বাম আমলে, 1982-র 30 এপ্রিল, বালিগঞ্জ বিজন সেতুতে 17 আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনার তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট আজ সোমবার জমা পড়বে নবান্নে। ঘটনার 37 বছর পর রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে এই রিপোর্ট তুলে দেবেন তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অমিতাভ লালা।

আনন্দমার্গী হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কমিশন তৈরি হয়েছে 7 বছর আগে। সেই তদন্তের রিপোর্ট সরকারের কাছে কেন এতদিন পর জমা পড়ছে, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। তদন্ত রিপোর্টে কমিশন ঠিক কী সুপারিশ করেছে, তা এখনও জানা যায়নি। তবে রাজনৈতিক বাধ্যকতার কারনে
রিপোর্টে উল্লেখযোগ্য কিছু সুপারিশ না থাকার সম্ভাবনাই প্রবল।
বিজন সেতুতে 17 আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় সরাসরি অভিযোগের আঙুল উঠেছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। তখন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। সমালোচনার চাপে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমরেন্দ্রনাথ বসুকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছিলেন তিনি। এই ঘটনাকে ‘জনরোষের প্রকাশ’ বলে উল্লেখ করে ওই কমিশন জানিয়েছিল, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও প্রত্যক্ষ যোগ নেই। আনন্দমার্গীরা অবশ্য সে কথা মেনে নেননি। প্রতিবাদে মার্গীরা আজও দিনটিকে ‘দধীচি দিবস’ হিসেবে পালন করেন।

সেই ঘটনার 29 বছর পরে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দমার্গী হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফের এক বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গড়েন। প্রথমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সন্তোষ কুমার ফৌজদারকে। তিনি তা নিতে অস্বীকার করায় অন্য এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অমিতাভ লালাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।
2012 থেকে সেই তদন্ত শুরু হয়েছে। কমিশনের সদস্য, বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মী ইতিমধ্যেই অবসর নিয়েছেন, কিন্তু তদন্তের কাজ তবুও হয়নি।
নবান্ন শেষবার 2019-এর 1 এপ্রিল পর্যন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতে পারেনি কমিশন। অবশেষে আজ এই রিপোর্ট জমা পড়বে নবান্নে।
জানা গিয়েছে, কমিশন মোট 61 জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। অনেক সাক্ষী ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন। সাক্ষ্য দিয়েছেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন বাম-মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, খুন হওয়া ওসি গঙ্গাধর ভট্টাচার্যের স্ত্রী মমতা ভট্টাচার্য, ঘটনার দিনে সিপিএম দলে থাকা সমীর পুততুণ্ড, প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, 24 পরগনার তৎকালীন জেলাশাসক রাণু ঘোষ, অতিরিক্ত জেলাশাসক শের সিং, প্রাক্তণ সিপিএম কাউন্সিলর স্বপন চক্রবর্তী ওরফে বাবলু-সহ 61 জন।

আনন্দমার্গী সন্ন্যাসী তথা সংগঠনের আইন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আচার্য কৃষ্ণেশ্বরানন্দ অবধূত সোমবার বলেছেন, “আমরাও শুনেছি আজ রিপোর্ট জমা পড়বে। রিপোর্টের সুপারিশ দেখার পর পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে”।
অভিশপ্ত 1982-র 30 এপ্রিল আনন্দমার্গের সঙ্গে যুক্ত যাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো, তাঁরা হলেন :-


■ অবধূতিকা আনন্দপ্রচেতা আচার্য


■বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী সন্ন্যাসিনী হাসি দেবী

■ আচার্য বীরেন্দ্র ব্রক্ষচারী

■ আচার্য ভেঙ্কটেশ্বর অবধূত

■ আচার্য আর্তসেবানন্দ অবধূত

■ আচার্য গিরীশানন্দ অবধূত

■ আচার্য সূত্রেশ্বরানন্দ অবধূত

■ আচার্য ভবেশ্বরানন্দ অবধূত
■ আচার্য প্রশিবানন্দ অবধূত
■ আচার্য কমলেশানন্দ অবধূত
■ আচার্য কৃপাশিবানন্দ অবধূত
■ আচার্য আদি শিবানন্দ অবধূত
■ আচার্য জগমোহন ব্রক্ষচারী
■ আচার্য মুকুল ব্রক্ষচারী
■ আচার্য সুব্রত ব্রক্ষচারী
■ আচার্য ধ্রুবজ্যোতি ব্রক্ষচারী
■ রামরঘুবর আগরওয়াল