বাংলায় একটা কথা আছে “কলাগাছ কাটতে কাটতে ডাকাত হওয়া”। গোয়া, মনিপুরের কলাগাছ কাটতে কাটতে প্রবল ‘আত্মবিশ্বাসী’ টিম-চাণক্য মহারাষ্ট্রের কলাবাগানে এসে কার্যত মুখ থুবড়েই পড়তে চলেছে৷ আরও বড় মাপের, আন্তর্জাতিক স্তরের চমক দেখাতে না পারলে ‘ডাকাত হওয়া’-র বিজেপির স্বপ্ন এবার বোধহয় ধাক্কাই খেতেই চলেছে। গোয়া, মনিপুর-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের মন্ত্রিসভা দখল করতে বিজেপি যে ফরমূলা কাজে লাগিয়েছিলো, মহারাষ্ট্রে তার ‘কপি-পেষ্ট’ করতে গিয়েই বিপাকে গেরুয়া বাহিনী।
সংবিধান দিবসে দেশের সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষা করার চেষ্টা করলো শীর্ষ আদালত। এবং একইসঙ্গে বার্তা দিলো, বিশেষ কোনও দলের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর দেশের সংবিধান বা সংসদীয় গণতন্ত্রের মর্যাদা নির্ভর করতে পারেনা। সরকার গঠনের জন্য এক নির্দিষ্ট সাংবিধানিক প্রক্রিয়া রয়েছে। সেই প্রক্রিয়াকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা যায়না।
শীর্ষ আদালতের বিচারে মহারাষ্ট্রে বিজেপি সংবিধান লঙ্ঘন করেই সরকার গঠনের চেষ্টা করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমান না দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে ফেলেছেন বিজেপি’র দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। শীর্ষ আদালত আইনের এই বড়সড় ফাঁক ধরে ফেলেই তড়িঘড়ি আস্থা ভোটের নির্দেশ দিয়েছে। ফলে বড়সড় ধাক্কা বিজেপির। বিজেপির ‘চাণক্য-চন্দ্রগুপ্ত’ বাহিনীর কপালে ভাঁজ ফেলেছে এই রায়। কংগ্রেস, শিবসেনা এবং এনসিপি সোমবার নিজেদের পক্ষে ১৬২ জন বিধায়কের সমর্থনের প্রমান দেওয়ার পর মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে বেশ কিছু ‘ঘোড়া কিনে’ নিজেদের গরিষ্ঠতা প্রমান করা, ফড়নবিশ সরকার বা বিজেপি’র ‘চাণক্য-চন্দ্রগুপ্ত’-র পক্ষে কার্যত অসম্ভব। কারন, গোটা বিষয়টিই এখন চলে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নজরে।
আগামীকাল, বুধবার মহারাষ্ট্রে আস্থা ভোটের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছে, এই আস্থা ভোটের আগেই প্রোটেম-স্পিকার স্থির করতে হবে। সেই প্রোটেম-স্পিকারের অধীনে খোলা ব্যালটে হবে আস্থা ভোট। একইসঙ্গে আদালতের নির্দেশ, এই আস্থা ভোট সরাসরি সম্প্রচারও করতে হবে ৷
শীর্ষ আদালতের তিন বিচারপতির নির্দেশমাফিক বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে মহারাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত বিধায়কদের শপথ নেওয়াবেন প্রোটেম-স্পিকার। বিধায়কদের শপথগ্রহণের পরই আস্থা ভোটের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এইখানেই ফেঁসেছে বিজেপি।এর ফলে পরীক্ষায় পাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় মাথা যোগাড়ের জন্য গেরুয়া শিবিরের হাতে রইল মাত্র একটি দিন। ওদিকে যে টাইট নজরদারির মধ্যে অ-বিজেপি বিধায়কদের রাখা হয়েছে, সেখানে সিঁদ কেটে ঢোকা চাণক্য-বাহিনীর পক্ষে কতখানি সম্ভব, সেটাও দেখার।
২৮৮ বিধায়কের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ম্যাজিক নম্বর ১৪৫ বিধায়ক। ফড়নবিশ সেদিন নিজের পক্ষে ১৭০ বিধায়কের সমর্থনের দাবি জানিয়েই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ফেলেন। ওদিকে বিরোধীরা সোমবার নিজেদের পক্ষে ১৬২ বিধায়ক থাকার দাবি করেছে। দুই শিবিরের দাবি একযোগে সত্যি হওয়া সম্ভব নয়। সেকারনেই দ্রুত আস্থা ভোটের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। আর এখানেই এই রায়কে কার্যত জয় হিসেবেই দেখছে বিরোধী শিবির। বুধবার আস্থাভোটের নির্দেশ জারি হতেই উল্লসিত শিবসেনা-এনসিপি- কংগ্রেস জোট ৷ কোর্টের এই নির্দেশের পর কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধির আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য, “কালকের জন্য আমরা তৈরি। জয় আমাদের নিশ্চিত।”
মহারাষ্ট্রে বিজেপির রয়েছে ১০৫ বিধায়ক। এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার ৫৪ জন বিধায়কের সমর্থন দেওয়ার কথা ঘোষনা করামাত্রই ফড়নবিশ শপথ নিয়ে ফেলেছেন। ওদিকে সোমবার সন্ধ্যায় শিবসেনা-এনসিপি- কংগ্রেস জোট ১৬২ জন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে চমক দিয়েছে। সেখানে নাকি এনসিপির ৫৪ জন বিধায়কই হাজির ছিলেন। বুধবার বেলা ৫টা পর্যন্ত বিজেপি-বিরোধীরা এককাট্টা থাকলে ৩ দলের ১৬২ জন বিধায়কই মহারাষ্ট্রে নতুন সরকারের ছবি প্রকাশ্যে আনবে। অপেক্ষা এখন আস্থাভোটের।
তবে বিজেপিও বসে থাকবে না। মরিয়া চেষ্টা চালাবেই। সম্ভবত বাজারে নেমেও গিয়েছে গেরুয়া-এজেন্টরা। বিজেপির হাতে আর একটি পথ খোলা আছে। তবে সেটা প্রবল ঝুঁকির। আজ মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন ফড়নবিশ। রাজ্যপাল সেই ইস্তফা গ্রহন করে ফের রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করতে পারেন। এক্ষেত্রে দিল্লির সাজানো চিত্রনাট্য মেনে রাজ্যপাল বলতে পারেন, বিধানসভা ভেঙ্গে দিয়েই জারি হোক রাষ্ট্রপতি শাসন।
তেমন হলে বিজেপি-বিরোধী শিবির আর সরকার গড়ার সুযোগই পাবেনা। আইনের নজরে এমন সম্ভব হলেও গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশের শীর্ষ আদালত যেভাবে জড়িয়েছে, তাতে বিজেপির এই ছক বাস্তবে হওয়া প্রায় অসম্ভব। তবুও শিবসেনা-এনসিপি- কংগ্রেস জোটকে মন্ত্রিসভা গড়তে এমন বাধা দিতেই পারে বিজেপি।
তবে মনে হয়না ‘ন্যাড়া’ বিজেপি দ্বিতীয়বার বেলতলা যাবে।
আরও পড়ুন-প্রবল রাজনীতির দাপটে হারিয়ে যাচ্ছেন সুনীতিকুমার