চিকিৎসক থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন কমলেশ্বর

একাধারে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, আবার বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর পেশার দুনিয়ার তিনি আবার রেকর্ডধারী! তাঁর প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ২০১১ সালের ‘উড়ো চিঠি’। ঠিক দু’বছর পর ২০১৩ সালে তিনি ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিটি তৈরি করেন। ছবিগুলো হিট তখনও পর্যন্ত ইন্ডাস্ট্রিতে সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি তিনি। তিনি

কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ১৫ কোটি টাকা বাজেটে তাঁর “চাঁদের পাহাড়” বিখ্যাত চলচ্চিত্রটি এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক বাজেটের বাংলা চলচ্চিত্র।

কিন্তু এই কমলেশ্বর? একজন পরিচালক-চলচ্চিত্র নির্মাতা-নাট্য ব্যক্তিত্ব-এর বাইরে আরও একটি পরিচয় আছে তাঁর। মেধাবী কমলেশ্বর ছিলেন ডাক্তারির ছাত্র। খুব সাফল্যের সঙ্গে। ডাক্তারি পাস করেন তিনি। এরপর একজন
প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী কমলেশ্বর নিজেকে একটি মাত্র গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। পরবর্তীতে তিনি অন্য ক্ষেত্রে চলে আসেন এবং বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র নির্মাণ করা শুরু করেন।

ডক্টর প্রিফিক্সটা দশ বছর প্র‌্যাকটিস করার পর সেই ২০০৩ সালেই ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। কোঠারি মেডিকেল সেন্টার, একবালপুর নার্সিং হোম ঘুরে শেষ চাকরি করেছেন ইইডিএফ-এ। তারপর ক্যালকাটা মেডিকাল কলেজের ছাত্র সোজা মুম্বইতে বিজ্ঞাপনের জগতে। কমলেশ্বরের কথায়, বিজ্ঞাপনের ছবিতে অমিত সেনকে অ্যাসিস্ট করতে। পরিবারের সবাই তো চমকেই গিয়েছিল। ডাক্তারি ছেড়ে ফিল্ম মেকিং করতে চাই শুনে লোকে তো চমকাবেই। সকলে ভাবেছিলেন, এবার ভবিষ্যৎ কী? কিন্তু কমলেশ্বর নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই লিখেছেন!

ডাক্তারি ছেড়ে তিনি একজন বিজ্ঞাপন নির্মাতা হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি অমিত সেনগুপ্ত পরিচালিত “নটবর নট আউট” চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখেন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ২০১১ সালের “উড়ো চিঠি”। যেখানে ১২টি ভিন্ন গল্পের ওপর ১২টি বার্তা দেওয়া হয়েছে। তাঁর পরের চলচ্চিত্র “মেঘে ঢাকা তারা” ২০১৩ সালে মুক্তি পায়। বিখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটক-এর জীবনীনির্ভর এই চলচ্চিত্রটিও আগেরটির মতো বক্স অফিস হিট না হলেও অত্যন্ত প্রশংসিত হয় এবং বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে।

কিন্তু তৃতীয় ছবিটি দুর্দান্ত সাড়া ফেলে দেয়, অমর কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোমাঞ্চকর উপন্যাস “চাঁদের পাহাড়” অবলম্বনে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর ব্যানারে কমলেশ্বর তৈরি করেন ছবি। উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র শঙ্করের ভূমিকায় অভিনয় করেন টলিউডের সুপারস্টার দেব। ১৫ কোটি টাকা বাজেটের এই চলচ্চিত্রটি এখনও পর্যন্ত বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সর্বাধিক বাজেটের বাংলা চলচ্চিত্র। আফ্রিকায় আউটডোর শুটিং করা এই ছবি বক্স অফিস হিট।বাকিটা ইতিহাস। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কমলেশ্বরকে।

কমলেশ্বরও পিছনে ফিরে তাকাতে চান না। পরের ছবি কী? একটু সাসপেন্স রেখেই কমলেশ্বর জানালেন, এবার ওয়েব সিরিজ বানাচ্ছেন। বাকিটা এখনই খোলসা করবেন না। সঠিক সময়ে সব জানাবেন।

তবে বিগ বাজেটের চলচ্চিত্র নির্মান করলেও, নাটকের সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক বজায় থাকবে। কারণ নাটক শুধু বিনোদন নয়, সমাজকে বার্তা দেওয়ার মাধ্যম। সমাজ তৈরি করার প্রক্রিয়া। যা মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে।

Previous articleজোড়াতালির জোট! এবার সাভারকর নিয়ে লেগে গেল কংগ্রেস-শিবসেনার
Next articleNRC-CAA বিরোধিতার মাঝেও মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখার আবেদন রাজ্যের বুদ্ধিজীবী মহলের