আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধ এঁটে উঠতে না পেরে এবার কী ট্রাম্পের সামনে আত্মসমর্পণ ভারতের? রিলায়েন্স গোষ্ঠীর সিদ্ধান্তে কার্যত তারই ইঙ্গিত। রাশিয়ার থেকে বেশি পরিমাণ তেল কিনলে ভারতকে আরও শুল্কের চাপের মুখে পড়তে হবে বলে যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। বিদেশ মন্ত্রক (MEA) সূত্রে যদিও ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার তেল (Russian crude oil) প্রসঙ্গে কোনও ফোনালাপ হয়নি বলেই দাবি করা হয়। অথচ এরই মধ্যে ভারতের তেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অন্যতম বড় বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দেওয়া হল, তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনার পথ বন্ধ করে দিচ্ছে। তাদের এই পদক্ষেপে কার্যত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনে আম্বানি (Mukesh Ambani) গোষ্ঠীর বাইরে বিক্রির পর্দাফাঁস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার তেল কেনার শাস্তি হিসাবে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক (USA tariff) লাগু করে আমেরিকা। এরপরেও রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ না করায় আরও শুল্ক চাপানোর সম্ভাবনার কথা জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তাঁর। সেখানেই রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি। যদিও ভারতের তরফে কোনও বিবৃতিতেই সেই ফোনালাপে রাশিয়ার তেল নিয়ে আলোচনার কথা স্বীকার করা হয়নি। বিদেশ মন্ত্রকের (MEA) মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল দাবি করেন, ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির রাশিয়ার তেল নিয়ে ফোনে কথা হয়েছে, এমন কিছু তাঁদের জানা নেই।

তবে বিদেশ মন্ত্রক সত্য প্রকাশ করতে না চাইলেও ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির দুদিনের মধ্যে রিলায়েন্সের (Reliance) ঘোষণা এক অন্য সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। মুকেশ আম্বানি গোষ্ঠীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার গাইডলাইন মেনেই রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনবে তারা এবার থেকে। অর্থাৎ রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা থেকে সরে আসতে হবে তাঁদের। ভারত সরকারের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতার পথে চলেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত বলে জানান। সেখানেই স্পষ্ট ভারত সরকার থেকে নির্দেশ আসার পরেই তেল (Russian crude oil) কেনায় নতুন নীতির পথে রিলায়েন্স (Reliance)।

আমেরিকার বসানো শুল্কের বোঝা আর বাড়লে তা যে ভারতের অর্থনীতির ক্ষেত্রে কতটা ক্ষতিকারক হবে, তা উপলব্ধির ইঙ্গিত ভারতের তরফে। রিলায়েন্সের অন্দরমহলের খবর, কেন্দ্রের সরকারের নতুন নির্দেশিকা মেনেই গত ১০ দিন ধরে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা ধীরে ধীরে কমাতে শুরু করা হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার (western Asia) বিভিন্ন দেশ থেকে তেল কেনা শুরুর কাজও করে দিয়েছে রিলায়েন্স গোষ্ঠী। সেক্ষেত্রে আমেরিকার ভয়ে বা ফোনে যে ভারত কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না, বিদেশ মন্ত্রকের (MEA) এমন দাবি যে অর্ধসত্য তাও প্রমাণিত।

আরও পড়ুন: হামাসের সঙ্গে ভগৎ সিংয়ের তুলনা! সমালোচিত কংগ্রেস সাংসদ

সেক্ষেত্রে আমেরিকার তরফ থেকে যে দাবি করা হয়েছিল, রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনে ভারতের বেসরকারি সংস্থাগুলি সেই তেল বিশ্ব বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে ব্যাপক মুনাফা লাভ করছে, এমন ইঙ্গিতও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ভারতের সরকার পোষিত তেল বিক্রেতা সংস্থা যেমন ইন্ডিয়ান অয়েল (Indian Oil Corporation) রাশিয়া (Russia) থেকে যে তেল কিনত, তা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। ফলে রাশিয়ার তেল নিয়ে মার্কিন নীতি মানতে তাদের খুব একটা আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হবে না। তবে সরাসরি রাশিয়ার সংস্থার থেকে তেল কেনা রিলায়েন্সের উপর যথেষ্ট প্রভাব পড়তে চলেছে। তা বিচার করেই যতদিন সম্ভব আমেরিকার রোশকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা চালিয়েছিল ভারতের বিজেপি শাসিত কেন্দ্রের সরকার। কিন্তু ১৫ অক্টোবর ডোনাল্ড ট্রাম্প যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাতে সাত তাড়াতাড়ি নিজেদের নির্দেশিকা বদলে রিলায়েন্সকে সংযত করতে বাধ্য হল কেন্দ্রের মোদি সরকার।

–

–

–
–


