যতক্ষণ প্রশ্ন না করে বিজেপির নেতারা যা বলছেন, তাকেই অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছে দেশের মানুষ, ততক্ষণ মানুষ খুব ভালো। আর প্রশ্ন করলেই তাঁরা লেফটিস্ট (Leftist)। যে মূর্খের স্বর্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চে কর্মসূচি করে বেড়ান কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder), তার থেকে জ্ঞানের আলোয় যেতেই উঠল একাধিক প্রশ্ন। দুর্গাপুর এনআইটি-তে (NIT, Durgapur) পড়ুয়ারা বিজেপি আমলে দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই মেজাজ হারালেন সুকান্ত। পড়ুয়াদের মুখ বন্ধ করতে কাউকে বসিয়ে দিলেন, আবার হুমকি দিয়ে কারো মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন।

দুর্গাপুর এনআইটি-তে পড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপচারিতায় কার্যত নিজের স্বরূপ প্রকাশ করে ফেললেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। রাজস্থানের আয়ুশ নামে এক পড়ুয়া প্রশ্ন তোলে, দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের জন্যই লড়াই করতে হয়, সেখানে বাস্তবের আত্মনির্ভরতা কীভাবে আসতে পারে। প্রশ্ন শুনে প্রথমেই হকচকিয়ে যান সুকান্ত। কিন্তু উত্তর দিতে পারেননি। বোঝানোর চেষ্টা করেন, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে নাকি মন্ত্রীর সামনে প্রশ্ন করাই মৌলিক অধিকার রক্ষিত হওয়ার প্রমাণ। অন্য কোনও দেশে এই মৌলিক অধিকারও (fundamental rights) না কি পাওয়া যায় না, মেজাজ হারিয়ে এমন দাবি করতে থাকেন সুকান্ত (Sukanta Majumder)।

তবে বিজেপির মন্ত্রীর এই দিক ঘোরানো উত্তরে দমে না গিয়ে ফের দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের জন্য রাস্তায় নেমে লড়াই কেন করতে হয়, সেই প্রশ্ন তোলে আয়ুশ। সেই প্রশ্নে সুকান্ত (Sukanta Majumder) দাবি করেন ওই পড়ুয়া বামপন্থী (Leftist) বলে। সেই সঙ্গে উত্তর খুঁজতে আসা পড়ুয়াটিকেই উত্তর দেওয়ার দাবি জানান। এই কথোপকথনের পরই পড়ুয়াকে রীতিমত হুমকির মেজাজে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে সমস্যার সমাধানের দাবি করেন। মন্ত্রীকে শান্ত করতে অন্যদিকে এনআইটি কর্তৃপক্ষ প্রশ্নকারী পড়ুয়ার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়।

যদিও এনআইটি-র মতো প্রতিষ্ঠানের পডুয়াদের যে এভাবে দমিয়ে রাখা যাবে না, তা প্রমাণ করে দেন আরও এক পড়ুয়া। আয়ুশের পরেই পীযূশ পাটোয়ারি নামে এক পড়ুয়া প্রশ্ন তোলেন সংরক্ষণ নিয়ে। তবে এবারে আর মেজাজ হারানোর মতো পরিস্থিতির দিকেই যাওয়ার ঝুঁকি নেননি সুকান্ত। সরাসরি উত্তর দেন যুব সমাজের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এখানে সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা নয়। যদিও গোটা প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত পড়ুয়ারা সুকান্তর এই উত্তরে উপহাসের হাসি হেসে ওঠে।

আরও পড়ুন: রোজভ্য়ালি আর্থিক মামলা: প্রাথমিক নথিতেই সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত হাই কোর্টের

বাস্তবে এনআইটি পড়ুয়াদের সামনে সুকান্ত মজুমদারের যে চেহারা বেরিয়ে এসেছে তা আগেই খুলে দেখিয়েছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ স্পষ্ট করে দিয়ে দাবি করেন, বিজেপি অসহিষ্ণু দল একটা। তার নেতা সুকান্ত মজুমদার। বাস্তব তুলছে পড়ুয়ারা তার উত্তর দিতে পারছেন না। তাই রেগে যাচ্ছেন। মেজাজ হারাচ্ছেন। আর সুকান্ত এই স্বভাব যে নিজের উত্তরসূরিদের থেকেই পেয়েছেন, তা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) প্রসঙ্গে টেনে আনেন কুণাল। তিনি বলেন, যে দলের প্রধানমন্ত্রী কোনও ইস্য়ুতে এতদিনেও একটাও প্রেস কনফারেন্স করে উঠতে পারেননি। প্রেস কনফারেন্স হলে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, জাতির প্রশ্ন, দেশের প্রশ্ন নিয়ে গিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। যে প্রধানমন্ত্রী একদিনও একটি সাংবাদিক বৈঠক করলেন না, তাঁর দলের নেতা প্রশ্ন করলে রেগে যাবেন, মাথা গরম করবেন এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার।

–

–

–

–