বিদেশের রাষ্ট্রপ্রধান, প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানদের সামনে মাওবাদী দমন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচার চালালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। শুক্রবার রাতে NDTV ওয়ার্ল্ড সামিট ২০২৫-এর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০৩ জন মাওবাদী (Maoist) আত্মসমর্পণ করেছেন। একে ঐতিহাসিক সাফল্য আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মত তার সরকার দেশীয় সন্ত্রাসবাদের (Terrorism) বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

নিজের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জানান, “গত ৫০-৫৫ বছরে হাজার হাজার মানুষ মাওবাদী সন্ত্রাসে প্রাণ হারিয়েছেন। নকশালরা স্কুল-হাসপাতাল (School-Hospital) তৈরি করতে দিত না। প্রতিষ্ঠান উড়িয়ে দিত। চিকিৎসকরা যাতে গ্রামে যেতে না পারেন, তার জন্য হামলা করত।যুবসমাজের প্রতি এক ভয়ঙ্কর অন্যায় ছিল মাওবাদী সন্ত্রাস ।” পথভ্রষ্ট যুবক প্রজন্মকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছে বলেও জানান নরেন্দ্র মোদি।

এদিনের সামিটে ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হারিনি আমারাসুরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট এবং ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক (Rishi Sunak)। মাওবাদী প্রসঙ্গে মোদির মন্তব্য, “এরা সাধারণ জনতা নয়। এদের মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল। আত্মসমর্পণের সময়ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “আগে খবর আসত, গাড়ি বিস্ফোরণে বা গুলির লড়াইয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের মৃত্যু নিয়ে। আজ বস্তারে যুবকেরা ‘বস্তার অলিম্পিকস’ আয়োজন করছে। এটাই পরিবর্তন। আজ তারা দীপাবলি উদযাপনের সুযোগ পায়।” তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের ধারাবাহিক চেষ্টায় গত ১০ বছরে দেশে মাওবাদী প্রভাবিত জেলার সংখ্যা ১২৫ থেকে ১১-এ নেমে এসেছে।

এরপরেই মাওবাদী দমনে কংগ্রেসের অক্ষমতার অভিযোগ করেন মোদি। তাঁর মতে, কংগ্রেস আমলে এমন “আর্বান নকশাল” ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছিল, যার ফলে মাওবাদী হিংসার খবর দেশবাসীর কাছে পৌঁছত না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা বিশাল সেন্সরশিপ ব্যবস্থা চালু ছিল। যারা কংগ্রেস (Congress) শাসনে সমৃদ্ধ হয়েছিল, যারা প্রতিষ্ঠানের দখল নিয়েছিল এবং নিজেদের ‘আর্বান নকশাল’ বলত, তারা মাওবাদী সন্ত্রাসের উপর পর্দা টেনে রাখত।” কয়েকদিন আগেই দিল্লিতে মাওবাদী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকজন। সাংবাদিক সম্মেলন করেন। মোদি বলেন, “কেউ পা হারিয়েছে, কেউ হাত, কেউ চোখ। তারা সাত দিন ধরে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছে তাদের কথা শুনতে। কিন্তু কেউ তাদের কণ্ঠস্বর শোনেনি। কংগ্রেস আমলে এই আলোচনা পুরোপুরি দমন করা হয়েছিল।”

প্রধানমন্ত্রীর (Prime Minister) কথায়, “যেখানে এতদিন মৃত্যু ভয় ছিল, সেখানে এবার আলোর উৎসব হবে। অনেক মা প্রথমবার ২৫ বা ৫০ বছর পর আলোর উৎসব দেখবেন। তেরঙা উড়বে, আনন্দের প্রদীপ জ্বলবে।”

আরও পড়ুন: আত্মসমর্পণ ২০৮ মাওবাদীর, একসঙ্গে ‘রেকর্ড’ অস্ত্র সংবরণ ছত্তিশগড়ে

মাওবাদীদের উপর বাংলায় আগেই রাশ টেনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর আমলে জঙ্গলমহল সহ একসময় মাওবাদী প্রভাবিত অঞ্চলগুলি শান্তিতে রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি আত্মসমর্পণ করা মাওবাদীদের বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা, পরিবারের জন্য আর্থিক প্যাকেজ দিয়ে তাঁদের মূল স্রোতে ফিরে আসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মমতা। বিশেষজ্ঞমহলের মতে, এই মডেল না মানলে মাওবাদী সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

–

–