Saturday, December 13, 2025

প্রসূতির চিকিৎসার প্রয়োজনেই প্রাণ হাতে জিপ লাইনে খরস্রোতা নদীপার BMOH ইরফানের

Date:

Share post:

আর্থিকা দত্ত, জলপাইগুড়ি

প্রাকৃতিক দুর্যোগে উত্তরবঙ্গ বিপর্যস্ত। নাগরাকাটার বামনডাঙ্গা এলাকা সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ভেঙে গেছে ব্রিজ, বন্ধ হয়ে গিয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঠিক সেই সময়েই নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দড়ি বেয়ে ওই দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে যান নাগরাকাটা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (BMOH) ডাঃ ইরফান মোল্লা। তাঁর হাতেই আশ্রয় পান হাজারো মানুষ। এই অমানবিক পরিস্থিতিতে তাঁর অভিজ্ঞতা শোনালেন তিনি।

প্রশ্ন: এলাকা যখন এতটাই দুর্গম, ভাঙা ব্রিজ, হাতির আতঙ্ক, তবু আপনি ঝুঁকি নিয়ে ছুটলেন মানুষের পাশে?
উত্তর: শনিবার রাত থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি চলছিল, জল ঢুকে গিয়েছিল চারদিকে। পরদিন সকালে বুঝতে পারি নেটওয়ার্ক পর্যন্ত নেই। তারপরই খবর পাই, বামনডাঙ্গায় বহু মানুষ ভেসে গেছে, আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল টিম নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। ওখানে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় ছিল দড়ি বেয়ে ঝুলে যাওয়া। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সাহায্যে চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে পৌঁছে যাই এলাকায়। সরেজমিনে গিয়ে বুঝলাম কতটা বড় ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে, গবাদি পশু নেই, অনেকেই গুরুতর আহত। মডেল ভিলেজ, বিচ লাইন, ১৮ নম্বর লাইন, ফ্যাক্টরি অফিস এই এলাকাগুলোয় প্রাথমিক চিকিৎসা পৌঁছে দিই এবং পরবর্তী পরিকল্পনা তৈরি করি।

প্রশ্ন: প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কি যথেষ্ট পরিমাণে পৌঁছে গেছে?
উত্তর: প্রথম দিনই যথেষ্ট ওষুধ ও সরঞ্জাম পৌঁছে দিই। এই এলাকায় প্রায় ৮-৯ হাজার মানুষ থাকেন। সবাই একসঙ্গে অসুস্থ হন না, তাই ধাপে ধাপে প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। গুরুতর অসুস্থদের বিশেষ ব্যবস্থা করে হাসপাতালে আনা হচ্ছে।

প্রশ্ন: সবচেয়ে বেশি কোন শ্রেণির মানুষ চিকিৎসার প্রয়োজন বোধ করছেন বলে মনে হয়েছে?
উত্তর: সবচেয়ে বেশি চিন্তায় রেখেছে গর্ভবতী মায়েরা এবং ছোট শিশু।

প্রশ্ন: গর্ভবতী মায়েদের জন্য কী বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: সোমবার রাত দেড়টার সময় খেরকাটা এলাকার এক গর্ভবতী মায়ের প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। ভাঙা রাস্তা পার করে, স্ট্রেচারে তুলে, জঙ্গল পেরিয়ে, স্পিডবোটে করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসা শুরু করার পর তাঁর অবস্থা অনুযায়ী রেফার করি মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। আমরা ঠিক করেছি, যাদের ডেলিভারির তারিখ কাছাকাছি, তাদের অগ্রিম হাসপাতালে এনে রাখব। একইভাবে দু’জন ডায়ালাইসিস রোগীকেও হাসপাতালে ভর্তি রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সবার খাবারের দায়িত্বও হাসপাতাল নিয়েছে।

প্রশ্ন: প্রশাসনের সহযোগিতা কতটা পাচ্ছেন?
উত্তর: জেলা প্রশাসনের সমস্ত সহযোগিতা পাচ্ছি বলেই এত পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এই এলাকায় বিশেষ নজর রয়েছে প্রশাসনের। আপনারা জানেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং এসে এই জায়গা দেখে গেছেন।

প্রশ্ন: আপনার জন্ম, লেখাপড়া কোথায়?
উত্তর: আমি বর্ধমানের বাসিন্দা। পড়াশোনা করেছি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। ২০১৯ সাল থেকে নাগরাকাটার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসেবে দায়িত্বে আছি।

প্রশ্ন: এর আগে কি কখনো এভাবে দড়ি বেয়ে কাজ করেছেন?
উত্তর: জীবনে প্রথম এভাবে ঝুলে মানুষের পাশে দাঁড়ালাম। কিন্তু দেখুন, আমি তো এই এলাকার স্বাস্থ্য আধিকারিক। আমার মানুষেরা যখন কষ্টে আছে, আমি কীভাবে বসে থাকব? ঘরবাড়ি থেকে চাষের জমি সবকিছু হারিয়েছে তারা। অন্তত শারীরিক কষ্টটা যেন কম হয়, সেটাই আমার দায়িত্ব। তাই সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করছি মানুষের পাশে থাকতে।

আরও পড়ুন – বিনা প্ররোচনায় তৃণমূলের পার্টি অফিসে হামলা বিজেপির! বুধবার ত্রিপুরায় যাচ্ছে প্রতিনিধি দল 

spot_img

Related articles

মেসি ম্যানিয়ায় চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা: দুঃখপ্রকাশ করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন মুখ্যমন্ত্রীর

নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলনা যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। আয়োজকদের অব্যবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অনুষ্ঠানে নিজে যোগ দিতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী...

মেসি জ্বরে কাবু কলকাতায় ফুটবলের ঈশ্বর দর্শন আব্রামের, আর্জেন্টিয়ান তারকার সঙ্গে হাসিমুখে SRK

এক ফ্রেমে দুই তারকা। একজনের পায়ের প্যাঁচে বিপক্ষ নাস্তানাবুদ, অন্যজনের প্রেমের প্যাশনে ঘায়েল সব বয়সীরা। কিন্তু কলকাতা যখন...

উড়ে এলো বোতল – পালালেন সৌরভ, মাঠেই ঢুকলেন না শাহরুখ! শতদ্রু দত্তর নামে ক্ষোভ

ভোর রাত থেকে বিমানবন্দর থেকে যুবভারতী পর্যন্ত অপেক্ষা মেসি ভক্তদের। রাস্তার ধারে অগণিত ফুটবল প্রেমীরা ভিড় করেছিলেন এক...

মেসিকে দেখতে না পাওয়ার রাগ: চেয়ার ভেঙে, মাঠে ঢুকে বিশৃঙ্খলা মেসি-ভক্তদের!

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে চরম বিশৃঙ্খলা মেসি-ভক্তদের। এক বালতি জলে এক ফোঁটা চোনা পড়ে যাওয়ার মতো ফুটবল প্রেমীদের আচরণে লজ্জা...