চন্দননগর বড়বাজারের পুজোয় উঠে এসেছে পুরনো কলকাতা

চন্দননগর শহরের প্রাণকেন্দ্র বড়বাজারে এলে আপনি বুঝতেই পারবেন না যে, এটি কোনও মন্ডপ না পুরনো কলকাতার একটা অংশ। মন্ডপের সামনে একগাদা জামা ঝোলানো, সামনে সাইকেল সারানোর দোকান মন্ডপে ভাঙা সাটার লাগানো দোকান ঘরের মাথায় পাঁচ পুরুষ পুরনো একটা সাইকেল। সামনে এগিয়ে মন্ডপে প্রবেশ করলে সেখানেও একগাদা দোকান, কি নেই সেখানে অমিতাভ বচ্চন, মিঠুনের ছবি দেওয়া সেই সেলুন, থেকে আরও কত কী। কিন্তু এ কেমন থিম! না এটা কোনও পুরনো পাড়ার দোকান নয়, উদ্যোক্তরা বলছেন “কুর্নিশ ” সেই সব মানুষদের যারা রাত-দিন শ্রমের বিনিময়ে বেঁচে থাকেন আর সৃষ্টি করেন অন্য মানুষের বেঁচে থাকার রসদ। শ্রমজীবী মানুষের নিত্য দিনের বেঁচে থাকার সংগ্রামের মধ্যেই সৃষ্টির আনন্দই বড়বাজারের এবারের পুজোর থিম।

মানকুন্ডুর দৈবক পাড়ার এবারের থিম গজাবুড়ুর দেশে, কে গজাবুড়ু কেনই বা সে পুজো মন্ডপে! আসলে এই পাড়ারই কয়েকজন ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন পুরুলিয়ায়। অযোধ্যা পাহাড়ে ট্রেকিং তো অনেকবার হয়েছে এবার অন্য কোনও পাহাড় চাই তাই নতুন পাহাড় খুঁজতে গিয়ে গজাবুড়ুর র অবিষ্কার। গজাবুড়ু পাহাড় যে জেলায় সেই জেলার সবচেয়ে বড় সংস্কৃতি ছৌ নাচ। সেই ছৌ নাচের জন্য যে মুখোশ তা কী দিয়ে তৈরি হয়, তার প্রক্রিয়া কতরকমের মুখোশ এই নাচে ব্যবহার হয়, তা পরে থাকতে কতটা কষ্ট করতে হয় ছৌ শিল্পীদের তার নিখুঁত বর্ণনা ফুটিয়ে তুলেছেন এই বারোয়ারির কয়েকজন যুবক। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মায়ের মুখ ও পরিবর্তন করে ফেলেছেন তারা।

আরও পড়ুন – আবার যোগীর রাজ্য, পরিবারকে গাছে বেঁধে সকলের সামনে মহিলাকে গণধর্ষণ

চার মন্দির তলায় এবারের থিম স্বপ্ন জুড়ে শান্তি আসুক। মন্ডপের সামনেই এক যুবকের কথা রেকর্ডের মাধ্যমে গল্পের আকারে বলে দেওয়া হচ্ছে। থিমের যুগে বাঁশ কাঠ কাগজের সঙ্গে বেত, পাটকাঠি দিয়ে তৈরি মন্ডপে নতুন কী! না তার জন্য ওই রেকর্ড শোনা খুব দরকারী। কারণ, ওখানে গদাইয়ের গল্প বলা হচ্ছে। গদাই পাড়ার খবরের কাগজ বিক্রেতা। পাড়ার পুজোর থিম মেকার টাকা নিয়ে ডুবিয়েছেন উদ্যোক্তাদের। পুজোর মুখে সবার তাই মাথায় হাত। সেই সময়ই গদাইকে সঙ্গে নিয়ে এক উদ্যোক্তা ক্লাবে হাজির। তার বক্তব্য এবার থিম তৈরি করবে গদাই। খবরের কাগজ বাঁশ কাঠ নিয়ে দিন-রাত এক করে তৈরি হল মন্ডপ। কত মানুষ এলেন পুজো দেখতে সবাই প্রশংসা করলেন থিমের। পুজো শেষে একগাদা পুরষ্কার ও জিতল ক্লাব। কিন্তু সেরা থিমের পুরষ্কার প্রাপক থিম মেকারের ডাক পড়তেই বাঁধল সমস্যা। কারণ, পুরষ্কার এর চেকে কার নাম লেখা হবে, সবাই বলল গদাই, কিন্তু গদাই কী,, তা তো কেউ জানেনা। আসলে গদাইয়ের মত এরকম নাম গোত্রহীম শিল্পীদের প্রতিভার যে মূল্য এখনও ব্রাত্য তার উদাহরণই এই পুজোর থিম।

গোন্দলপাড়া সাতঘাটে এবারের থিম রূপসী বাংলা। ম্ডপের সামনে বিশাল গরুর গাড়ি, একইসঙ্গে ভিতরে খর বেত সহ বাংলার শিল্পকর্মের অপূর্ব রূপ তুলে ধরা হয়েছে মন্ডপের আনাচে-কানাচে।

আসছি আসছি করে জগদ্ধাত্রী বন্দনার প্রায় মাঝামাঝি ফরাসডাঙার মানুষ, তার ওপর রবিবার ছুটির দিন ফলে লাখ লাখ মানুষের ভিড় যে হুগলীর তিন শহরে ছাপিয়ে উঠবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আরও পড়ুন – ভারতের ১২১ জনের হোয়াটসঅ্যাপে আড়ি পেতে ছিল ইজরায়েলি সংস্থা!

Previous articleআবার যোগীর রাজ্য, পরিবারকে গাছে বেঁধে সকলের সামনে মহিলাকে গণধর্ষণ
Next articleপ্রকাশিত হল ভারতের নতুন মানচিত্র