Monday, November 3, 2025

সংশোধনাগারে জঙ্গিদের কাছে স্মার্টফোন সরবরাহ করছে কারারক্ষীরা !

Date:

Share post:

খায়রুল আলম, ঢাকা

দেশের বিভিন্ন সংশোধনাগারে আটক জঙ্গিদের সঙ্গে রয়েছে একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ। আর এদের সহায়তা নিয়ে

কারাবন্দি অবস্থায় তাদের হাতে চলে আসছে স্মার্টফোন। রয়েছে ইন্টারনেটও। ইচ্ছেমতো তারা যোগাযোগ করছে বাইরে। ডাকাতি করা অর্থের ভাগ আসছে যথাসময়ে। এমন কী মধু ও খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য ভেতরে নিয়ে রীতিমতো ব্যবসাও করছে কারাবন্দি জঙ্গি নেতারা।

আর এসব হচ্ছে দেশের সবচেয়ে হাইসিকিউরিটি সংশোধনাগার কাশিমপুরে। কারাবন্দি জঙ্গিদের এই বেআইনি সুবিধা দিচ্ছেন খোদ একশ্রেনীর অসাধু কারারক্ষী।

 

সোমবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর পূর্ব তেজতুরী বাজার এলাকা থেকে দুই জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম। আসিফুর রহমান আসিফ (২৬) ও পিয়াস শেখ (২৮) নামে এই দুই জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) রিমান্ডে আনা হয়।

 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা জানান, গ্রেফতার দুই জঙ্গির কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়া আরও তথ্য জানতে তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর পূর্ব তেজতরী বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসিফ ও পিয়াসকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল, কয়েকটি মোবাইল ও ৩৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রেফতার আসিফ ও পিয়াস জেএমবির সক্রিয় সদস্য। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেলে বন্দি জেএমবির পৃষ্ঠপোষক ও শীর্ষ নেতা আবু সাঈদ, আব্দুল্লাহ আল তাসনিম, আল-আমিন ও ফয়সালের সঙ্গে নিয়মিত মোবাইলে যোগাযোগ করতো তারা। শীর্ষ এই জঙ্গি নেতাদের নির্দেশে জেএমবির সক্রিয় সদস্য আনোয়ার আলী ওরফে হৃদয়, হাফিজুল শেখ ওরফে সকাল, আবু সালেহ, সোহেলসহ অজ্ঞাতনামা জঙ্গিরা ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে। এই অর্থের একটি অংশ জেলখানায় কর্তব্যরত কতিপয় সদস্যদের মাধ্যমে কারাবন্দি শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠাতো। অবশিষ্ট টাকা হৃদয়, তানজিল বাবু ও সকালের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত সংগঠনের নেতাকর্মী ও জেলে থাকা বন্দিদের পরিবারের কাছে পাঠাতো।

গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আসিফের কাছে  দুটি টাকার বান্ডিল পাওয়া গেছে। ২০ হাজার টাকার একটি বান্ডিলের ওপরে নাহিদ তাসনিম, কাশিমপুর এবং ১৫ হাজার টাকার একটি বান্ডিলের ওপরে আল-আমিন, কাশিমপুর লেখা রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসিফ জানিয়েছে, এসব অর্থ ডাকাতি করা। এই টাকা কাশিমপুর জেলখানায় কর্তব্যরত একজন কারারক্ষীর মাধ্যমে ভেতরে নাহিদ তাসনিম ও আল-আমিনের কাছে পাঠানোর কথা ছিল। এর আগেও ডাকাতি করা অর্থ তারা একাধিক কারারক্ষীর মাধ্যমে কারাগারের ভেতরে পাঠিয়েছে।

গয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসিফ জানিয়েছে, সংগঠনের কারাবন্দি শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে ডাকাতি করা অর্থ দিয়ে তারা ‘হালাল অ্যান্ড ফ্রেশ’ নামে একটি খাদ্যপণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল। কারাগার থেকে তাসনিম, সাঈদ, ফয়সাল ও আল-আমিন তাকে বিভিন্ন লোকজনের নম্বর দিতো। সেখানে সে চাহিদা মতো মধু ও খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য দিয়ে আসতো। শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ মতো একাধিকবার সে কাশিমপুর কারাগারেও খেজুর ও মধু সরবরাহ করেছে।

Advt

দীর্ঘদিন জঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করে আসা কাউন্টার টেরোরিজমের একজন কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল যে কাশিমপুর কারাগারে তাসনিম, সাঈদরা রীতিমতো বাণিজ্য করে অর্থ সংগ্রহ করছে। কারাবন্দিদের কাছে এবং তাদের পরিবারের কাছে তাসনিম মধু বিক্রি করতো। আসিফের গ্রেফতারের পর আগে থেকে পাওয়া তথ্যের সত্যতা পেয়েছেন তারা।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজমের একজন কর্মকর্তা জানান, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে যারা ডাকাতির নির্দেশনা দিয়েছে, তারা শীর্ষ জঙ্গি নেতা। এরমধ্যে আবু সাঈদ ২০০৫ সালে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। সে ২০০৭ সালে ভারতে পালিয়ে গিয়ে নদীয়া, বীরভূম ও বর্ধমান জেলার জেএমবির কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণে তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় কলকাতা পুলিশের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) তাকে ধরতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করে। ২০১৫ সালে আবু সাঈদ দেশে ফিরে এলে দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর বগুড়া জেলা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

ওই কর্মকর্তা জানান, কারাবন্দি আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদও পুরনো জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। ২০১০ সালে জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করে তাসনিম। ২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে তাসনিম গ্রেফতার হয়। আবু সাঈদ ও তাসনিম ছাড়াও বাকি দুই শীর্ষ জঙ্গি নেতার একজন আল-আমিন আনসার আল ইসলামের নেতা ও ফয়সাল হরকাতুল জিহাদ নেতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তারা কারাগারে রয়েছে।

spot_img

Related articles

এসআইআর চলাকালীন এলাকায় থাকতে হবে মন্ত্রীদের, কড়া নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্যজুড়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়া (এসআইআর)। এই প্রক্রিয়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের...

বিশ্বকাপ জিতেই মোটা অঙ্কের আর্থিক পুরস্কার, আয়ে পলাশকে কতটা টেক্কা দিলেন স্মৃতি?

বিশ্বকাপ জিতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্মৃতি মান্ধানা (Smriti Mandhana) । আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস...

ঝাড়গ্রামে শিল্পের প্রসারে বড় পদক্ষেপ, জমি ফ্রি-হোল্ডে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত রাজ্যের

শিল্পে বিনিয়োগের গতি বাড়াতে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত...

‘বন্দেমাতরম’-এর সার্ধ শতবর্ষে রাজ্যজুড়ে উদযাপন, মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার 

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি ‘বন্দেমাতরম’-এর সার্ধ শতবর্ষ উদযাপন করবে রাজ্য সরকার। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত...