Friday, August 29, 2025

প্রমাণ ছাড়া কুৎসা হলে সামলাতে পারবেন তো?

Date:

Share post:

কংগ্রেস নেতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতার নিয়ে বিরোধীদের কুম্ভীরাশ্রু দেখে হাসি পাচ্ছে।

তবে মূল বিষয়ে ঢোকার আগে বলি সন্ময়কে গ্রেফতার না করে বিকল্প আইনি যুদ্ধ হলে শাসকদলের অস্বস্তি কম হত। গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত সঠিক কিনা ভবিষ্যতে বোঝা যাবেন। এটা সন্ময় কাজে লাগালে তাঁর রাজনৈতিক লাভ।

সন্ময় সজ্জন। সুবক্তা। কোনো সন্দেহ নেই। সোশাল মিডিয়ায় তৃণমূলের কড়া সমালোচক।

সমস্যা হল, তিনি কিন্তু তাঁর বক্তব্যে নির্দিষ্ট তথ্যের বদলে বিশেষণ ও ধারণাকে বেশি গুরুত্ব দেন। যে আলোচনাগুলি আমরা আড্ডার সময়ে করে থাকি, তারই কিছু যেন তিনি খবরের আকারে তুলে ধরেন। ফলে, তাতে আপাতদৃষ্টিতে ঝাঁঝ থাকলেও তার সত্যসত্যর গ্যারান্টি থাকে না।

উদাহরণ: সন্ময় একটি বিষয় তুলেছেন একশো দিনের কাজে পুকুর চুরি। তিনটে পুকুর কাটার বিল হয়েছে। পুকুর হয় নি।

শুনতে ভালো। কিন্তু সমস্যা হল সন্ময় নির্দিষ্ট জায়গার নাম বললেন না। কোনো তথ্যপ্রমাণ দিলেন না। বললেন মুর্শিদাবাদের এক বিধায়ক বলেছেন! এক বিধায়ক। আরও বললেন, ডি এম বা এস ডিও গিয়ে খুঁজে পাননি। ডিএম আর এসডিও এক হলেন!!! বললেন, মজুরির টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়লে বাইরে চেয়ার নিয়ে বসে তোলাবাজি হয়।

এগুলো শুনতে ভালো। প্রতিবাদী। তবে এর একটা নির্দিষ্ট তথ্য থাকবে তো? কোন ব্যাঙ্ক? কবে হল? কারা বাইরে বসল? কার টাকা গেল? কোন পঞ্চায়েত? এগুলি ছাড়া শুধু দুর্নীতির কথা বললে হাততালি পাওয়া গেলেও একটা বড় ফাঁক থেকে যায় না কি?

আপনি, আমি, আমরা অনেক কিছু শুনি। জানি। বুঝি। গল্প করি। কিন্তু প্রকাশ্যে যথাযথ প্রমাণ ছাড়া লিখতে বা বলতে পারব কী? বিষয়টা ঠিক হলেও বলা যায় না। এটা মিডিয়ার দায়বদ্ধতা বা বাধ্যবাধকতা। সন্ময় কিন্তু এই গন্ডিটা বারবার অতিক্রম করেছেন।

আজ সন্ময় গ্রেফতার হওয়ায় যারা বিপ্লবী সাজছেন, তাদের সম্পর্কে যদি ফেস বুকে নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া প্রচার করা হয়, হজম হবে তো? সব দলেরই অসহিষ্ণুতার বহু প্রমাণ আছে। ভুরি ভুরি নজির আছে। সন্ময় আজ তৃণমূলের বিরুদ্ধে বলছেন বলে বাকিরা মজা পাচ্ছে। কিন্তু এই কালচারটা যদি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হয়, কেমন লাগবে?

আবার বলছি, সন্ময় ভালো বক্তা। সুন্দর উপস্থাপন। কিছু বক্তব্যে বহু ক্ষেত্রে ফাঁক আছে।
তবু, সন্ময়কে মোকাবিলার বিকল্প পথ ছিল। পুলিশি অভিযান থেকে সন্ময় যদি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক লাভ তুলে নিয়ে যান তাহলে সেটা শাসকদলের অপরিনামদর্শীতাকেই চিহ্নিত করবে।

তবু, এটা বলতে হবে এবং মানতেও হবে, হাতের ফোনে সোশাল মিডিয়ার প্রযুক্তির সুযোগ আছে বলে তথ্যপ্রমাণের তোয়াক্কা না করে আক্রমণ চলবে, এই সংস্কৃতিটা না চলাই ভালো। সরকারবিরোধী কড়া কথায় লাইক পড়ে বেশি। সেই লাইকসংগ্রহের বাঘের পিঠে উঠলে সাংবাদিকতার ন্যূনতম নীতিগুলি উচ্ছন্নে যায়।

আমাকে এক নেতা বলছিলেন…. এই বলে যা ইচ্ছে তাই কেউ বলে গেলে সেটা হাততালি পাবে প্রচুর। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, সেটা গ্রহণযোগ্য হবে কি?

সন্ময় বলেন ভালো। কিছু ন্যায্য ইস্যুও তোলেন, সবাই যা নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু তার একাংশ যদি নির্দিষ্টভাবে ধারাবাহিক ব্যক্তিআক্রমণে পর্যবসিত হয়, তাহলে উল্টোদিকের আক্রমণও ব্যাকরণবহির্ভূত হয়ে যাওয়ার প্ররোচনা পায়।

সন্ময়ের ইস্যুটি কোনো ব্যক্তিগত ইস্যু নয়। এটি সোশাল মিডিয়া ব্যবহার ও অপব্যহারের একটি সময়োপযোগী বিতর্ক। পুলিশকে বাইরে রেখেই এনিয়ে জনতার দরবারে লড়াই হওয়াটাই ভালো।

spot_img

Related articles

রজতজয়ন্তীতে ডব্লিউবিএনইউজেএসকে উচ্চ প্রশংসা, মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ প্রধান বিচারপতির

কলকাতার পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় (ডব্লিউবিএনইউজেএস)-এর উৎকর্ষতা এখন বেঙ্গালুরুর থেকেও এগিয়ে—রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের...

এসএসসি নিয়োগ পরীক্ষা পিছবে না, আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট 

স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেও লাভ হলো না কিছু প্রার্থীর। দেশের...

যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ! রবিবার টালিগঞ্জ থেকে ক্ষুদিরাম পর্যন্ত বন্ধ মেট্রো 

কলকাতার ব্লু লাইনের যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ। আগামী রবিবার মহানায়ক উত্তম কুমার (টালিগঞ্জ) থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশন পর্যন্ত বন্ধ...

এনএইচএম কর্মীদের বড় উপহার, উৎসবের মুখে বোনাস ঘোষণা রাজ্যের 

উৎসবের দোরগোড়ায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের কাজে নিযুক্ত রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবক ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য বড় ঘোষণা করল রাজ্য সরকার।...