Friday, May 16, 2025

চৈতন্য, দিলীপ এবং বদলা, কৃশানু মিত্রের কলম

Date:

Share post:

কৃশানু মিত্র

দিলীপ ঘোষ যেদিন প্রথমবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি হয়েছিলেন, সেদিন তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অনেক নামের সাথে একটি নাম উল্লেখ করেছিলেন, # চৈতন্য_মহাপ্রভু । বাংলার রাজনীতিতে অনেক নাম নিয়ে কথা হয়, অনেক মনীষির লেগ্যাসিকে ব্যবহারের চেষ্টা হয়, কিন্তু শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর নাম সচরাচর সেই ভাবে নেওয়া হয় না। চৈতন্য মহাপ্রভুর মতো জননেতা ভারতবর্ষে খুব একটা কেউ হননি (জননেতা বলতে আজ আমরা যা বুঝি আক্ষরিক অর্থে ঠিক তাই)। চৈতন্য মহাপ্রভু কোনও রাজপুত্র, রাজা বা রাজ্য জয় করা সম্রাট ছিলেন না। কোনও নতুন ধর্মের প্রবর্তক বা ধর্ম প্রচারক ছিলেন না। চৈতন্য মহাপ্রভু ছিলেন একজন প্রকৃত জননেতা (আজ যেমন আদর্শ নেতৃত্বর কামনা করি)। সেই যুগের সমাজ জীবনের প্রতিটি আঙ্গিকে ছিল তার প্রশ্নাতীত কর্তৃত্ব। ধর্ম, সংস্কৃতি, রাজনীতি, প্রশাসন, রাজতন্ত্র, সব বিষয় তিনিই ছিলেন মানুষের অভিভাবক, তিনিই ছিলেন শেষ কথা। আর চৈতন্য চেতনার মূলই হল # প্রেম, # নিবিড়_প্রেম , ইংরাজিতে যাকে বলে Intense Love। কিছু ধার্মিক মতবাদের বাইরে মূলধারার রাজনৈতিক মতবাদগুলির মধ্যে খোলাখুলি হিংসাকে মান্যতা দেয় শুধু কমিউনিজম বা কমিউনিস্টবাদ।

বিজেপি যখন ছাড়ি তখন পার্টির সাথে আমার মতবিরোধের অনেক কারণের মধ্যে প্রধান ছিল বাংলার বিজেপি ও সংঘ পরিবারে বাঙালিকরণের অভাব ও সংগঠনে কমিউনিস্টদের বারবারন্ত। পার্টি ও পরিবারে তৃণমূল স্তরে মুড়িমুরকির মত কমিউনিস্টদের ঢুকতে দেওয়া এবং তাদের লাগামহীন ক্ষমতায়ন। কমিউনিস্টদের মধ্যে তথাকথিত শিক্ষিত আর ভদ্রলোক থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে চৈতন্য মহাপ্রভুর এই নিবিড় প্রেম বা # intense_love এর তত্বকে মান্যতা দেওয়া বা বোঝার লোক নেই বললেই চলে। ওরা মার, দখল, পাল্টা দখল, নিকেষ আর বদলার মতো তত্ত্ব যত সহজে বোঝেন, নিবিড় প্রেমের তত্ব বোঝেন না। আর প্রতিনিয়ত ‘মার কা বদলা মার’, দখল আর বদলার জন্য যে মানসিকতা বা সামাজিক ব্যবস্থার প্রয়োজন, সেটার জন্য বাঙালি জাতি বা বাঙালি সমাজ কখনই প্রস্তুত নয় বলে আমার মনে হয়। আমরা কি, ছেলে – মেয়ে, গরিব – ধনী – মধ্যবিত্ত, সাধারণ – অসাধারণ নির্বিশেষে কুর্দি জাতির মত লড়তে প্রস্তুত? কারণ বদলা এক দিকে হাঁটে না, বদলা উল্টো দিকেও হাঁটে। আমাদের কুর্দি সমাজের মত ‘পষমের্গা’ বাহিনী নেই, আর দিনরাত বছরের পর বছর লড়াই চালানোর মানসিকতাও নেই। এক ঘন্টা আলো না থাকলে আমরা ছটফট করি, এক দিন আলো না থাকলে আমরা বিক্ষোভ দেখাই। কল খুললে জল না এলে আমরা চোখে অন্ধকার দেখি। তাই যে বদলার কথা দিলীপ ঘোষ বলে সেই বদলার সাথে বাংলা একাত্ম নয়। যখন কেউ বলে, # বদলা_নয় – # বদল_চাই , তখন সেটা তার দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ। এটাই আমাদের দেশে, আমাদের সমাজে ব্যবহারিক বা practical। দিলীপবাবু যা বলছেন সেটা হল বিজেপির পূর্ণ সিপিএমিকরণ।

এই বিজেপি সিপিএম-এর মতো বদলার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। এই বিজেপি চৈতন্য মহাপ্রভুকে কাপুরুষ মনে করে। এই বিজেপির পথ কখনই বাংলার পথ নয়। ধন্যবাদ দিলীপ ঘোষ, সেই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করার জন্য।

spot_img

Related articles

তৃণমূলের অভিযোগেই সিলমোহর! ভোটার তালিকা থেকে বাদ ৭,৮০০ ভুতুড়ে কার্ড 

তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ ও চাপের পর অবশেষে বড় পদক্ষেপ নিল নির্বাচন কমিশন। রাজ্যে প্রায় ৮ হাজার ভুতুড়ে ভোটার...

ভারত-বিরোধী তুরস্ককে ঢালাও সামরিক সাহায্য আমেরিকার

পরিকল্পিতভাবেই যেন তথাকথিত 'বন্ধু' মোদিকে বেইজ্জত করতে নেমেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পহেলগাঁও কাণ্ড ও ভারতীয় সেনার অপারেশন...

বিকাশভবনে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা চাকরিপ্রার্থীদের, আহত পুলিশ

বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারা শিক্ষকদের ঘেরাও অভিযানের নামে বিশৃঙ্খলা। ভেঙে ফেলা হয় বিকাশ ভবনের গেট। পাশাপাশি পুলিশ ও...

হারানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লাখ টাকা-সহ ব্যাগ বিশেষভাবে সক্ষমকে ফেরালেন ওসি সৌভিক

পথচারী এবং যাত্রীদের সব সময় পাশে থাকে কলকাতা পুলিশ। তারই আরেক উদাহরণ বৃহস্পতিবার সন্ধেয়। হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ডের...