নিজের সিনেমার প্রমোশন করতে গিয়ে R বাংলা চ্যানেলে বসে সাক্ষাৎকার দিয়ে দলের মধ্যেই বিতর্কে জড়িয়েছেন দেব (Dev)। এই চ্যানেলটি ঘোরতর তৃণমূলবিরোধী। দলের তরফ থেকে এখানে কোনো বক্তা পাঠানো হয় না। তৃণমূলের (TMC) অভিযোগ পরিকল্পিতভাবে কুৎসামূলক উপস্থাপন করে এই চ্যানেল। এখন ‘রঘু ডাকাত’ প্রমোশনে দেব এখানে বসে আদিখ্যেতা করায় দলে ক্ষোভ তুঙ্গে।

সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ গুলিতে কর্মীদের পোস্ট চলছে, দলের সাধারণ কর্মীরা কুৎসার বিরুদ্ধে লড়বেন আর দলের সাংসদ পেশাগত সৌজন্যের নামে সেই কুৎসাকারীদের চ্যানেলে গিয়ে ব্যবসা প্রমোট করবে? সূত্রের খবর, দেব ধারাবাহিকভাবে এসব করে চলেছেন। যাঁরা এখন মুখ্যমন্ত্রী বা সরকারের তুমুল সমালোচক, সেই মিঠুন, সোহিনী, রুদ্রনীলদের সঙ্গে দেবের ঘনিষ্ঠতা। যে সোহিনী বলেছিলেন ‘ বাংলায় সন্তানের জন্ম দিতে চাই না’ ধরণের কথা, তাঁকে ছবিতে নেন দেব। প্রমোশনে এই কুৎসাকারীদের মদত দেন। আবার ছবির প্রচারে জেলায় জেলায় তৃণমূলের নেতা ও কর্মীদের ব্যবহার করেন। তাদের দিয়েই প্রচারের মঞ্চ হয়। হল ভরাতে পরোক্ষ মেকানিজম কাজ করে।

আবার সিনেমা রিলিজের মুখে R বাংলার মত তৃণমূলবিরোধী চ্যানেলে বসেন। এতে চ্যানেলের কোনো দোষের প্রশ্ন নেই। তারা তাদের লাইনে চলে। কিন্তু তৃণমূলের সাংসদ সেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থে গেলে কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। দেবশিবির বলে, উনি উদার। পাল্টা যুক্তি, দলের বাকিদের অন্যত্র চেনা পরিচয় নেই, এটা কে বলল? দেব যে উদারতার কথা বলছেন, সেটা বাকিরা দেখাতে শুরু করলে তখন কী দাঁড়াবে? যে বা যারা এখন সরকার বদলের ডাক দিয়ে কুৎসা করছে, দলের এমপি হয়ে তাদের সঙ্গে মাখামাখি করাটা কোন উদারতা? দেবশিবিরের কথায়, দেবকে (Dev) দলের দরকার। অন্য যুক্তি, দেব দলটা ছেড়ে দিয়ে দেখুক, ওই কাঠামোর সাহায্য ছাড়া ওর ছবির কী হাল হয়।

বাঘা যতীন ফ্লপ, ব্যোমকেশ শুধু ফ্লপ নয়, জঘন্যতম। ধূমকেতু আনতে গেলে শুভশ্রীকে ব্যবহার করতে হয়। প্রশ্ন উঠেছে, দেব এখন ইন্ডাস্ট্রিতে এক নম্বর ঠিকই। কিন্তু এক নম্বরকে ছবি মুক্তির আগে জেলায় জেলায় নেচে বেড়াতে হয় কেন? কেন তাঁর ছবির জন্য হলের শো নিয়ে অন্যদের সঙ্গে লড়তে হয়, কেন হলে ছুটে যেতে হয়? এধরণের বহু প্রশ্ন উঠছে। কথা উঠছে, দেব কি সত্যিই উদার? নাকি সকলের কাছে ভালো সাজতে চান? বিধায়ক হীরণ দেবকে আক্রমণ করলে তখন উদারতার সমান থিওরি থাকে কি? দেবকে সাহায্য করছে এসভিএফ, নিসপাল রানেরা। দেব সাংসদ এবং অভিনেতা মিশ্রিত প্রভাবশালী বলে হল মালিকরাও চাপে থাকেন। চেক বাউন্স করা ফেরেব্বাজও প্রযোজকের মুখোশ পরে ইদানিং ভেসে থাকতে চাইছে। তবে দেবের অনেক দিক আছে। কিন্তু দলে থেকেও নিজের স্বার্থে R বাংলায় বসাকে নিয়ে তৃণমূলকর্মীরা, যারা মাটি কামড়ে এখন কুৎসার বিরুদ্ধে লড়ছে, তারা ক্ষুব্ধ। বিধানসভা ভোটের আগে দেব যদি এইভাবে কখনও মিঠুন, কখনও সোহিনী, কখনও R বাংলা নিয়ে আদিখ্যেতা করেন, তাহলে কথা উঠবেই, এমন উদারমনা চৈতন্যসম মানুষ, কষ্ট করে তৃণমূলের সাংসদপদটা বয়ে বেড়াচ্ছেন কেন? ভোট এলেই ‘আমি আর নেই’ নাটক, তারপর একবার সাধিলেই খাইব, কতদিন চলবে? দেবের মত স্টারকে নিশ্চয়ই তৃণমূলের দরকার। কিন্তু তৃণমূল এবং বিশেষভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াটাও দেবের সিনেমার জন্য খুব দরকার, এই বাস্তবটা মেনে নেওয়াই ভালো। দেব জনপ্রিয়, কিন্তু সেই মেকনাজিমের অন্য ফ্যাক্টরগুলো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

–

–

–

–

–
