এখনও গোটা রাজ্যজুড়ে কংগ্রেসের যে কয়েকটি গড় রয়েছে, তারমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর (সদর) আসনটি অন্যতম। দীর্ঘ বাম জমানা এবং পরবর্তীতে তৃণমূলের আমলেও এই কেন্দ্রে অপ্রতিরোধ্য ছিল কংগ্রেস। বলা ভাল, জ্ঞান সিং সোহনপাল। যিনি এলাকার মানুষের কাছে “চাচা” বলেই পরিচিত। মালদহে যদি গনি খান মিথ হয়, তাহলে খড়গপুরে জ্ঞান সিং সোহনপাল চাচা। আসলে জ্ঞান সিং সোহনপাল কংগ্রেসের বিধায়ক নন, বরং রাজনীতির ঊর্ধ্বে তিনি ছিলেন খড়গপুরের মানুষের প্রতিনিধি।

চাচা খড়গপুর (সদর)-এর ১০ বারের বিধায়ক ছিলেন। ১৯৬৯ সালে প্রথমবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েই জয়ী হয়েছিলেন। মাঝে ১৯৭৭ সালে একবার পরাজিত হয়েছিলেন। তারপর থেকে একটানা ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিধায়ক ছিলেন রেল শহরের। জীবনের শেষ নির্বাচনে অবশ্য বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে হারতে হয়েছিল। ঠিক তার পরের বছর ২০১৭ সালে প্রয়াত হন সকলের প্রিয় চাচা।


তাঁর কেন্দ্র খড়গপুর (সদর)-এ ফের অকাল নির্বাচন। দিলীপ ঘোষ সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর আসনটি শূন্য হয়। আগামী ২৫ নভেম্বর এখানে অনুষ্ঠিত হবে বিধানসভা উপনির্বাচন। ত্রিমুখী লড়াইয়ে এবার এখানে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। যিনি এই এলাকার দীর্ঘদিনের পুর প্রতিনিধি। স্থানীয় মানুষের কাছে মাস্টার-মশাই নামেই পরিচিত।

কংগ্রেস প্রার্থীর দাবি, খড়গপুর (সদর) কেন্দ্রে ফের একবার মানুষ তাঁদের ভোট দিয়ে ফিরিয়ে আনবে। ২০১৬ সালে বিজেপির সঙ্গে আতাঁত করে চাচাকে হারিয়েছিল তৃণমূল। এবার মানুষ নিজেদের ভুল বুঝেছে। তাই ২৫ নভেম্বর খড়গপুর সদরের ভোটাররা মুখিয়ে রয়েছে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার জন্য। আর এই আসন পুনরুদ্ধারের পর তা চাচাকে উৎসর্গ করবেন তাঁরা।


এবং এই আসনটিকে কার্যত পাখির চোখ করেছে কংগ্রেস। স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি, কলকাতা থেকে শুভঙ্কর সরকার-এর মত নেতারাও খড়গপুরের মাটি কামড়ে পড়ে আছেন। শুভঙ্করবাবুর দাবি, কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি এবার তাঁদের জোটসঙ্গী বামেদের প্রচুর কর্মী-সমর্থক খড়গপুর কেন্দ্রটি ছিনিয়ে নিতে মাঠে নেমেছেন। খড়গপুরে বামেদের পুরো ভোটটাই এবার কংগ্রেস প্রার্থী পাবেন সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই বলেই জানান শুভঙ্কর সরকার।

চিত্তরঞ্জনবাবুর আরও দাবি, খড়্গপুরের মানুষ এবার বিজেপি ও তৃণমূল, দুই দলকেই প্রত্যাখ্যান করবে। মানুষ বুঝে গেছে এই দুটো দলই দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার এবার টাকার খেলায় মেতেছেন। টাকা দিয়ে ভোট কিনতে চাইছেন। এলাকার বিরোধী কাউন্সিলর ও সাধারণ ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে শাসক দল। গোটা খড়গপুর সদর এলাকা জুড়ে একটা সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করেছে তৃণমূল। কিন্তু মানুষও তৈরি আছে। শাসকের চোখ রাঙানিকে তোয়াক্কা না করে সবাই হাত চিহ্নে ভোট দিতে প্রস্তুত।

বিজেপি প্রার্থী প্রেম চাঁদ ঝাঁ-কেও দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। জমি কেলেঙ্কারি-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তাই মানুষ তাকেও প্রত্যাখ্যান করবেন। কংগ্রেসসের দাবি, জয়ের মার্জিন যায় হোক না কেন, খড়গপুর সদরের মানুষ চাচার উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেবেন চিত্তকে।

আরও পড়ুন-প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মধ্যে খড়গপুর হাতছাড়া হলে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে
