গুজরাটের আহমেদাবাদের এয়ার ইন্ডিয়ার (Air India) ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার (Ahmedabad Plane Crash) একমাস পাঁচদিন পরেও ককপিটের দুই পাইলটের কথোপকথন ঘিরে রহস্যের জট কাটছে না। AAIB যে প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে তার থেকে জানা গেছে, এক জন পাইলট অন্য জনকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘কেন তুমি জ্বালানির সুইচটা বন্ধ করে দিলে?’’ অন্য জন তার উত্তরে বলছেন, ‘‘আমি কিছু বন্ধ করিনি।’’ এই কথোপকথনে অবশ্য কোনও পাইলটের নামের উল্লেখ নেই। কে কোন কথাটি বলছেন, চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, যে দুর্ঘটনা আর কোনভাবেই ঠেকানো যাবে না জেনেও কীভাবে শান্ত ছিলেন পাইলট? এটা কি আদৌ সম্ভব? নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনও কারণ আছে যা ইচ্ছাকৃত ভাবে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে? ভারতের তদন্তকারী সংস্থার প্রাথমিক রিপোর্ট পড়ে এমনই অনেক প্রশ্ন তুলছেন মার্কিন তদন্তকারীরা।

জুন মাসের ১২ তারিখে বেলা ১টা ৩৮ মিনিট। আহমদাবাদ বিমানবন্দরের রানওয়ে ছেড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১। গন্তব্য ছিল লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দর। কিন্তু উড়ানের কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সব শেষ।ককপিটের ভিতর ৩২ সেকেন্ডে সব রহস্য কেন্দ্রীভূত। প্রশ্ন ১, জ্বালানির সুইচ আচমকা বন্ধ করলেন কে? প্রশ্ন ২, অভিজ্ঞ পাইলট কী ভাবে অত শান্ত হয়ে বসে ছিলেন? প্রশ্ন ৩, তাহলে কি সবটা তিনি আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিলেন? ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB) সরাসরি কিছু না বললেও মার্কিন আধিকারিকদের মতে, এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং বিমান দুর্ঘটনার নেপথ্যে পাইলটদের ত্রুটির সম্ভাবনাই জোরালো হচ্ছে। AI 171 বিমানটিতে প্রধান ক্যাপ্টেন হিসাবে ছিলেন ৫৬ বছর বয়সী অভিজ্ঞ পাইলট সুমিত সবরওয়াল। ১৫,৬৩৮ ঘণ্টা বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। সঙ্গে ফার্স্ট অফিসার হিসাবে ছিলেন কো-পাইলট ক্লাইভ কুন্দর। জ্বালানির সুইচ বন্ধ করা নিয়ে কে প্রশ্ন করেছিলেন তা পরিষ্কার নয় ককপিটের কথোপকথনে। যেহেতু দুজনের কেউ বেঁচে নেই তাই সবটাই অনুমান সাপেক্ষ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জ্বালানির সুইচ অফ হয়ে গেছে জানার পরও কীভাবে শান্ত ছিলেন সুমিত?

দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত যে তথ্যপ্রমাণ মার্কিন আধিকারিকেরা খতিয়ে দেখেছেন তাঁর ভিত্তিতে নতুন রিপোর্ট প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ‘ফার্স্ট অফিসার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানটি চালাচ্ছিলেন। রানওয়ে ছাড়ার পরেই তিনি অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেনকে প্রশ্ন করেন, ‘কেন তুমি জ্বালানির সুইচ বন্ধ করে দিলে?’ ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক অবশ্য মার্কিন তত্ত্বকে ‘একতরফা’ বলে দাবি করেছে। বিমান বিশেষজ্ঞেরা অনেকেই একটা বিষয়ে একমত, জ্বালানির সুইচ নিজে থেকে বন্ধ হয়ে যেতে পারে না। আর এই সুইচ সাধারণত পাইলটরাই ব্যবহার করে থাকেন। বিমান চালু হয়ে গেলে জরুরি অবস্থা ছাড়া এই সুইচে হাত যাওয়ার কথা নয়। অন্তত সুস্থ অবস্থায় তো কোনও পাইলট এ কাজ করবেন না বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। তাহলে? এই রিপোর্ট আসার পর অনেকে আবার ক্যাপ্টেন সুমিতের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। মায়ের মৃত্যুর পর বিষন্নতা আর অবসাদে জেরে কি তিনি মারাত্মক কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন?পাইলটদের আত্মঘাতী পদক্ষেপ নতুন নয়। কিন্তু সুমিতের আগাগোড়া শান্ত মিতভাষী স্বভাবের কারণে এই তত্ত্ব আপাতত ধোপে টিকছে না। AAIB-র চূড়ান্ত রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সকলে।

–

–

–

–

–

–

–
–
–
–
–
–