ১১টি উট
_
_

_

_

_

_

_