Wednesday, November 12, 2025

স্বামীকে হারিয়েছেন সদ্য,হাই কোর্টের রায়ে যোগ্য হয়েও চাকরি হারিয়ে দিশেহারা আবীরা

Date:

Share post:

দিন পনেরো আগেও স্বপ্নের মতো ছিল আবীরা দাসের জীবনটা। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই সরকারি চাকরি করেন। নিশ্চিন্ত সংসারে রয়েছে সাড়ে তিন বছরের ফুটফুটে মেয়ে। খেদ বলতে একটাই।চাকরির সুবাদে স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে বিশেষ থাকা হয় না। স্বামী অরূপ বিশ্বাস মালদহের একটি স্কুলে বাংলার শিক্ষক। মালদহেরই মেয়ে আবীরা এসএসসি পাশ করে চাকরি করেন শ্রীরামপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। সোমবার হাই কোর্টের রায়ে চাকরি যাওয়া প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষকের মধ্যে রয়েছে আবীরার নামও। শুধু আবীরা নয়। হাই কোর্টের নির্দেশে এই বিদ্যালয়ের আরও তিন জনের চাকরি গিয়েছে।মোট চারজন শিক্ষিকার মধ্যে দুজন বাংলার ও দুজন ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষিকা।মেধাবী আবীরার সাজানো সংসার ছারখার করে দিয়েছে আরও একটি ঘটনা। ১২ দিন আগেই আকস্মিক অসুস্থতায় মৃত্যু হয়েছে আবীরার স্বামী অরূপের। জীবনসঙ্গীর মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই চাকরি হারিয়ে রাতারাতি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন আবীরা।

২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় সফল হন মালদার ইংলিশবাজারের বাসিন্দা আবীরা। ২০১৮ সালে হুগলি জেলার সেরা স্কুলগুলির একটি শ্রীরামপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে সহশিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সাহিত্য পড়াতেন আবীরা। একমাত্র সন্তান আরোহীকে নিয়ে সুখের সংসার দম্পতির। স্বামী মালদহে থাকলেও কর্মসূত্রে শ্রীরামপুরে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন আবীরা।গরমের ছুটি পড়ার আগেই ছাত্রীদের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে জমা দিয়েছেন তিনি। গত ৭ এপ্রিল খবর পান স্বামী অরূপ আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সে দিনই মেয়েকে নিয়ে মালদহে ছুটে যান আবীরা। পরের দিন ৮ এপ্রিল মৃত্যু হয় অরূপের। আবীরার শ্বশুর-শাশুড়ি বেঁচে নেই। স্বামীর মৃত্যুতে শিশুকন্যাকে নিয়ে শোকের ভার সামলানোর আগেই সোমবার আসে হাই কোর্টের রায়।

কান্না ভেজা গলায় আবীরা বলেন,আমাদের সমস্ত নথি জমা দিয়েছি।যতবার ডাকা হয়েছে ততবার গিয়েছি।তদন্তে সমস্ত রকম সহযোগিতা করেছি।অযোগ্যদের যে তালিকা বেরিয়ে ছিল তাতে আমার নাম ছিল না।তারপরেও আদালতের নির্দেশে আমরা নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করার পরেও চাকরি হারালাম।আমার বৃদ্ধা মা ও নাবালিকা মেয়ে কে নিয়ে কোথায় যাব।আমার স্বামীও মারা গিয়েছেন।আমাদের সামাজিক সন্মান নষ্ট হয়ে গেল।ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ছিলাম।এখন ঋণ কী ভাবে শোধ করব।পরিবার নিয়ে কোথায় দাঁড়াব।বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে যে চার জন শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে তাঁদেরা কারো নামই অযোগ্যদের তালিকায় ছিল না।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আইভি সরকার বলেন,আমরা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাদের সমস্ত নথিপত্র জমা দিয়ে ছিলাম পর্ষদে।প্রত্যেক শিক্ষিকাই দক্ষতার সঙ্গে বিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন।চার জনের মধ্যে অযোগ্যদের তালিকায় কারো নামই ছিল না।আবীরার স্বামী গত হয়েছে।আমাদের মন খুব খারাপ।




spot_img

Related articles

দেশে প্রথমবার সেমিস্টার পদ্ধতিতে ফাজিল! ফলপ্রকাশের পরে সফল পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা হয়েছে সেমেস্টার পদ্ধতিতে। উচ্চ মাধ্যমিকের মতো মাদ্রাসার ফাজিল ২০২৬-এর পরীক্ষা...

অর্পিতার সঙ্গে সম্পর্ক কী, কাদের নিয়ে পরিবার? খোলাখুলি উত্তর পার্থর

শিক্ষক নিয়োগ মামলায় তাঁর গ্রেফতার হওয়ার পরেই গ্রেফতার হন তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukharjee)। জামিন পেয়ে বাড়ি...

ডবল ইঞ্জিনের গোয়ায় কোটি টাকার চাকরি কেলেঙ্কারি! জড়িত বিজেপি মন্ত্রিসভার সদস্য ও উচ্চপদস্থ আমলা

ফের ডবল ইঞ্জিন সরকারের দুর্নীতি ফাঁস। কোটি কোটি টাকার 'চাকরির বিনিময়ে নগদ' কেলেঙ্কারির এক মূল অভিযুক্ত গোয়ার (Goa)...

এখনও গুটখা-তামাকযুক্ত পান মশলা বিক্রি নিষিদ্ধ বাংলায়, মেয়াদ চলবে কতদিন

আরও এক বছর গুটখা ও তামাকযুক্ত পান মশলা (Pan Masala) বিক্রির নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমবঙ্গে (West Banegal)। গত ৭ নভেম্বর...