তৃণমূলকে ঠেকাতে রাজ্যে রাম-বাম (BJP-Left) হাত মিলিয়েছে। কোথাও বামের সমর্থন করেছে বিজেপিকে (BJP)। কোনও উল্টোটা। এই অভিযোগ শাসকদলের নেতৃত্বের। এবার এই বিস্ফোরক অভিযোগ স্বয়ং বাম জমানার মন্ত্রী প্রয়াত রঞ্জিত কুন্ডুর ভাইপো কৌস্তভ কুণ্ডুর। তিনি লেখেন, “আগে রাম পরে বাম…। এই থিওরি পুরো বামপন্থী ইকোসিস্টেমকে শেষ করছে।“ তাঁর এই পোস্টের পর মঙ্গলবার তমলুকে সভায় সিপিএম নেতাও এই নিয়ে সুর চড়ান। তাঁর আগে “রাম পরে বাম” ভাবা কর্মীরা দল ছাড়ুন।

তৃণমূলকে (TMC) ঠেকাতে মরিয়া বামেরা ধর্মের তাস খেলা, বাংলা বিরোধী গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। ফলে বামের ভোট গিয়েছে। নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের থিওরি মানতে গিয়ে শূন্য হয়েছে বামেরা। ভোট বেড়েছে পদ্ম শিবিরের। দিবা স্বপ্নে সিপিএম (CPIM) ভাবছে, তৃণমূলকে সরিয়ে বিজেপিকে নিয়ে আসবে। তার পর বিজেপিকে সরাবে। অথচ ত্রিপুরায় যে তারা পদ্মশিবিরকে হটাতে পারছে না- সেই উদাহরণ মনে রাখতে পারছে না। এমনকী, দেশের কোনও রাজ্য থেকেই বিজেপিকে সরাতে পারছে না বামেরা। একমাত্র গেরুয়া শিবিরকে রুখতে পেরেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বামেদের “আগে রাম পরে বাম“ থিওরিকে তুলোধনা করলেন রঞ্জিত কুন্ডুর ভাইপো তথা এসএফআই নেতা কৌস্তভ কুণ্ডু। নিজের ফেসবুক ওয়ালে তিনি লেখেন,
“আগে রাম পরে বাম…
এই থিওরি পুরো বামপন্থী ইকোসিস্টেমকে শেষ করছে। এই থিওরির জন্ম হয় শিলিগুড়িতে অশোক ভট্টাচার্যের জেতা থেকে। যে যেখানে শক্তিশালী তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাকে বিজয়ী করতে হবে।
কিন্তু এই থিওরির থেকে আমরা কি পেয়েছি, যেখানে ২০১৬ তে ভোট ৩৮% ছিল, ২০১৯ এ ৭% ভোটে নেমে আসি। এরকম ল্যান্ডস্লাইড ভারতের ইতিহাসে কোনও পার্টির হয়নি।
কোনো পার্টি সদস্যকে দেখি, সে বুক ঠুকে ব্রাঞ্চ মিটিং এ বলছে, বিজেপিকে ভোট দেবো। কোনো ব্রাঞ্চ সেক্রেটারি, সে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলছে বিজেপিকে ভোট দিতে। উচ্চতর পার্টি অফিসেও দেখেছি অর্জুন সিং এর হারা নিয়ে দুঃখের পরিবেশ। এরিয়া কমিটির সদস্য আছেন যারা ২০২১ এর পর বিজেপি কর্মীদের পাঠিয়েছেন আর্থিক সাহায্য, এসব উদাহরণ ও রয়েছে। একেকটা বুথে ৫ জন পার্টি সদস্য, ভোট পড়েছে ০। এদিকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
যেন তৃণমূলকে যেকোনো মূল্যে হারাতে হবে, আর সে মূল্য হবে আমাদের কমিউনিস্ট পার্টি উঠে যাওয়া।“

উদাহরণ তুলে কৌস্তভ লেখেন,
“শুধু এলাকা কেনো, টিভিতে নেতাদের দেখেছি বিজেপির সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলা।
পার্টির লোকরা বলবেন এটা বাইরে বলবার কথা না। আমি এরিয়া কনফারেন্সে বলেছি, এমনকি জেলা নেতৃত্বের সামনে বলেছি। কোনও স্টেপ নেওয়া হয়নি। ২০১৬ পর্যন্ত আমাদের ভোট পরবর্তী মিটিং হত। ২০১৯ এর পর তা হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।“

এরপর পরিসংখ্যান দেন এসএফআই নেতা। তাঁর কথায়,
“আমাদের এখনও ২৫% ভোট আছে, যার অধিকাংশ যাচ্ছে বিজেপিতে, এলাকার নেতাদের ইনফ্লুয়েন্সে। শুধু এলাকার নেতা নয়, রাজ্য কমিটির নেতারাও জড়িত। তারা সবই জানে, তবু নিরুত্তাপ। কমরেড সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন রামবামদের পার্টি থেকে বিতারণের।
যদি আপনারা সুধাংশু দাশগুপ্তের লেখা পড়েন, প্রমোদ দাশগুপ্ত নিয়ে, তাহলে দেখবেন পার্টির সংশোধনবাদী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিভাবে তারা খোলাখুলি আলোচনা করতেন।
এটা বলে দিলাম। কারণ দীর্ঘদিন কোনও দূর্নীতি চললে কাউকে whistle blowing করতেই হয়। ২০১৮-২০২৫ আমি whistle blowing করলাম। জানিনা পার্টি থেকে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে আমার বিরুদ্ধে ! তবু শেষদিন পর্যন্ত পার্টির প্রতি বিশ্বস্ত থাকবো। কোনওদিন বিজেপিকে ভোট দেবো না।“

কৌস্তভের কথার সুর শোনা গেল বামনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর কথাতেও। তমলুকের জনসভা থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি সাফ বার্তা দেন, “আগে রাম পরে বাম যাঁরা ভাবছেন, তাঁরা আমাদের ছেড়ে দিন।“ বাংলায় রাম-বামের (BJP-Left) গোপন আঁতাঁতের যে অভিযোগ শাসকদল করে, কার্যত তাতেই সিলমোহর দিচ্ছেন সিপিএমের প্রবীণ ও নবীন প্রজন্মের দুই নেতা।

–

–

–

–
