অভিজিৎ ঘোষ
মেসিকে কেন্দ্র করে যুবভারতীর ঘটনায় অনেকে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে (Sports Minister Arup Biswas) টার্গেট করছেন। কয়েকটি মিডিয়া নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে এই কাজে নেমেছে। এর পিছনে রয়েছে গভীর চক্রান্ত। সুদূর দিল্লির প্রভাব অস্বীকার করা যায় না।
যাঁরা অরূপকে (Sports Minister Arup Biswas) দোষারোপ করছেন, তাঁরা কি জানেন আসল ঘটনা? না জেনেই গল্পের গরুকে গাছে তোলার চক্রান্ত চলছে। মেসি আসার আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার দুপুর একটা নাগাদ ক্রীড়ামন্ত্রী যুবভারতীতে ঢোকেন। ডেকে পাঠান শতদ্রুকে। মেসির অনুষ্ঠানের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানার জন্যই তলব করা হয়েছিল। সাহায্য কিংবা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে চেয়েছিলেন। বিরাট আয়োজন। প্রচুর মানুষ আসবেন। আসবেন মেসি-শাহরুখরা। তাই তলব। কিন্তু ক্রীড়ামন্ত্রীকে চার ঘণ্টা স্টেডিয়ামে বসিয়ে রেখে আসেননি শতদ্রু দত্ত (Shatadru Dutta)। তিনি তখন কার্ড দিয়ে আমন্ত্রণে ব্যস্ত। শেষে ক্রীড়ামন্ত্রীকে ফোন করেন শতদ্রু।বলেন, চিন্তা করবেন না, এভরিথিং ইজ ডান। কাল দারুন অনুষ্ঠান হবে।

ক্রীড়ামন্ত্রীর এরপর কি কিছু করার থাকতে পারে? কোনও কারণ ছাড়াই শতদ্রুকে ‘বেচারা’ বানিয়ে ক্রীড়ামন্ত্রীকে টার্গেট করা শুরু। লক্ষ্য স্পষ্ট এবং চক্রান্ত গভীরে। দিল্লি বিজেপির চক্রান্তে কি শতদ্রুও অংশীদার? উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

প্রথমত বলে রাখি, যুবভারতীর অনুষ্ঠানে অরূপ বিশ্বাস আমন্ত্রিত ছিলেন, তাই গিয়েছিলেন। তিনি যে মেসির সঙ্গেই থাকবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে এত উষ্মা কিসের জন্য? শুভেন্দু-সুকান্ত আমন্ত্রণ না পাওয়ায় গায়ে বোধহয় ফোস্কা পড়ছে। যারা মারাদোনার কলকাতায় আসার কথা উদাহরণ তুলে বলছিলেন, তাদের জানিয়ে রাখি, সেই সময়ে মারাদোনার সঙ্গে এঁটুলির মতো সারাক্ষণ লেগেছিলেন তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। এমনকী শমীক লাহিড়ীও। যাদের দেখে ফুটবলের (Football) রাজপুত্র মঝে মাঝেই চমকে উঠেছিলেন! এত দ্রুত ভুলে গেলে চলবে?

দ্বিতীয়ত, মাঠে কারা থাকবেন, তা ঠিক করে আয়োজকরা। মাঠে সারাক্ষণ ১০০ জনের দল ঘুরে বেড়িয়েছিল কেন, তার জবাব দিতে হবে আয়োজকদের। অরূপ কাউকে ভাড়া করে তো আনেননি! শোনা যাচ্ছে আয়োজক কর্তা শতদ্রু দত্ত মেসির সঙ্গে থাকা কিংবা তার সঙ্গে ছবি তুলতে বিরাট টাকা নিয়েছেন। ফলে জবাব তো তাঁকেই দিতে হবে। শনিবার মেসি মাঠে থাকাকালীন বহু অচেনা মুখ দেখা গিয়েছে। এর কারা? শতদ্রুকে জবাব দিতে হবে।

তৃতীয়ত, মাঠের মধ্যে প্রচুর সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সনকে দেখা গিয়েছে। কেন? গোটা অনুষ্ঠানের টেলিকাস্ট রাইটস ছিল সোনির। বাকিরা তাহলে সেখানে কী করছিলেন? কারা ঢুকতে দিয়েছিলেন তাদের মাঠের মধ্যে?

চতুর্থত, মেসির কয়েকজন দেহরক্ষী ছাড়া এত পুলিশ পার্সনই বা মাঠের মধ্যে কেন ছিলেন? তারা ভিতরে থেকে মাঠের নিরাপত্তা নিয়ে মাথা ঘামালে, মাঠের মধ্যে ভিড় কমত, জলের বোতল কিংবা চেয়ার ভাঙাও সম্ভবত রুখতে পারতেন।

পঞ্চমত, কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, মেসি রেগে গিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। ভুল কথা। মেসিকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে মাঠ থেকে লোক বের করার কথা হয়েছিল। ফের মাঠে আসার কথা ছিল মেসির। তিনি না এসে সোজা হোটেল থেকে এয়ারপোর্টে গেলেন কীভাবে? যেহেতু তাঁর সঙ্গে শতদ্রু ছিলেন, এবং তিনি আয়োজক, তাই জবাব তাঁকেই দিতে হবে। কেন অবানছিতদের মাঠ থেকে সরিয়ে মেসিকে দ্বিতীয়বার মাঠে ফেরানো হল না!

ষষ্ঠত, মন্ত্রীদের লোকজনেরা নাকি ভিতরে ঘোরাফেরা করছিল, অভিযোগ করছিলেন বিরোধী দলনেতা। প্রশ্ন, শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বিধায়ক অশোক দিন্দা সপুত্র মাঠের মধ্যে কী করছিলেন?
আরও খবর: অকারণে মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে আক্রমণ কারা করছে? কেন করছে?

সপ্তমত, গোটা আনুষ্ঠানে আয়োজকদের কোনও ভলান্টিয়ার চোখে পড়েনি। তাহলে গোটা অনুষ্ঠান কি একাই শতদ্রু নিয়ন্ত্রণ করছিলেন? এটাই যদি বাস্তব হয়, তাহলে সেই অনুষ্ঠানে গণ্ডগোল হওয়াটা তো স্বাভাবিকই। এই কারণেই তো ক্রীড়ামন্ত্রী শতদ্রুর সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলেন।
অষ্টমত, রাজ্য সরকার সারা বছর দেশের সেরা সেলিব্রেটিদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান করে। কবে কোথায় গণ্ডগোল হয়েছে? একটা উদাহরণ দেখাতে পারবেন? তাহলে? মেসিকে আনার ক্রেডিট নিতে গিয়ে গোটা আয়োজনটাকে ডুবিয়েছেন শতদ্রু দত্ত। মাঠে সেই সময় অরূপ থাকায় তাকেই টার্গেট করা হচ্ছে। আর, হঠাৎ ধোওয়া তুলসি পাতা হয়ে গেলেন শতদ্রু দত্ত! এটা যে গভীর চক্রান্ত, তা কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে।


