প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মধ্যে খড়গপুর হাতছাড়া হলে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে

উপনির্বাচন ঘিরে এখন গমগম করছে খড়গপুর রেল শহর। এবার ত্রিমুখী লড়াইয়ের ময়দানে জোর টক্কর। কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে রাজি নয়। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে যা অ্যাসিড  টেস্ট বলেই মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলো।

রাজ্যের তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর খড়গপুর (সদর) কেন্দ্রটির দিকে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর এই কেন্দ্রটি শূন্য হয়। এবার এখানে বিজেপির প্রার্থী দিলীপ ঘোষের নির্বাচনী এজেন্ট প্রেম চাঁদ ঝাঁ। অতএব, গেরুয়া শিবির চাইছে যেকোনও মূল্যে এই আসনটি ধরে রাখতে। অন্যথায়, দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বের উপরেই প্রশ্ন উঠে যাবে।

২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে দিলীপ ঘোষ ৬ হাজারের কিছু বেশি ভোটে কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের বিধায়ক জ্ঞান সিং সোহন পাল ওরফে চাচাকে হারিয়ে ছিলেন। আবার ৬ মাস আগে হয়ে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটে লিড রয়েছে বিজেপির। সেক্ষেত্রে অঙ্কের বিচারে এগিয়ে থাকার কথা গেরুয়া শিবিরের।

কিন্তু এখানে বিজেপি প্রার্থীর জয়ের পথে বড় অন্তরায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এখানে বিজেপি শিবিরের অন্দরে ব্যাপক গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছে। প্রেম চাঁদ ঝাঁ-এর বিপক্ষে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা প্রদীপ পট্টনায়েক। খড়গপুর এলাকায় বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে যাঁর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিজেপির কিছু ভোট যদি নির্দল প্রার্থীর ঝুলিতে চলে যায়, তাহলে নিশ্চিতভাবে তার সুফল পাবেন তৃণমূল প্রার্থী। এদিকে, দল বিরোধী কাজের অভিযোগে ইতিমধ্যেই প্রদীপ পট্টনায়েককে বহিষ্কৃত করেছে রাজ্য বিজেপি।

বিষয়টি বুঝেই খড়গপুরে কার্যত মাটি কামড়ে পড়ে আছেন দিলীপ ঘোষ। অবাঙালি ভোটারদের মধ্যে প্রভাব তৈরি করতে এখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্জুন সিংকে। তৃণমূল শিবিরের দাবি দিলীপ-অর্জুন কেন, স্বয়ং মোদি-অমিত শাহ এলেও এবার খড়গপুর বাঁচাতে পারবে না বিজেপি। যদিও বিজেপি প্রার্থীর দাবি, উপনির্বাচনে তিনি ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জিতবেন।

বিজেপি প্রার্থী প্রেম চাঁদ ঝাঁ অবশ্য বিরোধীদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর কথায়, “তৃণমূল প্রার্থী আগে নিজের ঘর সামলান, তারপর আমাদের বলতে আসবেন। উনি নিজের কাউন্সিলরদেরই ধরে রাখতে পারছেন না। খড়গপুর পৌরসভায় তৃণমূল কোনও কাজই করেনি। খড়গপুরে যা কাজ হয়েছে, তা রেলের টাকায়। তাই মানুষ বিজেপিকেই ভোট দেবে।”

বিজেপি প্রার্থীর আরও অভিযোগ, তৃণমূল প্রার্থী তথা খড়গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার দুর্নীতিবাজ। কয়েক বছর আগে যায় কিছুই ছিল না, সে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। গায়ের জোরে, বন্দুকের নল ঠেকিয়ে ক্ষমতা দখল করে আছেন। উপনির্বাচনেও ব্যাপক টাকা ছড়াচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী, এমন অভিযোগও এনেছেন প্রেম চাঁদ ঝাঁ।

যদিও খড়গপুরের অলিতে-গলিতে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, বিজেপির পালে হাওয়া নেই। এর আগে ২০১১ সালেও প্রেম চাঁদ ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু সেবার তিনি মাত্র ৯ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগও রয়েছে এলাকায়। জমি কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে বিজেপি প্রার্থীর। সঙ্গে ব্যাপক গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কপালে ভাঁজ ফেলেছে গেরুয়া শিবিরের ভোট ম্যানেজারদের। ফলে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মধ্যে খড়গপুর আসন ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ রাজ্য বিজেপি সভাপতির।
আর আসন হাতছাড়া হলে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্ব নিয়েই কিন্তু প্রশ্ন উঠে যাবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Previous article২০০০ কিলোমিটার দূরে টার্গেট হানায় সক্ষম অগ্নি-২ মিসাইল পরীক্ষা
Next articleবৈশাখীর মান রাখতে ক্রুদ্ধ করলেন দিদিকে, কুল রাখতে মেননের দরজায় শোভন!