Tuesday, December 23, 2025

লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ১৫০ উপভোক্তার দৌলতে এবারই প্রথম দুর্গাপুজোয় মাতবে আশাকাঁথি গ্রাম

Date:

Share post:

সংসারের সমস্ত কাজ সামলে এ বার প্রথমবার দেবী দশভূজার আরাধনা করবেন তারা।জানলে অবাক হবেন, বেলপাহাড়ি ব্লকের এড়গোদা অঞ্চলের আশাকাঁথি গ্রামের ওই মহিলারা সকলেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের উপভোক্তা। ১৫০ জন মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা দিয়ে পুজোর তহবিল গড়েছেন। গ্রামের স্কুল ও কলেজ ছাত্রীরাও তাদের টিফিন খরচ বাঁচিয়ে তহবিলে দান করেছেন টাকা। মহিলাদের সম্মিলিত উদ্যোগে আশাকাঁথি গ্রামে এই প্রথমবার সর্বজনীন দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হচ্ছে।

আশাকাঁথি গ্রামে কোনওদিন দুর্গাপুজো হয়নি। দু’কিলোমিটার দূরে জয়পুরে দুর্গাপুজো হয়। আর নয়তো পাঁচ কিলোমিটার দূরের শিলদায় হয় জাঁকজমকপূর্ণ একাধিক দুর্গাপুজো। গ্রামের মহিলাদের পক্ষে দূরে গিয়ে পুজো দেওয়া ও দেবীদর্শনে সমস্যা হতো।সম্প্রতি গ্রামের কয়েকজন উদ্যোগী মহিলা মিলে আলোচনায় বসে গ্রামে দুর্গাপুজো করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু পুজোর টাকা জোগাড় হবে কোথা থেকে? মুশকিল আসান করে দেন গ্রামের প্রবীণারাই। তাঁরা প্রস্তাব দেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের থেকে সকলে কিছু টাকা দিলে পুজোর কিছুটা খরচ উঠে আসবে। এরপরই গ্রামের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের উপভোক্তাদের নিয়ে আলোচনায় বসে মহিলা পরিচালিত সর্বজনীন পুজো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে প্রতি মাসে সাধারণ মহিলারা পান ৫০০ টাকা। আর জনজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণির মহিলারা পান এক হাজার টাকা। ওই দেড়শো জন মহিলার প্রত্যেকে ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে পুজোর জন্য তহবিল গড়েছেন। বুধবার সেই পূজোর খুঁটি পূজো হয়ে গেল। উপস্থিত ছিলেন পুজো কমেটির সব সদস্যরা। গঠিত হয়েছে ১৩ জনের পুজো কমিটিও।

আশাকাঁথি সর্বজনীন দুর্গোৎসব মহিলা কমিটির সভানেত্রী শোভারানি চন্দ্ৰ বলছেন, “অনেকদিন ধরেই গ্রামে দুর্গাপুজো করার দাবি উঠছিল। কিন্তু কেউই এগিয়ে আসেননি। অবশেষে আমরাই পুজোর করার সিদ্ধান্ত। নিয়েছি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের ১৫০ জন উপভোক্তা গ্রামে রয়েছেন। সকলে অর্থ সাহায্য করেছেন।”

পুজো কমিটির সম্পাদক শোভা শবর, কোষাধ্যক্ষ প্রভাতী শবরের কথায়, “গ্রামে প্রথমবার দুর্গাপুজোর আয়োজন করার ফলে সকলেই খুবই উৎসাহিত।” গ্রামের প্রবীণা আশালতা কুণ্ডু, মেঘরি শবরের কথায়, “সংসার সামলে দূরে গিয়ে পুজো দেখাটা খুবই সমস্যার ছিল। এ বার গ্রামে পুজো হবে। এটাই বড় প্রাপ্তি।” কলেজ পড়ুয়া মানসী চন্দ্র, স্কুল পড়ুয়া প্রীতি নন্দীরাও উচ্ছ্বসিত। টিফিনের জমানো টাকা পুজোর তহবিলে দান করেছেন। তাঁদের কথায়, “মায়েরাই মাতৃপূজার আয়োজন করছেন। আমরাও সহযোগিতায় থাকছি।”

আশাকাঁথি পল্লীকল্যাণ ক্লাবের মাঠে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপভোক্তাদের দানে ৭৫ হাজার টাকার সংস্থান হচ্ছে। পুজো কমিটির সভানেত্রী শোভারানি চন্দ্র জানিয়েছেন , “বিভিন্ন মহলে সাহায্যের আবেদন করা হচ্ছে। আশা করছি লক্ষ্যপূরণ হবে।” তাদের প্রতিমা গড়ছেন শিলদার মৃৎশিল্পী বাসুদেব কর।

 

spot_img

Related articles

চিংড়িঘাটা মেট্রো নিয়ে ‘ডেডলাইন’ হাই কোর্টের! ৩ রাত রাজ্যের দায়িত্বে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান! আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করতে হবে চিংড়িঘাটা মেট্রোর (Chingrighata Metro) কাজ। মঙ্গলবার কলকাতা হাই...

ট্রেনের শৌচাগারের পাশে বসে সফর! ওডিশার কুস্তিগীরদের করুণ অবস্থা

ডাবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যে ক্রীড়াবিদদের করুণ অবস্থা। জাতীয় স্তরের কুস্তি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ওডিশার খেলোড়ায়দের (Odisha Wrestlers) করুণ...

হাঁসখালিতে নাবালিকার গণধর্ষণ-খুনে ৩ দোষীর আমৃত্যু কারাদণ্ড, বাকি ৬জনকেও শাস্তি

নদিয়ার (Nadia) হাঁসখালিতে (Hanskhali) নাবালিকার গণধর্ষণ-খুনে ৩ তিন দোষীর যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করল রানাঘাট মহকুমা আদালত (Ranaghat Sub-divisional...

বাংলাদেশের ঘটনার আঁচ দিল্লিতে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বর্বরতার প্রতিবাদ কলকাতাতেও

বাংলাদেশের (Bangladesh) হিন্দু যুবক খুনের ঘটনার আঁচ এবার দিল্লিতে। মঙ্গলের সকালে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশন অফিসের (Bangladesh High...